বাবার হাত। এ হাত ভরসার, নিরাপত্তার। সন্তান মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বেরোচ্ছে ঘর থেকে। সতর্ক পায়ে হয়তো পেরিয়েও যাবে ঝুঁকিপূর্ণ রাজপথ। বাবা আরো নিশ্চিন্ত হতে চান। নিজের দুই পা নেই তো কী, ছেলের হাত আঁকড়ে ধরে রাবার মোড়ানো হাঁটুতে ভর করেই নেমে পড়েন রাস্তায়।
সকালের ব্যস্ত ঢাকা। বেপরোয়া! ছুটে আসছে নূরে মক্কা বাস। ওদিকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার একটু আগেই হলে পৌঁছতে হবে। বাঁ হাতের মুঠোয় সন্তানের হাত ধরে ডান হাতের ইশারায় বাস থামান বাবা। এরপর ধীরে ধীরে, রাবার মোড়ানো হাঁটুতে ভর করে সন্তানকে নিয়ে এগিয়ে যান ঝুঁকি থেকে নিরাপত্তার দিকে; স্বপ্ন থেকে সম্ভাবনার অভিমুখে।
রবিবার ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন। পরীক্ষার্থী সন্তানকে হাতে ধরে কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন শারীরিকভাবে অসহায় একজন বাবা—এমন কয়েকটি ছবি তুলে একজন ফেসবুকে দিলে ওয়াল থেকে ওয়ালে ছড়িয়ে ক্রমে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
জানা যায়, এই পরীক্ষার্থীর নাম সালেহ আহমেদ ফাহাদ। পড়ে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে ফাহাদ। পরীক্ষা চলছে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টমেন্ট কলেজ কেন্দ্রে।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে ফাহাদের সঙ্গে তার বাবাই ছিলেন—কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বনানী বিদ্যানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রিয়াংকা হালদার শিখা। তিনি বলেন, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে ফাহাদকে পড়াচ্ছেন। আমরা প্রতিষ্ঠান থেকেও সহায়তা দিয়েছি। তার কাছ থেকে কোনো বেতন বা ফি নেওয়া হতো না।’
ফাহাদের স্কুলের শ্রেণিশিক্ষকদের একজন মো. কবির আহমেদ জানান, পরিবারটি অসহায়। মাধ্যমিকের ফরম পূরণ ফি ছিল চার হাজার টাকা। ফাহাদের বাবা দুই হাজার টাকা জোগাড় করতে সক্ষম হন। তখন মো. কবির আহমেদ নিজে থেকে আরো এক হাজার টাকা দিয়ে ফরম পূরণের ব্যবস্থা করেন।
তিনি আরো জানান, ফাহাদের বড় বোন বনানী বিদ্যানিকেতন থেকেই মাধ্যমিক পাস করে গেছে। বাবা ওমর ফারুক পিকআপ ভ্যান ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতেন। করোনার দুর্যোগকাল গাড়িটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। বোন ফারজানা বিশেষ ছাড়ে রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। হাতের তৈরি পোশাক বিক্রি করে ফারজানা অসহায় বাবার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
দেখা গেছে, ছবিগুলো ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, বাড্ডার সামনে থেকে তোলা। অসংখ্য শেয়ারকারীর একজন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের ওয়ালে আসা একজনের কমেন্ট সূত্রে জানা যায়, এই বাবার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নে।