প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আরো ১৬ জন মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ৮টা থেকে বুধবার (২৩ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের মধ্যে তারা মারা যান। এর আগে গত ৪ জুনও রামেক হাসপাতালে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ১৬ জনের মধ্যে আট জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর সাত জন ভর্তি ছিলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে আটজন রাজশাহী জেলার। আর তিনজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, দু’জন নাটোরের, দু’জন নওগাঁর এবং একজন ঝিনাইদহের।
এ নিয়ে চলতি মাসের ২৩ দিনে (১ জুন সকাল ৮টা থেকে ২২ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেলেন ২৪৫ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪১০ জন।
এরমধ্যে রাজশাহীর ২৭৪ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬০ জন, নাটোরের ২৭ জন, নওগাঁর ৩৪ জন, পাবনার নয়জন, কুষ্টিয়ার তিনজন এবং চুয়াডাঙ্গার দু’জন এবং অন্য জেলা দু’জন রয়েছেন। আগের দিন হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৯৩ জন। অথচ রামেক হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড শয্যার সংখ্যা ৩০৯টি। অর্থাৎ ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী এখন চিকিৎসা নিচ্ছে রামেক হাসপাতালে।
এদিকে, ভারত সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে গত ১১ জুন থেকে চলছে ‘বিশেষ লকডাউন’। রাজশাহীর সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এরপরও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে প্রতিদিনই গড়ে ১২ থেকে ১৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে। তবে বুধবার মৃত্যু আবারও বেড়েছে। এর আগে গত ৪ জুনও সর্বোচ্চ ১৬ জনেরর মৃত্যু হয়েছিল রামেক হাসপাতালে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অনেকেই হাসপাতালের আসার পর ভর্তি হতে পারছেন না। আবার অনেকে ভর্তি হলেও অক্সিজেন সংকটের কারণে মৃত্যুবরণ করছেন বলে অভিযোগ করছেন রোগীর স্বজনরা।
তবে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী দাবি করেছেন, হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা করোনা রোগীদের সেবায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে রোগীর চাপ বাড়ছেই। তাই বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় হাসপাতালের আরও একটি সাধারণ ওয়ার্ডকে কভিড ওয়ার্ডে রূপান্তর করার কাজ চলছে। করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটিতে এখন অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে সেখানেও করোনা রোগীদের ভর্তি নেওয়া হবে। তখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলেও জানান হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী।