দিনদিন বেড়েই চলছে আর্জেন্টিনার মুসলিমদের সংখ্যা

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ভিক্টোরিয়ান যুগে যখন খ্রিস্টান ধর্মের মূল্যবোধই ব্রিটিশ পরিচয়ের মূল ভিত্তি ছিল তখন যারা সামাজিক নিয়মের বাইরে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

নতুন খবর হচ্ছে, আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বুয়েনোস আইরেস দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। মুসলিমরা দেশটির বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। দি ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম রিপোর্ট-২০১০ সালের জরিপ মতে দেশটিতে চার থেকে পাঁচ লাখ মুসলিম বসবাস করেন।

অবশ্য পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ মতে ২০১০ সালে দেশটিতে ১০ লাখের মতো মুসলিম বাস করে। এদিকে দ্য এসোসিয়েশন অব রিলিজিয়ন ডাটা আর্কাইভ জানায়, দেশটির মোট জনসংখ্যার ১.৯ ভাগ নিজেদের ধর্ম ইসলাম বলে স্বীকার করেন। বর্তমানে আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা চার কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার ৩৮১।

মুসলিমদের আগমন : পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্পেন থেকে মুর ও মরিস্কো মুসলিমরা স্পেনের নাবিকদের সঙ্গে আর্জেন্টিনায় এসেছিল। তাদের অধিকাংশই আর্জেন্টিনায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। এদের অনেকে নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে বাধ্যতামূলক খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। আবার অনেকে নিজেদের মুসলিম পরিচয় গোপন করে খ্রিস্টান বলে পরিচয় দেয়।

আরব মুসলিমদের বসবাস : উনিশ শতাব্দীতে আর্জেন্টিনায় আরব বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের আগমন ঘটে। এদের অধিকাংশই ছিল সিরীয় ও লেবানিজ বংশোদ্ভূত। এদের অধিকাংশ খ্রিষ্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বী হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম ছিল। বর্তমানে আর্জেন্টিনায় আরব বংশোদ্ভূত প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বাস করে।

এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অনেক মুসলিমরাও সেখানে বাস করেন। আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনিমে আগে মুসলিম ছিলেন বলে মনে করা হয়। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অন্যতম শর্তপূরণ সাপেক্ষে তিনি ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করেন। তদুপরি তিনি দেশটিতে মসজিদ ও ইসলামিক স্কুল নির্মাণে নানাভাবে সহায়তা করেন।

প্রথম মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার : দেশটির অধিকাংশ মুসলিম রাজধানী বুয়েনোসে বাস করেন। ১৯৮৩ সালে ইরান সরকারের সহায়তায় শিয়াদের আত তাওহিদ মসজিদ স্থাপিত হয়। ১৯৮৫ সালে সুন্নি মুসলিমদের প্রথম মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার স্থাপিত হয়। ইসলামী শিক্ষার প্রসার, আলোচনা সভার আয়োজন, ইসলামী শরিয়াহ সম্মত বিবাহের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যাবলি সেন্টারের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হয়।

আর্জেন্টিনার স্থানীয় মুসলিমরা নানা রকম নিপীড়ন ও অন্যায়-অবিচার মধ্যে দিনকাল পার করলেও তাদের মধ্যে আরব্য ও স্পেনিশ সংস্কৃতি বজায় ছিল। মুসলিম শিশুদের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা প্রসারে আরব আর্জেন্টিনিয়ান ইসলামিক এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হয়।

দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম মসজিদ : বর্তমানে আর্জেন্টিনার বিভিন্ন শহরে ১৫০টির বেশি ইসলামিক সেন্টার আছে। এর তত্ত্বাবধানে অসংখ্য মাদরাসা, স্কুল ও কলেজ পরিচালিত হয়। ১৯৯৬ সালে সৌদি বাদশার সহায়তায় কিং ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নামে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ স্থাপিত হয়।

প্রথমে এর মূল আয়তন ছিল ২০ হাজার স্কয়ার মিটার। ১৯৯২ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনিমে সৌদি সফরের পর ওই মসজিদের জন্য ৩৪ হাজার স্কয়ার মিটার জায়গার ব্যবস্থা করেন। অত্যাধুনিক মসজিদ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। মসজিদের আওতায় লাইব্রেরি, দুটি স্কুল ও বিশাল গার্ডেন রয়েছে।

মুসলিমদের ইসলামী জ্ঞানের বৃদ্ধি : ইসলামিক অর্গানাইজেশন অব লেটিন আমেরিকা (আইওএলএ)-এর মহাসচিব ড. মুহাম্মদ ইউসুফ হাজের জানান, আর্জেন্টিনায় মুসলিম অভিবাসীদের অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণে দেশটির ক্যাথলিক ও ইহুদি জনগোষ্ঠীর আধিপত্য হ্রাস পাচ্ছে। ফলে দেশটির বিভিন্ন জনগোষ্ঠী মুসলিমদের সঙ্গে আলোচনা বসতে বাধ্য হচ্ছে। তদুপরি আর্জেন্টিনার মুসলিমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে বলেও জানান আইওএলএ-এর মহাসচিব।

About reviewbd

Check Also

লতা-পাতা নয়, চা-সিগারেট খাচ্ছে ছাগল, ভাইরাল ভিডিও

প্রায় ৩০০ প্রজাতিরও বেশি ছাগল রয়েছে। এটা গৃহপালিত প্রাচীনতম প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে একটি, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *