দালালের খপ্পরে পড়ে ভারতে পাচার হওয়া ১৭ বছরের মেয়েকে নিজেই উদ্ধার করে দেশে নিয়ে এসেছেন এক মা। পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া মেয়েকে উদ্ধারে মায়ের এমন সাহসিকতার গল্প হার মানাবে সিনেমাকেও। মেয়েকে উদ্ধার করে দেশে ফেরার সময় সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে পড়ার পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তারা ফিরেছেন দেশে।
কথা ছিলো, বিউটি পার্লারে চাকরি পাবে ঢাকার মিরপুরের ওই মেয়ে। স্থানীয় নাগিন সোহাগ নামের একজন এই কাজের প্রস্তাব দিয়ে প্রথমে তাকে নিয়ে যায় দেশের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায়। সেখান থেকে নদী পার করে নেয়া হয় ভারতে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে শেষে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয় ভারতের উত্তর দিনাজপুরের একটি পতিতালয়ে।
ভুক্তভোগী মেয়ে বলেন, তারা আমাকে মারধর করে, অত্যাচার করে এসব কাজ করার জন্য। বলে, টাকা দিয়ে কিনে এনেছি কেন করবা না।একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা। কোনো উপায় না পেয়ে একই চক্রের মাধ্যমে তিনিও পাড়ি জমান ভারতে। পরে চক্রের হাত থেকে কৌশলে পালিয়ে খুঁজতে থাকেন মেয়েকে। প্রায় তিন মাস পর খুশি ঢাকায় বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।
ওই মা জানান, ওরা আমাকে নিয়ে ট্রেনে করে যাচ্ছিলো। যখন ট্রেন ছেড়ে দিয়ে একটু স্পিড বাড়ে তখন আমি লাফ দিয়ে নেমে ওদের হাত থেকে পালিয়ে যাই। প্রতিটা পদক্ষেপ আমাকে অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়েছে। শুধু মেয়ের কথা চিন্তা করে এগিয়েছি, নিজের কথা ভাবিনি।
মিঠুন নামের এক ভারতীয় যুবকের সহযোগিতায় মা পৌঁছে যায় মেয়ের কাছে। ভুক্তভোগী মা বলেন, ওই ছেলে আমাকে সেই জায়গাটা চিনিয়ে দেয় এবং সাবধান করে। আমাকে বলে, ওই জায়গাতে ঢুকলে বেরিয়ে আসা কঠিন।
পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় দেশের পথে যাত্রা করেন তারা। কিন্তু সীমান্তে তাদের আটকায় বিএসএফ। মা-মেয়েকে আটকে রেখে খবর দেয়া হয় বিজিবিকে। দুই বাহিনীর পতাকা বৈঠক শেষে মা আর মেয়েকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
প্রাণ হাতে নিয়ে অবশেষে দেশে ফিরলেও স্বস্তিতে নেই পরিবারটি। তাদের অভিযোগ, পাচারকারী চক্রের সদস্যরা এখনও হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে বার বার যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন তারা। কিশোরীর মা আরও অভিযোগ করেন, দেশে ফিরে আসার পর পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলেও, আমলে নিচ্ছে না পুলিশ।
কিশোরীর মা বলে, পুলিশের কাছে গেলে বলে আপনাদের ব্যাপারটা অনেক বড়, অনেক ঝামেলার। এসব ঝামেলার ব্যাপার দেখার পুলিশের এতো কি সময় আছে।
এ ব্যাপারে জানতে পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসিকে ফোন করা হলে তিনি জানান, পুলিশের সম্পর্কে পরিবারটির অভিযোগ সঠিক নয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, তারা তো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ আর জিডি এক জিনিস না।