বুক কা;ট;তে পাঁচ হাজার, কপাল কা;ট;তে ছয় হাজার আর পুরো শরীর কা;ট;তে ১০ হাজার টাকা লাগবে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ম;র্গে থাকা ১৩ বছর বয়সী ছেলের লা;শ কা;ট;তে এভাবেই ভ্যানচালক বাবার সঙ্গে দরদাম করছিলেন ম;র্গের ডো;ম। কিন্তু দরিদ্র বাবা টাকা দিতে অসমর্থ হওয়ায় ঘটে এক না;র;কী;য় ঘটনা। বাবার চোখের সামনেই ছেলের লা;শ থেকে চা;ম;ড়া তু;লে ফে;ল;তে থাকেন ডো;ম। সে দৃশ্য দেখে ম;র্গের সামনেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন অসহায় বাবা কমল প্রামাণিক।
মঙ্গলবার বিকেলে খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান গণমাধ্যম কর্মীরা। এরপর লা;শ উদ্ধার করে তু;লে দেন অ্যাম্বুলেন্সে। এর আগে, টাকার জন্য দিনভর লা;শ আ;ট;কে রাখেন ম;র্গের ডোম।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের গাছিরদিয়া গ্রামের ভ্যানচালক কমল প্রমাণিকের ছেলে শান্ত কয়েক বছর মাদরাসায় পড়াশোনা করেছে। এরপর অভাব-অনটনের সংসারে পড়াশোনা ছেড়ে কৃষিকাজ শুরু করে। সোমবার সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে কীটনাশক পান করে শান্ত। এরপর পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিক লা;শ ম;র্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নিহত শান্তর বাবা কমল প্রামাণিক জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ছেলের লা;শ আনতে ম;র্গে যান। কিন্তু ১০ হাজার টাকা না দিলে লা;শ দিচ্ছিল না ডো;ম লক্ষণ লাল ও হীরা লাল। টাকা দিতে না পারায় তারা উল্টো লা;শে;র ওপর ভয়ঙ্কর অ;ত্যা;চা;র চালায়।
কমল প্রামাণিক বলেন, লা;শ কা;টা ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে ওরা আমার ছেলের লা;শ দেখিয়ে বলে- বুকের অর্ধেক কাটলে পাঁচ হাজার, পুরো কাটলে ১০ হাজার আর কপাল কা;ট;তে আরো ছয় হাজার টাকা লাগবে। তা না হলে লা;শ কা;টা হবে না। ওদের বারবার বলেছি আমি গরিব, আমার এত টাকা নাই। এরপর ওরা ক্ষি;প্ত হয়ে আমার চোখের সামনে ছেলের লা;শ গরুর চা;ম;ড়ার মতো ছি;ল;তে থাকে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের সামনে লক্ষণ লাল ও হীরা লাল যখন টাকা দাবি করে তখন পুলিশ বলে- ‘এরা কি এসব বোঝে? তুমি এইটুকু কা;ট;বা, ওইটুকু কা;ট;বা দেখাচ্ছ। এরা তো ওইসব বোঝে না। যে যেমন লোক, তার সঙ্গে সে রকম করো।’ আমি পুলিশ ভাইকে বারবার অনুরোধ করে বলেছি, ভাই আমি গরিব মানুষ, ভ্যান চালিয়ে খাই। টাকা দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা আমার নাই। উল্টো পুলিশ আমাকে বলে, এসব কথা এখানে চলবে না।
অসহায় এ ভ্যানচালক বলেন, রাতে লা;শ ম;র্গে ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে পাহারা দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দাবি করে দুই ডো;ম। আমি গরিব মানুষ, টাকা কোথায় পাব- বলতেই আমার ওপর রেগে যায়। পরে আমার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে তাদের দিয়ে রাতে বাড়ি চলে যাই। সকালে আসার সঙ্গে সঙ্গে ৭০০ টাকা, পরে আরো ১০০ টাকা নেয়। দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও বিভিন্ন খরচের কথা বলে আমার কাছ থেকে ১৫৫০ টাকা নিয়েছে।
শান্তর চাচা মামুন বলেন, খবর পেয়ে দুপুরে আমি ম;র্গে;র সামনে গিয়ে দেখতে পাই দুই ডো;ম ও একজন পুলিশ সদস্য এক টেবিলে বসে সিগারেট খাচ্ছে। পাশে শান্তর আব্বা দাঁড়িয়ে টাকা নিয়ে কথা বলছেন। ওই সময় আমি মোবাইলে ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা টের পেয়ে আমাকে ভিডিও করতে দেয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে সাংবাদিকরা ম;র্গে;র সামনে উপস্থিত হলে সন্ধ্যায় দুই ডো;ম তাড়াহুড়া করে লা;শ একটি অ্যাম্বুলেন্সে তু;লে দেয়।
শুধু ভ্যানচালক কমল প্রামাণিক নন, ওই দুই ডো;মের বিরুদ্ধে অনেকেই লা;শ আ;ট;কে রেখে টাকা দাবির অভিযোগ করেছেন। কুষ্টিয়ার খাজানগর কাতলমারীর বাসিন্দা মিন্টু আলী জানান, তিনি পরের জায়গায় থেকে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। গত ১২ জুলাই তার ছেলে মোহাম্মদ আলী পানিতে ডু;বে গেলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর পর হাসপাতাল থেকে লা;শ ম;র্গে নেয়া হলে দুই ডো;ম লক্ষণ ও হীরা পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। অনেক অনুরোধের পর তারা আড়াই হাজার টাকায় লা;শ ছাড়ে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ম;র্গে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল হাবিব বলেন, আমার সামনেই ডো;মরা টাকা দাবি করেছে। আমি তাদের কিছু বলিনি।অভিযোগ অস্বীকার করে ম;র্গে;র ডো;ম লক্ষণ লাল বলেন, তাদের কাছে কোনো টাকা দাবি করা হয়নি। তারা ইচ্ছে করে লা;শ ফে;লে রাখে।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।