পুরুষ সে‌জে ৪৩ বছর সংসার করেছেন এই নারী, টের পায়নি মেয়েও

নারী-পুরুষ সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি। যেখানে একজন আরেকজনের পরিপূরক অর্থাৎ নারী ছাড়া যেমন পুরুষ অর্থহীন, তেমনই পুরুষ ছাড়া নারীও অর্থহীন। তাছাড়া মানবজাতির বংশ বৃদ্ধির জন্য নারী-পুরুষ অত্যাবশ্যক। তবে আমাদের সমাজ নারী-পুরুষের মাঝে একজনের দেয়াল তুলে দেয়। সেই দেয়ালের নাম হচ্ছে জেন্ডার ইকুয়ালিটি বা নারী-পুরুষকে সমান চোখে দেখে না।

পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় মেয়েদেরকে ছোট করে দেখা হয়। তবে এমন হওয়ার কথা ছিল না। কেননা নারী বা পুরুষের জন্ম একজন আরেকজনকে ছোট করার জন্য হয়নি বরং একজন আরেকজনের সঙ্গী বানানোর জন্য হয়েছে। তবে একজন নারী বেঁচে থাকার জন্য যে কত কিছু করতে পারে বা কত কিছু করার প্রয়োজন পড়ে সেটা অনেকের কল্পনারও বাইরে।

নারী হয়েও ৪৩ বছর ধরে পুরুষ সেজেই জীবন পার করেছেন সিসা

যেমনটা করেছেন মিশরের এই নারী। তাকে দেখে মনে হয় তিনি একজন পুরুষ। ৪৩ বছর ধরে পুরুষ সেজেই জীবন পার করেছেন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! তার বয়স ৬৭ বছর। সে নিজে নিজে এমন পুরুষ সাজতে চায় নি। সমাজ তাকে বাধ্য করেছে। এই মানুষটার নাম হচ্ছে হাজ্জা সিসা। আমাদের সমাজে এমন একটা প্রচলন রয়েছে, যে মেয়েরা ঘরের কাজ করবে এবং ছেলেরা সবসময় বাইরের কাজ করবে।

ঠিক তেমনই যখন ৪৩ বছর আগের সিসার স্বামী মারা যায়, তখন তাদের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। আর নিজের সন্তানদের বাঁচানোর জন্য সমাজ তাকে বাধ্য করেছিল পুরুষ সাজতে। এই নারী নিজে নিজেই কেটে ফেলেছিল তার সব চুল। আর চুল কেটে মাথায় পাগড়ী পরে থাকতেন তিনি। নিজেই নিজের কন্ঠ ছেলেদের মতো মোটা করতে শুরু করে। পুরুষদের জামা কাপড় পড়ে। তারপর একজন মুচি হিসেবে কাজ করা শুরু করে।

ভাবছেন কেন এমনটা করলো সে? আসলে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি ছিল না। তবে সমাজব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি হয়েছিল যে, যেখানে একজন নারী পুরুষের কাজগুলো করতে চাইলেও করতে পারবে না। কিন্তু সিসা পরিবারকে কে দেখবে? পরিবারের হাল ধরার জন্য সে নিজেই নারী থেকে পুরুষ সেজে রয়েছে দীর্ঘ ৪৩ বছর।

হাজ্জা সিসা ও তার সন্তানরা
শুধু তাই নয়, তার মেয়ে যখন খুব ছোট তখন থেকেই তার মেয়ে জানে সিসা হচ্ছে তার বাবা। তবে বাস্তবে সিসা হচ্ছে তার মা। আর এই ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর সিসাকে মিশরের সরকার পুরষ্কার দেন এবং তাকে ‘দেশের সেরা মা’ হিসেবে ভূষিত করেন। কারণ তিনি ৪৩ বছর ধরে নারী হয়েও পুরুষ সেজে সন্তানদের পাশে আছেন।

সিসা জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার অন্য এক জায়গায় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি রাজি হয় না। তারপর তিনি বাবার বাড়ি থেকে সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন। এরপর ভিক্ষা না করে মুচির কাজ শুরু করেন।

তিনি আরো বলেন, যখন কোনো নারীর পুরুষ সেজে থাকতে হয় সেটা খুবই কষ্টের। তবে তার সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য একমাত্র উপায় ছিল এটি। কারণ সিসা পড়াশোনা জানতেন না।

তাই এটিই ছিল একমাত্র উপায়। তখন কিছু লোক তার আসল পরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ করতে শুরু করে। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম তাকে প্রশ্ন করেন, তিনি পুরুষদের পোশাক পরেন কেন? এই প্রশ্নের জবাবে সিসা বলেছিলেন যে, ‘তিনি বিপরীত লি;ঙ্গে;র সঙ্গে জড়িত। এটি তিনি সারা জীবন করে আসছেন। তাই এখন পরিবর্তন করতে পারে না।’ সিসার মতো আরো অনেক সাহসী নারী বিশ্বজুড়ে নারীবদ্ধের ভূমিকা ত্যাগ করে মুক্তির পক্ষে লড়াই করেন।

About reviewbd

Check Also

বাংলাদেশের ইলিশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কলকাতাবাসী

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে শুক্রবার থেকে কলকাতার বাজারে আসতে শুরু করেছে বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশের ইলিশ। তবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *