মসজিদুল আকসা আসলে কার? আল-আকসা মসজিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস!


পবিত্র আল আকসা-মসজিদ। মুসলমানদের প্রথম কেবলা যা জেরুজালেমে অবস্থিত। আল আকসা মসজিদের অর্থ হচ্ছে- দূরবর্তী মসজিদ। মসজিদটির অপর নাম ‘বায়তুল মুকাদ্দাস। ’ ইসলামের তিন পবিত্র স্থান-এর মধ্যে অন্যতম ‘মসজিদে আকসা। সৌদি আরবের মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীর পরই, মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান এই আল-আকসা মসজিদ।

ইবাদতের উদ্দেশ্যে এ তিন স্থানে যাওয়া বৈধ ও অনেক সাওয়াবের কাজ। পৃথিবীর অন্যান্য ইবাদতগৃহে নামাজ আদায়ের চেয়ে এ গৃহে নামাজ আদায়ের সাওয়াব অনেক বেশি বলেছেন স্বয়ং প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘ঘরে একাকি নামাজ আদায়ে এক গুণ সাওয়াব; মসজিদে নামাজ আদায়ে ২৫ গুণ সাওয়াব; মসজিদে নবিব (মদিনায়) ও মসজিদে আকসায় ৫০ হাজার গুণ সাওয়াব এবং মসজিদে হারাম (কাবা শরিফে) এক লাখ গুণ সাওয়াব।

আল আকসা মসজিদের গুরুত্বের আরও একটি বড় কারণ হলো প্রথম থেকে হিজরত পরবর্তী ১৭ মাস পর্যন্ত মুসলমানরা আল আকসা মসজিদের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের কেবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়।

এ পবিত্র মসজিদ থেকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) উর্ধাকাশে তথা মেরাজ গমন করেছিলেন। নবী করীম (সা.) মিরাজ গমনের সময় আল আকসায় অতীতের সব নবী-রাসূলের জামাতে ইমাম হয়ে দু রাকাত নামাজ আদায় করেন।

ইসলামের অন্যতম পবিত্রতম স্থান বাইতুল মুকাদ্দাস বা মসজিদ আল-আকসাসহ অসংখ্য নবি-রাসুলদের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক জেরুজালেম শহর বর্তমানে অভিশপ্ত ইয়াহুদিরা অবৈধভাবে দখল করে আছে এবং এই স্থানটিকেই নিজেদের পবিত্র স্থান হিসেবে দাবি করে আসছে। যার চত্ত্বরে আজো অসংখ্য নবি-রাসুলের সমাধি বিদ্যমান।

খৃষ্টপূর্ব ১০০৪ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন হযরত সোলায়মান আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এরপর বিভিন্ন সময়ই এর সংস্কার করা হয়। দুটি বড় ও ১০টি ছোট গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিতে প্রকাশ পেয়েছে নির্মাণশৈলীর এক মনোমুগ্ধকর প্রতিচ্ছবি।

বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি সংস্কারে ব্যবহার করা হয় মার্বেল, স্বর্ণসহ নানা ধরণের মূল্যবান ধাতু ও পাথর। ঐতিহাসিকভাবেই আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদেরই পবিত্র স্থান। তারপরেও এটিকে মুসলমানদের পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ইউনেস্কো।

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূমি অবৈধভাবে দখলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ইহুদিরাষ্ট্র ইসরাইল। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে আরবদের সাথে যুদ্ধের পর মসজিদটি দখল করে নেয় দেশটি।

এরপর থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে দখলদার বাহিনী এবং মসজিদটিতে ইবাদতের জন্য, দখলদার বাহিনীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই তাকিয়ে থাকতে হয় ফিলিস্তিনের সাধারণ মুসল্লিদের। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর আল-আকসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরাইল। এমনকি ১৯৬৯ সালে পবিত্র মসজিটিতে অগ্নিসংযোগও করেছিল দখলদার ইহুদিরা। এরপর নানা বিধি-নিষেধ আর শর্ত সাপেক্ষের মাধমে সেখানে ইবাদতের সুযোগ পেতেন সাধারণ মুসল্লিরা।

এরপরও কয়েকবার বিভিন্ন অজুহাতে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী আল-আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনিদের জন্য বন্ধ করে দেয়। ২০০৩ সালে জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের আল-আকসায় প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরাইল। এরপর থেকে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়। বিভিন্ন সময় ইহুদিরা মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মুসল্লীদের ওপর হামলা চালায়।

ইহুদিদের কাছে এই স্থানটি টেম্পল মাউন্ট হিসেবে পরিচিত। তাদের দাবি, এর নিচেই রয়েছে তাদের দুটি প্রাচীন মন্দির। অন্যদিকে খ্রিস্টানরাও আল-আকসা মসজিদের স্থাপনাকে তাদের পবিত্র স্থান হিসেবে দাবি করে আসছে।

About reviewbd

Check Also

৭ বছর সংসারের পর স্ত্রী’’কে প্রে’মিকের কাছে ফিরিয়ে দিলেন স্বা’মী

গল্পটা সিনেমা’র মতোই। যেন ব্লকবাস্টার হিন্দি সিনেমা ‘হা’ম দিল দে চুকে সানাম’ এর প্রায় হুবহু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *