কা’মড়ে ধরতেই লাঠি দিয়ে বা’ঘকে পি’টিয়ে ছেলেকে ছি’নিয়ে আনলেন বাবা

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর সোরা গ্রাম থেকে ১২ থেকে ১৩ জনের মৌয়ালের একটি দল নৌকায় করে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের গহীনে মধু সংগ্রহ করতে। এসময় একটি বাঘ রবিউল শেখ নামের এক মৌয়ালকে আক্রমণ করে। বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েও প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন ২৫ বছর বয়সী রবিউল।

বাঘের মুখ থেকে তাকে ছিনিয়ে আনেন তার বাবা মো. হালিম শেখ (৫৫)। প্রাণে বেঁচে ফিরলেও গুরুতর আহত হয়েছেন রবিউল। বাঘের কামড়ে ও থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাঁর কাঁধ ও হাত।

গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অংশে এ ঘটনা ঘটে। আহত রবিউলকে সারা রাত নৌকা বেয়ে ও পরে কোস্টগার্ডের স্পিডবোটে করে বুধবার সকালে চিকিৎসকের কাছে আনা হয়।

রবিউল শেখ বলেন, ‘বাঘটা দেখলাম দৌঁড়ে আসছে আমার দিকে। বাঘ দেখে একটা গাছের আড়ালে গিয়েছি। বন্দুকের গুলির মতো একদিক থেকে এসে আমাকে ফেলে দিয়ে মুখ দিয়ে কামড়ে ধরেছে। কামড়া ধরতেই আব্বা লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাঘ পালিয়ে যায়। বাঘ আমাকে সামনে থেকে আক্রমণ করেছে।’

রবিউলের বাবা আব্দুল হাকিম শেখ বলেন, বাঘ আমার ছেলে রবিউলের ঘাড়সহ মাথায় দাঁত বসিয়ে দিয়েছে। এছাড়া পিঠ ও হাতে নখের আঁচড় দিয়ে মারাত্বকভাবে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। সুন্দরবন এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসকরা বাঘে ধরা রোগীর চিকিৎসা ভালো করেন। তাই বাড়িতে রেখেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে ফেরার পর তাঁদের দেখতে যান সেখানকার মধু গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার। খোঁজ নেন পুরো ঘটনার।

মঈনুল আনোয়ার বলেন, বাঘ ছেলেটার ঘাড়ে কামড়ে দেয়। বাবা হালিম শেখের হাতে লাঠি ও দা ছিল। যখন কামড় দিয়েছে, তখন হালিম শেখ বাঘকে আঘাত করেছেন। তবু বাঘ ছাড়েনি। প্রথমে বাঘের পেছনের পায়ে, পরে সামনের পায়ে আঘাত করেন হালিম শেখ। আঘাতের একপর্যায়ে বাঘ সামনের পা দিয়ে থাবা দেয়। রবিউলের বাঁ হাতে লাগে। হাতটা চার ইঞ্চির মতো লম্বা হয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে।

মধু গবেষক মঈনুল আনোয়ার বলেন, বাবা খুব সাহসী ছিলেন। ক্রমাগত আঘাত করেন তিনি। একসময় বাঘ ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।

বাঘের আক্রমণে আহত রবিউলকে কোলে করে নৌকা পর্যন্ত নিয়ে আসেন তাঁর বাবা। দলের বাকি সদস্যরা সারা রাত নৌকা চালিয়ে ও পরে কোস্টগার্ডের স্পিডবোটে করে তাঁকে নিয়ে আসেন সুন্দরবনের সীমান্তবর্তী ছোট ভ্যাটখালী নামক এক জায়গায়, চিকিৎসক সোলায়মানের কাছে। তিনি মূলত বাঘ ও কুমিরের আক্রমণে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করছেন দীর্ঘদিন ধরে।

পল্লী চিকিৎসক সোলায়মান ইসলাম বলেন, রবিউল ঘাড়, পিঠ, হাত ও মাথার ক্ষতস্থানে বিশেষ চিকিৎসা দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান বলেন, সুন্দরবনে বাঘের আত্রমণের দুটি পৃথক ঘটনায় দুইজন হতাহতের খবর লোকমুখে শুনেছি। তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, যদি তারা পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে থাকেন।

About reviewbd

Check Also

বাংলাদেশের ইলিশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কলকাতাবাসী

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে শুক্রবার থেকে কলকাতার বাজারে আসতে শুরু করেছে বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশের ইলিশ। তবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *