রসায়ন শাস্ত্রে অনার্সসহ মাস্টার্স সম্পন্ন করা তৌহিদুল ইস’লাম শাকিল। তিনি পাবনার বেড়া উপজে’লার মাশুম’দিয়া এলাকার আব্দুল মজিদের ছে’লে। তিনি পড়াশোনা শেষ করেছেন পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে। ৫ম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই পড়াশোনার ফাঁ’কে অবসরে বা ছুটির দিনে বাবার দোকানে চা ‘বিক্রি করতেন।
কলেজ জীবন থেকে তিনি টিউশনিও করতেন। তিনি পরিচিতজনদের বলতেন চা ‘বিক্রির কাজে তিনি মোটেও বিব্রত নন। তবে তার আশা ছিল শিক্ষকতা করবেন। তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি এনটিআরসিএ ক’র্তৃক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হয়ে বৃহস্পতিবার নিয়োগ আদেশ পেয়েছেন।
কিছুদিন আগেও শাকিল বলেছিলেন, স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করার স্বপ্ন নিয়েই আমি আমা’র সাধ্যমতো পড়াশোনা করেছি। আ’ত্মবিশ্বা’সী শাকিল বলেছিলেন- চাকরি আমা’র একদিন হবেই।কিন্তু চাকরি না হওয়া পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও অলস সময় কা’টাতে চাই না। তাছাড়া আমা’দের আর্থিক অবস্থা বেশ খা’রাপ। আমা’র আরও দুই ভাই-বোন লেখাপড়া করে। তাদের পড়ার খরচ যোগাতে আমা’র বাবা হিমশিম খান। তাই সকাল-‘বিকেলে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করি।
পাবনার বেড়া উপজে’লার মাশুম’দিয়া কলেজ বাজারে চায়ের দোকান রয়েছে তৌহিদুল ইস’লাম শাকিলের বাবার। তার বাবা মজিদ মোল্লা একসময় পরিবহন শ্রমিকের কাজ করতেন।প্রায় ১৩ বছর আগে সড়ক দু’র্ঘ’টনায় মা’রাত্মক আ’’হত হন তিনি। সংসার চালাতে তিনি কলেজ বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান দেন। শাকিল তখন ৫ম শ্রেণির ছাত্র। ওই সময় থেকেই তিনি বাবাকে চায়ের দোকান চালাতে সাহায্য করে আসছিলেন। চা বানিয়ে নিজেই পরিবেশনও করতেন।
একদিকে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকান চালানো, অন্যদিকে পড়াশোনা। এভাবেই তিনি বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চ’মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রসায়ন শাস্ত্রে বিএসসি সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে। সেখানে পড়াশোনা করার ফাঁ’কে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানটি তিনি চালিয়ে গেছেন। অনার্স পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার পর শাকিল চায়ের দোকানে কাজের সময় আরও বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি তিনি টিউশনিও করেন। আর টিউশানি করতে গিয়েই তিনি পেশাগতভাবে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন ক’র্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বাংলাদেশে বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ করে। ওই ফলাফল অনুযায়ী- শাকিল বেড়া উপজে’লার আমিনপুর আয়েনউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রা’প্ত হয়েছেন। তার এই নিয়োগপ্রা’প্ত ির খবর জানাজানি হলে শাকিলকে পরিচিতজনরা অ’ভিনন্দন জানান।
শাকিল বলেন, একসময় কেউ কেউ আমা’র চা বানিয়ে ‘বিক্রি করার বি’ষয়টি বাঁকা চোখে দেখতেন। কিন্তু এখন অনেকেই বাহবা দেন। একদিকে আমি টিউশনি করেছি, অন্যদিকে চায়ের দোকানটিও চালিয়েছি। আমা’র কাছে দুটি কাজই সম্মানজনক। এখন স্কুলে স্থায়ী চাকরির সুযোগ পেলাম- এটিই হবে আমা’র একমাত্র পেশা।তার মতে, কাজ না করে বেকার বসে থাকা’টা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবার জন্যই অ’সম্মানের।
আমিনপুর থা’নার প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের কাছে শাকিল এখন অনুপ্রেরণার প্রতীক। শাকিলরা তিন ভাই-বোন। অন্য দুই ভাই-বোনও পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।শাকিলের দোকানে নিয়মিত চা পান করেন মাশুম’দিয়া-ভবানী-পুর কে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক। তাদের একজন আলাউল হোসেন। তিনি বলেন, শাকিল সব ধরনের সংকী’র্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠা অ’সম্ভব পরিশ্রমী এক তরুণ। কোনো কাজই যে ছোট নয়, তা তিনি প্রমাণ করেছেন। শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য তিনি অবশ্যই অনুসরণীয়।