পুঁথিগত শিক্ষা নেই। বেশভূষায় নেই তথাকথিত ‘সভ্য’ সমাজের ছাপ।
জীবনযাপনও অত্যন্ত সরল। তবে একটি বিষয়ে এগিয়ে রয়েছেন তারা। সেটা মানসিকতায়। ‘বাইসন হর্ন মারিয়া’ নামে ডাকা হয় তাদের। মাথায় বাইসনের শিং দিয়ে বানানো সজ্জার জন্যই এমন নামকরণ হয়েছে জনগোষ্ঠীটির।
বর্তমানে সমাজে নারী এবং পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে সরব অনেকে। তবে প্রকৃত অর্থে নারী-পুরুষকে সমানাধিকার দিতে পারে হাতেগোনা কয়েকজনই। বাইসন হর্ন মারিয়ার সমাজে কিন্তু এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।
বছরের পর বছর ধরে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন এই সমাজের নারীরা।
ভারতের ছত্তীসগঢ়ের আদি জনগোষ্ঠী ‘গোন্ড। ’ তাদের এক অংশের নাম বাইসন হর্ন মারিয়া। বাইসনের শিং ব্যবহার করার কারণে কোনো এক সময় ইংরেজরা নাকি এই নাম দিয়েছিল। এখন অবশ্য অনেকে বন মহিষের বদলে হরিণ বা অন্য কোনও প্রাণীর শিং ব্যবহার করেন। কিন্তু নাম একই থেকে গেছে।
ছত্তীসগঢ়ের জগদলপুরে এই জনগোষ্ঠীর বাস। তাদের বিশ্বাস, বিয়ের আগে নারী এবং পুরুষের মধ্যে যৌ”ন সম্পর্ক গড়ে ওঠা আবশ্যক। এর মাধ্যমেই পরবর্তীকালে দাম্পত্যের বন্ধন আরও অটুট হয়। পুরুষ বা নারী যদি সেই সম্পর্কে খুশি না থাকেন, সেক্ষেত্রে যে কোনও সময় তারা সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
একে অপরের মধ্যে যৌ”ন সম্পর্ক স্থাপনে খুশি হলে তবে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। আবার বিয়ের পরও যদি কারও অন্য কোনও নারী বা পুরুষকে ভাল লাগে, তখনও বিনা বাধায় দাম্পত্য ভেঙে বেরিয়ে আসার স্বাধীনতা রয়েছে।
এই জনগোষ্ঠীর মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, ভালবাসা না থাকলে সেই সম্পর্ক ধরে রাখার কোনও অর্থ নেই।
তাই এক সঙ্গীকে ছেড়ে অন্য সঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা নারী-পুরুষ উভয়েরই রয়েছে। এছাড়া বিয়ের আগে কোনও নারীর সন্তান হলে, তাকেও খুব স্বাভাবিকভাবে আপন করে নেয় পুরো পরিবার।
এখানেই শেষ নয়। কোনও নারীর স্বামীর মৃত্যু হলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তার জন্য পাত্র খোঁজেন। জমকালো বিধবাবিবাহের আয়োজন করা হয়। এক ধরনের বিশেষ উৎসবও রয়েছে তাদের। যেখানে ঊ”র্ধ্বা”ঙ্গ অনাবৃত অবস্থায় পুরুষ ও মহিলারা উল্লাসে মাতেন। একে অপরকে নানা বিদ্রুপও করেন তারা। তবে তা কখনও মাত্রা ছাড়িয়ে যায় না। তাদের সমাজে ‘সভ্যতা’র মাপকাঠি একেবারে অন্যরকম।
১৯৩৮ সালে প্রকাশিত ব্রিটিশ আমলা ডাব্লিউভি গ্রিগসনের বইয়ের সূত্র ধরে সম্প্রতি এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। গ্রিগসনের লেখা ‘দ্য মারিয়া গোন্ডস অব বস্তার’ দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালগুলোর পাঠ্যক্রমে রয়েছে। সেই বই যাচাই করে দেখা গেছে, এখনও সেইসব নিয়ম মেনে চলে এই জনগোষ্ঠী।
তবে এই জনগোষ্ঠীর কথা যত ছড়িয়েছে তাদের জীবনযাত্রা দেখতে ভিড় বেড়েছে পর্যটকদের। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ক্রমশ শহুরে সভ্যতা ও বিদেশি পর্যটকদের ভিড় এই জনগোষ্ঠীর মানুষের মনে অন্য রকম প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা