‘তখন প্রায় সন্ধ্যা। পুরো ছয়তলা ভবনজুড়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। আমর’া ১৮ জন শ্রমিক চারতলায় কাজ করছিলাম। হঠাৎ পুরো ভবন ধোঁয়ায় অন্ধকারা’চ্ছন্ন হয়ে যায়। ১২ জন নিচে নেমে গেলেও আমর’া ছয়জন ছাদে উঠে যাই। নিচে তাকিয়ে দেখি ধাউ ধাউ করে জ্বলছে আগু’ন। মনে হচ্ছিল আমর’া আর বাঁচব না।’
এভাবেই সেই ভ’য়াবহ সন্ধ্যার বর্ণনা দিয়েছেন রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় লাগা আগু’নে বেঁচে ফেরা শ্রমিক মো. ফয়সাল। ভ’য়াবহ আগু’নে পুড়ে নিভে যায় ফয়সালের ৫২ সহকর্মীর প্রাণ।
ধ্বং’সস্তূপে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ফা’য়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্মণ বলেন, ভবনের চারতলায় কলাপসিবল গেট বন্ধ ছিল। ফলে কোনো শ্রমিক বের ‘হতে পারেননি। ভবনের চারতলায় বেশির ভাগ লা’শ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় ছিল কার্টন তৈরির কারখানা। সেখানেই প্রথমে আগু’ন লাগে। বের ‘হতে অনেকেই গেটের কাছে গিয়ে তালাব’দ্ধ দেখতে পান। এরপর শ্রমিকরা ভবনের ওপরে উঠে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও ভবনের ছাদে তালাব’দ্ধ দেখেন। এ কারণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে।
আগু’ন লাগার পর প্রাণ বাঁচাতে অনেক শ্রমিক ভবনের দুই, তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃ’ত্যুর খবর জানিয়েছে ফা’য়ার সার্ভিস।
প্রত্যক্ষদর্শী ফয়সাল জানান, একই কারখানায় কর্মর’ত তার চাচা মো. নোমানের কোনো খোঁজ মিলছে না। চাচার খোঁজে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন।
তিনি বলেন, এক ঘণ্টার মতো আমর’া ছাদে ছিলাম। পরে ফা’য়ার সার্ভিসের কর্মীরা আমা’দের উ’দ্ধার করেন। নিচে নামা’র পর আমা’দের স’ঙ্গে থাকা ১২ জনের কোনো খোঁজ পাইনি। এ ভবনে আমা’র চাচা মো. নোমানও কাজ করতেন। আমর’া তার খোঁজও পাচ্ছি না।
ফয়সাল আরো বলেন, ‘ছাদে ওঠার পর চারদিকে প্রচণ্ড বাতাস। নিচে শুধু আগু’ন আর আগু’ন। মনে হয়েছিল আর বাঁচব না। মাকে কল দিয়ে বললাম- মা আর বাঁচব না, দোয়া করবেন। এরপর মা কান্নাকাটি করছিল। পরে ভাইয়ের স’ঙ্গে কথা বললাম।’
রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার সামনে স্বজন হারানোর মানুষের বিলাপে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। উ’দ্ধার তৎপরতা এখনো অব্যা’হত রেখেছে ফা’য়ার সার্ভিস।