যে দিকে দু’চোখ যাচ্ছিল শুধু পানি আর পানি। সমুদ্রের ঢেউয়ে যেকোনও মুহূর্তে ইয়াটের ভাঙা অংশটা উল্টে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল মাঝেমধ্যেই। দুই সন্তানকে আঁকড়ে ধরে ওই ভাঙা অংশেই বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভেনেজুয়েলার মেরিলি চেকন। ক্রমে শরীর অবসন্ন হয়ে আসছিল। তার মধ্যে সূর্যের তাপে ডিহাইড্রেশন হওয়ার ভয় পাচ্ছিলেন।
পান করার মতো কোনও পানি ছিল না, ছিল না খাবারও। ছেলেমেয়েকে বাঁচাবেন কী করে! এই ভাবনা তাকে ঘিরে ধরছিল নিরন্তর। আর সেটাই যেন তাকে শক্তি জুগিয়ে গিয়েছে ওই ভয়ানক পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে।উপায় না দেখে নিজের প্রস্রাব পান করেছিলেন যাতে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে না যায়।
আর ছেলেমেয়েকে ডিাইড্রেশন থেকে বাঁচাতে নিজের স্তন্যপান করিয়ে গিয়েছেন। তিন দিন সমুদ্রে এভাবেই কাটিয়েছেন। কিন্তু চতুর্থ দিন আর পারেননি। উদ্ধারকারীরা আসার আগে ডিহাইড্রেশনেই মারা যান মেরিলি। কিন্তু সন্তানদের বাঁচিয়ে গিয়েছেন তিনি। মায়ের নিথর মরদেহ আঁকড়ে দুই শিশুকে ভাসতে দেখেন উদ্ধারকারীরা। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর ভেনেজুয়েলা থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপ লা তোর্তুগাতে বেড়াতে গিয়েছিলেন মেরিলি। থর দ্য হিগুরেতে নামে একটি ইয়াট ভাড়া করেন তারা। জনমানবহীন দ্বীপে একটা রোমাঞ্চকর ভ্রমণ নিয়ে উৎসাহ আর উদ্দীপনা ছিল মেরিলিদের মধ্যে। তার ছেলেমেয়ে-সহ মেরিলিরা সংখ্যায় ন’জন ছিলেন।
৫ সেপ্টেম্বরই ফিরে আসার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা বেজে গেলেও ফেরেননি মেরিলিরা। তখন সন্দেহ হওয়ায় ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই সংস্থা। তাদের জানানো হয় গন্তব্যস্থলে ইয়াট পৌঁছায়নি, রওনাস্থলে ফিরেও আসেনি।
৬ সেপ্টেম্বর মেরিলিদের যাত্রাপথে খোঁজ শুরু করে ভেনেজুয়েলার মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধানকারী দলটি দেখে লা অর্চিলা দ্বীপের কাছে ইয়াটের ভাঙা অংশ। ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ওই দ্বীপ থেকে কিছুটা দূরে তারা দেখতে পান ইয়াটের একটা ভাঙা অংশ ভাসছে সমুদ্রে। তাতে দুই সন্তান-সহ মেরিলিকে দেখতে পান তারা। মেরিলিদের উদ্ধার করা গেলেও বাকি সদস্যরা নিখোঁজ।
সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, আনন্দবাজার