গোল নিয়ে বিতর্ক, কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে নাটকীয় জয় ব্রাজিলের

২০১৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকেই ব্রাজিল-কলম্বিয়া ম্যাচ মানেই বিতর্ক। এই ম্যাচে সবার আলাদা নজর থাকে নেইমারের দিকে। ব্রাজিলিয়ানদের প্রার্থনা থাকে, আর যেন কেউ নেইমারের মতো মারাত্মক চোট না পান। কলম্বিয়ার মারকুটে খেলায় অবশ্য কোনও বদল হয়নি।

তারা যেমন শরীরি ফুটবল খেলত, এখনও তেমনভাবেই খেলে। সেভাবে খেলেই ব্রাজিলকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করল কলম্বিয়া। ম্যাচ জিততে না পারলেও, তারা ব্রাজিলকে যথেষ্ট বেগ দিল। পিছিয়ে পড়েও ২-১ গোলে ম্যাচ জিতল ব্রাজিল।

এই ম্যাচে বিতর্ক তৈরি হল ব্রাজিলের প্রথম গোল নিয়ে। রেফারির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ কলম্বিয়া শিবির। ম্যাচের ১০ মিনিটের মাথায় অসাধারণ অ্যাক্রোব্যাটিক ভলিতে গোল করে কলম্বিয়াকে এগিয়ে দেন লুইস দিয়াজ।

৭৮ মিনিটে গোল শোধ করেন রবার্তো ফিরমিনো। তাঁর হেড কলম্বিয়ার গোলকিপার অসপিনার হাতে লেগে জালে জড়িয়ে যায়। হেডটি সহজেই ধরে নেওয়া উচিত ছিল অসপিনার। কিন্তু তিনি বল ধরতে পারেননি। গোলটির ঠিক আগে একটি শট রেফারির গায়ে লাগে।

কলম্বিয়ার ফুটবলাররা ভেবেছিলেন, রেফারি খেলা থামিয়ে দেবেন, কিন্তু সেটা হয়নি। রেফারি খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এই আক্রমণ থেকেই গোল শোধ করে ব্রাজিল। কলম্বিয়ার ফুটবলাররা তীব্র প্রতিবাদ জানান।

তবে রেফারির সিদ্ধান্ত বদলায়নি। এরপর ১০ মিনিট সংযোজিত সময় দেন চতুর্থ রেফারি। সেই সংযোজিত সময়ের শেষদিকে ব্রাজিলের হয়ে জয়সূচক গোল করেন ক্যাসেমিরো।আগের ম্যাচে পেরুকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর কলম্বিয়ার বিপক্ষে একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে নামে ব্রাজিল।

হেড কোচ লিওনার্দো তিতের রোটেশন পদ্ধতির কারণে একাদশের বাইরে চলে যান গোলকিপার এডারসন, ডিফেন্ডার এদার মিলিতাও, মাঝমাঠে ফাবিনিও ও এভারটন আর আক্রমণে গাব্রিয়েল বারবোসা। এদের জায়গায় কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শুরু করেন ওয়েভারটন, মার্কিনিয়োস, কাসেমিরো, এভারটন রিবেরো ও রিচার্সিলন।

রিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই ধাক্কা খায় ব্রাজিল। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো গোল হজম করে তারা। হুয়ান কোয়াদ্রাদো ডান প্রান্ত থেকে ব্রাজিলের বক্সে ক্রস করেন। উড়ন্ত বলে দুর্দান্ত ওভারহেড কিকে বল জালে জড়ান লুইস দিয়াস।ব্রাজিলের গোলকিপার ওয়েভারটনের তাকিয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপার ছিল না।

এই বছরের অন্যতম সেরা গোল করে ১০ মিনিটেই কলম্বিয়াকে এগিয়ে দেন দিয়াস।ওই গোলের পর হতচকিত ব্রাজিল চেষ্টা করে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিলেও ফাইনাল থার্ডে কার্যকরী ছিলেন না নেইমার-জেসুসরা। ফলে ৬৫ শতাংশ বল পজেশনে রাখার পরও প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি ব্রাজিল। ১-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় কলম্বিয়া।

দ্বিতীয়ার্ধেও খুব একটা পালটায় ম্যাচের দৃশ্য। ব্রাজিল বলের দখল রাখলো ফিনিশিং-এ ছিল দূর্বল। সমতা ফেরাতে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে নেয় নয়বারের কোপা জয়ীরা।৬৬ মিনিটে নেইমারের শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হলে হতাশা আরও বাড়ে ব্রাজিলের। এর মিনিট দশেক পরই আসে স্বাগতিকদের কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত।

কলম্বিয়ার বক্সে আক্রমণের সময়, বাম প্রান্ত থেকে ক্রস ছাড়েন রেনান লোদি। বক্সের ভেতরে তাতে মাথা ছুঁইয়ে স্কোরলাইন ১-১ করে দেন লিভারপুল তারকা ফিরমিনো। ম্যাচের ঘড়িতে তখন ৭৮ মিনিট।বাকি সময়ে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রাজিল। বাকি ১২ মিনিট ও রেফারির যোগ করা ১০ মিনিট ইনজুরি টাইমে তারা বারবার চেষ্টা করে ম্যাচজয়ী গোল করার।

একেবারে শেষ মুহূর্তে ৯৯ মিনিটে জয়সূচক গোলটি পায় ব্রাজিল। নেইমারের কর্নার থেকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের উৎসবে মাতান কাসেমিরো।এই জয়ে বি-গ্রুপের শীর্ষে থেকে নকআউটে যাওয়া নিশ্চিত হলো ব্রাজিলের। সোমবার তারা নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচ খেলবে ইকুয়েডরের বিপক্ষে।

About reviewbd

Check Also

আমার হৃদয়ের একটি টুকরো বাংলাদেশে রেখে যাচ্ছি: মার্টিনেজ

আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের পাগলামির খবর বিশ্বকাপের পরপরই শুনেছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। সেদেশের গণমাধ্যমে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *