বেশকিছু ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে দেশের শোবিজ অঙ্গন। সেই আলোচনায় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি আলোচিত চিত্র নায়িকা পরীমণি। সম্প্রতি রাজধানীর বনানী থানায় মাদক মামলায় দুই দফা রিমান্ড শেষে চিত্রনায়িকা পরীমণির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডলের আদালতে এই জামিনের আবেদন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে তাকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীমণির এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশের দুই অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা এবং আজমেরী হক বাঁধন।
পরীমণির বিষয়ে মিথিলা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি বাংলাদেশে নেই, তাই পরীমনির বিষয়টা নিয়ে ঠিক কী কী ঘটে চলেছে, তা বিস্তারিত জানি না। তবে পরীমনিকে নিয়ে যে মিডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে, আমি সেটা এক্কেবারেই সমর্থন করি না। যত রকমভাবে ওকে অপদস্থ করা যায়, করা হচ্ছে। পরীমনির ক্ষেত্রে সব মতামত দুই ভাগে বিভক্ত, এটা সব ক্ষেত্রেই হয়।
শুধু পরীমনি কেন, ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে এমন যে কোনো মেয়েকে নিয়ে কিছু ইস্যু হলেই মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়ে যায়। এটা অবশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই হয়ে থাকে। কেউ কিছু করলেই, তার লাইফস্টাইল, ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কিছু খুঁড়ে খুঁড়ে বের করার চেষ্টা হয়। পুরুষতান্ত্রিক দিক থেকে সেটার বিচার করা হয়, যেটা এক্কেবারেই ঠিক নয়।’
মিথিলা আরও বলেন, ‘সমাজের সার্বিক উন্নতিতে সংবাদমাধ্যমের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সেটা না দেখে, নারীসংক্রান্ত কিছু হলেই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়, এটা কেন? ন্যায়, অন্যায় যা কিছুই ঘটে থাকুক না কেন, তার জন্য দেশের আইন, বিচারব্যবস্থা রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন নারীকে টেনে এনে বিভিন্ন কিছু লেখালেখি হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সমাজের ওপর পড়ছে। ইন্ডাস্ট্রিতেও এর খারাপ প্রভাব পড়বে। আশা রাখছি, সুষ্ঠু তদন্ত হোক, অকারণে যেন মেয়েটির কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। পরীমনি যেন সঠিক বিচার পায়।’
পরীমনির বিষয়ে আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘প্রথমত, যদি কেউ অপরাধ করে, প্রথমে সেটা প্রমাণ হতে হবে, সেটার বিচার হবে, তারপর শাস্তি। অপরাধটা কিন্তু অবশ্যই প্রমাণ হতে হবে। অপরাধের মাত্রার কোন পর্যায়ে গিয়ে কারোর শাস্তি হবে, সেটার সিদ্ধান্ত কিন্তু সাধারণ জনগণ নেবে না। যদি তার কোনো অভ্যাস থেকে থাকে, যেটা শারীরিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তার জন্যও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনোকিছু সংশোধন করার থাকলেও সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমরা কেউ নই।’
বাঁধন বলেন, কোনো অপরাধ করেছে, এমন সন্দেহে যদি কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু ন্যায়বিচার পাওয়ার যে প্রক্রিয়া তা নিশ্চিত করা হলে, কোনো সমস্যাই থাকে না। পরীমনির ক্ষেত্রে যেভাবে তাকে ফলাও করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যে যে কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,
তাকে যেভাবে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে এবং তার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে এবং বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়া সাধারণ মানুষ তাকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, সেটা খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জার এবং একইভাবে এটা অন্যায়। এটা যে অন্যায়, সেটাই আমরা ভুলে গেছি। এই শিক্ষাটাই আজ সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
বাঁধন আরও বলেন, ‘আমরা কারোর ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারি না, এমনকি আমার সন্তানের জীবনেও নয়। আর আমাদের এই শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে। পরিবারে কোনো বাচ্চাকে স্পেস দিতে আমরা শিখি না। কেন অন্যের জীবন নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে? আমাদের নিজেরই তো হাজারটা কাজ থাকার কথা, নিজেকে সংশোধন করার কথা ছিল, দেশ, পরিবারের জন্য কাজ করার কথা ছিল। আমরা কেন চায়ের আড্ডায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের সঙ্গে মানুষেরই কুৎসা করছি? এটা কিন্তু ভীষণই ভয়ংকর!’
‘পরীমনি যদি কোনও গুরুতর অপরাধ করেও থাকে, সেটার শাস্তি কিন্তু আদালত দেবে। এভাবে ঘটনাটা ঘটে গেছে, যেটা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। ও তো আমারই সহকর্মী, বাংলাদশের জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। ওর সঙ্গে যেটা হচ্ছে তাতে আমি লজ্জিত, এবং আতঙ্কিত। আমাদের দেশে একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে যে এখানে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটাতে পারে। পরীর বিষয়ে কী ঘটেছে, তা জানি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবেও এই সংস্কৃতির শিকার।’
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট বনানীর বাসায় অভিজান চালিয়ে পরীমনিকে আটক করে র্যাব। র্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক পাওয়া যায় তার বাসায়। এরপর থেকে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।