নাম তার নাসির। তবে বেশিরভাগ মানুষ ‘টাওয়ার নাসির’ হিসেবে চেনেন। এ নামে চেনার কারণও রয়েছে। যিনি প্রাণের ভয় না করেই হুটহাট হাজারো ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে যান। কিন্তু নিজের ইচ্ছায় না, ওঠান জিনেরা। তাকে নামাতে প্রয়োজন হয় ফায়ার সার্ভিস কিংবা পুলিশের।
ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে কখনো দেন আজান, কখনো বিস্কুট-পাউরুটি দেখান আবার কখনো মায়ের কথা বলেন। বিভিন্ন কৌশলে তাকে নামানো হয়। এভাবে এক নয়, একাধিকবার বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে যাওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন নাসির।
নাসিরের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় হলেও বর্তমানে বাবার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার বউ বাজার মেহমান কলোনিতে থাকেন।
সর্বশেষ ৮ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের বিপরীতে এক লাখ ৩২ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটির ওপরে উঠে যান নাসির। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয় স্থানীয়রা। এরপর আজান দিয়ে তাকে নামানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা প্রহ্লাদ সিংহ বলেন, ঘটনার দিন খবর পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে পৌঁছাই। বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধের পর পাশের একটি ভবনের ছাদ থেকে মেগাফোন দিয়ে আজান দেন আমাদের কর্মীরা। এরপরই ধীরে ধীরে নিচে নামেন নাসির। তবে সুস্থভাবে নামলেও পরে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রহ্লাদ সিংহ আরো বলেন, নগরীসহ কয়েকটি উপজেলায়ও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন নাসির। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারে তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখাতে হয়। কখনো মায়ের কথা বলতে হয়, কখনো বিস্কুট কিংবা পাউরুটি দেখাতে হয় আবার কখনো আজানের ধ্বনি শোনাতে হয়। নামানোর পর বেশ কয়েকবার তাকে সতর্কও করা হয়। আর ঝুঁকি সত্ত্বেও এভাবে হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সজ্ঞানে নয়, দৈবিক কারণে উঠে যান বলে জানান নাসির।
সর্বশেষ ঘটনার পর নাসিরের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এ সময় নাসির বলেন, আমি নিজে থেকে উঠি না। জিনেরা আমাকে টেনে তুলে ফেলে। তাদের মধ্যে ভালো-খারাপ দুটোই রয়েছে। খারাপরা আমাকে কষ্ট দেয়। আর ভালোরা আজানের শব্দ পেলে নিচে নামিয়ে দেয়।
নাসিরের এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাকলিয়ার বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নাসিরকে দেখছি আমরা। প্রায় সময় বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে যান বলে সবাই তাকে টাওয়ার নাসির বলে ডাকে। বলতে গেলে স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের মতোই চলাফেরা করেন তিনি। কিন্তু মাঝে মধ্যে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তার চিকিৎসা প্রয়োজন।