নিজের জমিতে নতুন ঘর বানিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাহেদ আকন (৪২) নামে এক ব্যক্তি। মুজিববর্ষের ঘরের টিনের রং আর সাহেদের ঘরের টিনের রং এক হওয়াই তার কাল হয়েছে।
নিজ উপার্জনের টাকায় ঘর বানিয়েও এখন রটেছে- তিনি মুজিববর্ষের উপহারের দুইটি ঘরের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে দ্বিতল ঘর বানিয়েছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাকে।
সাহেদের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের গন্ডাদুলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের জসিম আকনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় ঘেরে মাছ চাষের পাশাপাশি ঢাকায় কাপড়ের ব্যবসা করেন সাহেদ। প্রায় তিন মাস ধরে নিজ গ্রাম গন্ডাদুলায় একটি দ্বিতল সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। যার কাজ ৭-৮ দিন আগে শেষ হয়। এর পরপরই গুজব রটে- গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য দেয়া সরকারি দুইটি ঘরের বরাদ্দ নিয়ে একটি দ্বিতল ঘর করেছেন সাহেদ; যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তোলপাড় শুরু হয়।
বিষয়টি নজরে এলে সত্যতা যাচাই করতে জেলা প্রশাসক ছুটে যান সাহেদের সেই বাড়ি দেখতে। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি প্রশাসন।
এদিকে অপপ্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাড়ি বানিয়ে বিপাকে থাকা সাহেদ আকন।
তিনি বলেন, নিজের উপার্জনের ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িটি করেছেন তিনি। একটি পুরনো ঘরের মালামাল কিনেও ঘরে ব্যবহার করেছি। শখের বসে সরকারি ঘরে লাগানো নীল টিন দেখে আমার পছন্দ হওয়ায় আমার ঘরেও সেই নীল রংয়ের টিন ঢাকা থেকে কিনে এনে লাগিয়েছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এতে আমি যেমন বিব্রত হয়েছি, তেমনি প্রশাসনও। তাই আমি এ অপপ্রচারের তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার চাই।
মঙ্গলবার দুপুরে সাহেদের বাড়ি পরিদর্শন শেষে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি জমিতে সাহেদ নিজের টাকা দিয়ে বাড়িটি করেছেন। অথচ সেটাকে আমাদের প্রকল্পের (মুজিববর্ষের) ঘর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সেটি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, সেটিও আপনারা দেখেছেন। আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে কোথাও যদি অসঙ্গতি থাকে আপনারা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপপ্রচারের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, বিষয়টি শুনে আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনার তদন্ত করি। তদন্তে দেখা যায়, সাহেদ আকন নিজ অর্থায়নে একটি সেমিপাকা বাড়ি করেছেন। নির্মিত গৃহের সঙ্গে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দেয়া গৃহের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন ও রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, মুজিববর্ষের ঘরের সফল এ কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতেই একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। এটি তাদেরই কাজ। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।