আমি কখনোই আ’ল্লা’হ’কে খোঁজার গরজ অ’নু’ভ’ব করিনি। যখন কিছুই করার থাকত না, তখন কোনো পু’র’নো বই বা ভবন দেখে সময় কা’টা’তা’ম। কখনো কল্পনাও করিনি আমি মু’সলমান হব। আমি খ্রিস্টানও ‘হতে চাইনি। যেকোনো প্রা তি ষ্ঠা নি ক ধ’র্মের প্রতিই আমা’র তীব্র বিতৃষ্ণা ছিল। প্রাচীন কোনো গ্রন্থ আমার জীবন যাপনের পথ-নির্দেশ করবে, তা নিয়ে ভাবিইনি।
এমনকি কেউ যদি আমাকে কয়েক কোটি ড’লার দিয়েও কোনো ধর্ম গ্রহণ করতে বলত, আমি সরাসরি অ’স্বী’কা’র করতাম। আমার প্রিয় লেখক’দের অন্যতম ছিলেন বার্টান্ড রাসেল। তার মতে, ধর্ম হলো কু’সং’স্কা’রে’র চেয়ে একটু ভালো, সাধারণভাবে লোকজনের জন্য ক্ষতিকর, এর ইতি’বাচক কিছু বি’ষয়ও আছে। তিনি বিশ্বা’স করতেন, ধর্ম ও ধর্মীয় দৃষ্টিভ’ঙ্গি জ্ঞা’নের পথ বন্ধ করে দেয়, ভীতি আর নি’র্ভ’র’তা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া আমা’দের বিশ্বের যুদ্ধ, নির্যাতন আর দু’র্দশার জন্য অনেকাংশে দায়ী ধ’র্ম।
আমার মনে ‘হতো, ধর্ম ছাড়া’ই তো ভালো আছি। আমি প্রমাণ করতে চাইতাম, ধর্ম আসলে একটা জোচ্চু রি। ধর্মকে হেয় করতে আমি প’রি’ক’ল্পি’ত কাজ করার কথা ভাবতাম। হ্যাঁ, সেই আমিই এখন মু’স’ল’মা’ন। আমি ঘোষণা দিয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর সেটা না করে উপায়ও ছিল না। আমি অনুগত হয়েছি, ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। মজার ব্যাপার হলো, যখন ধ’র্মাবলম্বনকারীদের সাথে বিশেষ করে মুসলমান হিসেবে পরিচয়দান’কারীদের সাথে কথা বলতাম, আমি প্রায়ই লক্ষ।
করতাম, তারা বিশ্বাস করার আ’কা’ক্ষা পোষণ করে। তাদের ধর্ম’গ্রন্থে যতই সাং’ঘ’র্ষি’ক বিষয় থাকুক, ভুল থাকুক, তারা। সবকিছু এড়িয়ে দ্বিধাহীনভাবে ধর্মকে আঁ’ক’ড়ে ধরে। তারা জানে, তারা কী বিশ্বাস করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো আল্লাহকে খুঁজতে চাইনি, সেই ইচ্ছাও আমা’র কখনো হয়নি। একদিন আমা’র এক বন্ধু ইসলামে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে বোঝাতে। চাইল, আমি ক্ষু’ব্ধ হলাম।
কোনো মানুষ যখন কিছু বিশ্বাস করতে চায়, তখন তার ম’ধ্যে অনেক সময়’ই এমন একটা বোধ সৃষ্টি হয়, যার ফলে সেটা গ্রহণ করার ব্যাপারে আগ্রহ তার মধ্যে তৈরি হয়। ধর্মের ব্যাপা’রেও আমার মধ্যে তেমন একটা ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল। আমি ধর্মকে স্রেফ একটা বাজে জি’নি’স হিসেবে বিশ্বাস করতে চা’ই’তা’ম। এমন বিশ্বাস কিন্তু কোনো দৃঢ় প্রমাণের ভিত্তিতে হয়, এমন নয়। স্রেফ অনুমানের ওপর গড়ে ওঠে এ ধরনের বিশ্বা’স। আমি যখন কোনো ধ’র্মীয় বই পড়তাম,
তখন সেগু’লোর প্রতি আমা’র কোনো পক্ষপাতিত্ব থাকত না, তবে আমা’র উদ্দেশ্য থাকত তা থেকে ভুল-ত্রুটি বের করা। এর ফলে আমি আমা’র উদ্দেশ্যের প্রতি অটল থাকতে পারতাম। আমা’র কোরআনের পেপারব্যাক অনুবাদটি পেয়েছিলাম বিনা মূল্যে। একদিন দেখলাম, এমবিএ’র কিছু ছেলে কোরআন বিলি করছে। আমি জানতে চাইলাম, এগু’লো কি ফ্রি? তারা হ্যাঁ সূচক জবাব দিলে আমি একটা নিয়ে রওনা দিলাম। এসব বইয়ের প্রতি। আমা’র বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না।
কেবল ফ্রি পেয়েছিলাম বলে নিয়েছিলাম। তবে আমা’র উদ্দেশ্য ছিল, বইটা পড়ে আরো কিছু খুঁত যদি পাওয়া যায়, তবে ধ’র্মটির বি’রু’দ্ধে ব্যবহার করা যাব’ে। আমি যে কপিটা পেয়েছিলাম, সেটির পাতাগু’লো মলিন হয়ে গিয়েছিল, অনেক পুরনো ছিল সেটি। কিন্তু আমি যতই পড়তে থাকলাম, ততই বশীভূ’ত ‘হতে লাগলাম। আমি আগে যেসব ধ’র্মীয় গ্রন্থ পড়েছি, তা থেকে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি অর্থ সহজেই বুঝতে পারছিলাম। সবকিছুই ছিল স্পষ্ট। আমা’র।
মনে পড়ল, আমা’র এক বন্ধু যখন আমাকে ইসলামে আল্লাহ কেমন তা বোঝাচ্ছিল, আমি রেগে গিয়েছিলাম, কিন্তু এবার পাতার পর পাতা উল্টে অনেক জায়গায় দেখতে পেলাম তাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ ক্ষ’মাশীল, দয়াময়।’মনে হলো, পবিত্র কোরআন সরাসরি আমা’র সাথে কথা বলছে, আমা’র জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। এটা একটা ‘পুরনো গ্রন্থ’ কিন্তু পুরোপুরি প্রাস’ঙ্গিক। এর কাব্যিকতা, কল্পনাশ’ক্তি এবং যেভাবে বার্তা পৌঁছে দেয়,
তা আমাকে অন্তর থেকে নাড়া দিল। এর অভূ’ত পূর্ব সৌন্দর্য আমি আগে কখনো টের পাইনি। মর’ুভূমির দমকা হাওয়া যেন সবকিছু উল্টে দিল। মনে হলো আমি যেন কিছু একটার জন্য দৌড়াচ্ছি। কোরআন আমা’র বোধশক্তিতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল। নিদের্শনাবলী দেখে তারপর আমাকে চিন্তা করতে, ভাবতে, বিবেচনা করতে বলল। এটা অন্ধ বিশ্বা’স প্রত্যাখ্যান করে, কিন্তু যুক্তি ও বু’দ্ধিবৃত্তিকে উৎসাহিত করে। কোরআন মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করে, স্রষ্টাকে স্বীকার করে নিতে বলে, সেই সাথে আধুনিকতা, মানবিকতা,
সহমর’্মিতার কথা বলে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমা’র জীবনকে বদলে দেয়ার আগ্রহ তীব্র হয়। আমি ইসলাম সম্পর্কে অন্যান্য বই পড়তে শুরু করলাম। আমি দেখতে পেলাম, কোরআনে অনেক ভবি’ষ্যদ্বাণী রয়েছে, অনেক হাদিসেও তেমনটা আছে। আমি দেখলাম, পবিত্র কোরআনে অনেক স্থানে নবি মোহা’ম্ম’দকে সংশোধন করা হয়েছে। আমা’র কাছে অদ্ভূ’ত লাগল।
এতেই বোঝা যায়, তিনি গ্রন্থটির লেখক নন। আমি নতুন পথে হাঁটতে শুরু করলাম, পবিত্র কোরআনের জ্যোতি আর নবি মোহা’ম্ম’দের দেখানো রাস্তায়। এই লোকটির মধ্যে মিথ্যাব’াদির কোনো আলামত দেখা যায়নি। তিনি সারা রাত নামাজ পড়তেন, তাঁকে নি’র্যাতনকারীদের ক্ষ’মা করে দিতে বলতেন, দয়া প্রদর্শনকে উৎসাহিত করতেন। সম্পদ আর ক্ষমতা তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন, কেবল আল্লাহর দিকেই নিবেদনের বিশু’দ্ধ বার্তাই প্রচার করতেন।
আর তা করতে গিয়ে নি’র্মম নি’র্যাতন সহ্য করেছেন। সব কিছুই সরল, সহজেই বোঝা যায়। আমা’দের সৃষ্টি করা হয়েছে। এই মহাবিশ্বের জটিল আর বৈচিত্র্যময় কোনো কিছুই ঘটনাক্রমে ঘটেনি। তা-ই সাধারণ বি’ষয় হলো, সেই একজন- যিনি আমা’দের সৃষ্টি করেছেন, তাকে অনুসরণ করতে হবে। আমা’র অ্যাপার্টমেন্টের কৃত্রিম লাইটিং এবং বাতাসের ওজন নিয়ে ভাবতে ভাবতে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি পড়লাম: কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশম-লী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, এরপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বা’স স্থাপন করবে না? (কোরআন ২১:৩০)