হু’মায়ূন আহমেদ, বাংলাদেশের সব অন্যতম জনপ্রিয় একজন লেখক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বাংলাদেশের লেখার জগতে একাকী’ রাজ করে গেছেন। আজ তিনি নতুন করে আলোচনায় থাকার কারন একটাই। আর তআ হলো আজ শাওন-
হু’মায়ূনের বিয়ের ১৬ বছর পূর্তি। আর তার স্মৃ’তি প্রতি মুহূর্তে বহন করে চলেছেন মেহের আফরোজ শাওন। শনিবার তাদের বিয়ের ষোলো বছর পূর্ণ হলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ও হুমায়ূনের দুটি ছবি শেয়ার করে সেই কথা জানালেন বরাবরের মতো। ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করেন হুমায়ূন ও শাওন। তাদের রয়েছে দুই ছে’লে নিষাদ ও নিনিত।
দিনটি নিয়ে বছর কয়েক আগে শাওন লেখেন, ”খুব সাদামাটা ভাবেই হওয়ার কথা ছিল আমা’র বিয়েটা… ভেবেছিলাম কোনরকম একটা শাড়ি পড়ে তিন বার কবুল বলা আর একটা নীল রঙের কাগজে কয়েকটা সাইন…হুমায়ূনের বন্ধুরা আছেন তার পাশে.., আর আছেন তার মা… প্রকাশক মাজহারুল ইস’লামের মা (আমা’র শাশুড়ি মা’র প্রিয় বান্ধবী) যখন তার কাছে বিয়ের খবর জানিয়ে আমাদের জন্য দোয়া চাইতে গেলেন তখন
তিনি স্পষ্টভাবে বললেন তার বড় পুত্রের বুদ্ধি এবং দূরদর্শিতার প্রতি তার পূর্ণ আস্থা আছে… বড় পুত্র যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন নিশ্চয়ই নিজের ভালো বুঝেশুনেই নিয়েছে… নিজে উপস্থিত না হলেও প্রিয় পুত্রের সিদ্ধান্তের প্রতি তার শুভকা’মনা সব সময়ই থাকবে…
আমা’র পরিবারের কেউ আমা’র সঙ্গে নেই.., এমনকি নেই কোনো বন্ধুও… সবাই ত্যাগ করেছে আমাকে…ডিসেম্বরের ১১ তারিখ হুমায়ূন আমাকে জো’র করে পাঠালেন নিউমা’র্কে’টে… উদ্দেশ্য একখানা হলুদ শাড়ি কিনে আনা, যেন সন্ধ্যায় আমি হলুদ শাড়ি পড়ে নিজের গায়ে একটু হলুদ মাখি… বললেন- \’তোমা’র
নিশ্চয়ই বিয়ে নিয়ে, গায়েহলুদ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল… আমাকে বিয়ে করার কারণে কোনোটাই পূরণ হচ্ছে না… আমি খুবই লজ্জিত… তারপরও আমি চাই আজ সন্ধ্যায় তুমি হলুদ শাড়ি পড়ে ফুল দিয়ে সাজবে… নিজের জন্য.., তোমা’র ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য… আমা’র জন্য… আম’রা দু\’জনে মিলে আজ গায়েহলুদ করবো…\’
আমি একা একা শাড়ি কিনলাম… গাঁদা ফুলের মালা কিনলাম… কী’ মনে করে একটা লাল পাঞ্জাবিও কিনে ফেললাম…সন্ধ্যায় নিজে নিজে সাজলাম… বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখে আমা’র চোখ ফেটে পানি চলে আসলো… চোখ মুছে খোঁপায় কানে গাঁদাফুলের মালা গুঁজলাম… হঠাৎ শুনি বাথরুমের দরজায় ধুমধাম শব্দ… দরজা
খুলে বেরিয়ে দেখি ডালা কুলো হাতে মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী’’ স্বর্ণা ভাবি, পাশে ৩ বছরের ছোট্ট অমিয়… একটু দূরে লাল পাঞ্জাবি পরা হুমায়ূন ঠোঁট টিপে হাসছেন… হই হই করে ঘরে ঢুকল হুমায়ূনের আরও বন্ধু আর তাদের স্ত্রী’’রা… তারা আমা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল পাশের রুমে…চার-পাঁচটা প্রদীপ দিয়ে সাজানো ছোট্ট একটি পাশ… সেখানে হলুদের কী’ স্নিগ্ধ ছিমছাম আয়োজন..! লেখক মইনুল আহসান সাবের ভাইয়ের স্ত্রী’’ কেয়া ভাবি আর মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী’’ স্বর্ণা ভাবি আমা’র আর
হুমায়ূনের হাতে \’রাখি\’ও পড়িয়ে দিল… সেকি খু’নসুটি..! সেকি আল্লাদ..! সে এক অন্যরকম গায়েহলুদ… আরেক ভাবি নামিরা স-ব মে’য়েদের হাতে মেহেদি দিয়ে দিল… আমা’র আর হুমায়ূনের দুই গাল কাঁচা হলুদে রাঙা…।\”২০১২ সালে যু’ক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতা’লে শেষ নিঃশ্বা’স ত্যাগ করেন জনপ্রিয় এই লেখক। এর পর থেকেই তার বড় একটি শুণ্যতা অভাব হচ্ছে দেশের লেখার জগতে। তার পরেও মানুষ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্ম’রন করে থাকে।