শিশুটির বয়স যখন আট কিংবা নয় বছর, তখন তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ঘরে সৎ মা আসতে না আসতেই নির্যাতন শুরু করে শিশুটিকে। নি”র্যা”তন সইতে না পেরে রাজধানীর বাড্ডায় মামা হান্নানের বাসায় আশ্রয় নেয় সে। তার বাবাও নিরাপদ স্থান হিসেবে মেয়েকে মামার বাসায় রেখে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল সেখানে থেকেই মেয়ে পড়ালেখা করবে।
নয় বছরের শিশু এখন ১৪ বছরের কিশোরী। জানা গেছে, আশ্রয়দাতা মামা ও মামি ভাগ্নিকে দিয়ে যৌ”নবৃত্তি করাতেন। এমনকি মামা নিজেও নিজ ভাগ্নির সঙ্গে অ”নৈতিক কাজটি করে আসছিলেন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে মামা হান্নান ও মামি রুমা ওই কিশোরীকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করালেও তা কারও কাছে প্রকাশ করতে পারেনি কিশোরী। অবশেষে মামা ও মামির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে মামলা করেন ওই কিশোরী। সেই মামলায় মামি রুমাকে গ্রেপ্তার করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
আরেক আসামি হান্নান পলাতক রয়েছে।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত, তখন আমার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের বাসায় লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হয়। এখন মেয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। এই খারাপ কথা মুখে আনতেও লজ্জা করে। মামা-মামি এমন কাজ করতে পারে। পাঁচ বছর ধরে আমার মেয়েকে দিয়ে খারাপ কাজ করায়। ওর মামা নিজেও ওর সঙ্গে এসব খারাপ কাজ করে।
তিনি বলেন, ওরা মেয়েকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। পরে মেয়ে আমার কাছে সব খুলে বলে। ওর মামি রুমা তাকে দিয়ে প”তিতা”বৃত্তি করাত।
তবে পুলিশ জানায়, কিশোরীকে দিয়ে মামা-মামি এমন খারাপ কাজ করার পেছনে বাবারও দায় আছে। কিছুদিন আগেও কিশোরীর বাবা এসে মামির কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা নিয়ে গেছে। তবে বিষয়টি জানার পর কিশোরীর বাবা দুই লাখ টাকায় আপস করতে রাজিও হয়ে যায়। কিন্তু কিশোরীর মামি এক লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। দরকষাকষির একপর্যায়ে জানতে পেরে পুলিশ আইনী ব্যবস্থা নেয়। কিশোরীর বাবাকে বাদী না করে ওই কিশোরীকে মামলার বাদী করা হয়।
বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী ওই কিশোরীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
বাড্ডা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া জানান, ২০১৬ সাল থেকে ওই কিশোরী তার মামা-মামীর সঙ্গে থাকত। আর বাবা-মা থাকে মিরপুর এলাকায়। ২০১৬ সাল থেকেই কিশোরীর মামা-মামি তাকে দিয়ে খারাপ কাজ করে আসছিল। কখনও বাইরে নিয়ে, কখনও বাসায় লোক এনে কিশোরীর রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতো। তাকে খারাপ কাজ করাতে বাধ্য করত। মামা হান্নানও কিশোরীর সঙ্গে প্রায়ই এসব করত। মামী দেখলেও কিছু বলত না।
তিনি বলেন, কিশোরীর মামা-মামি তাদের নিজ সন্তানকে তাদের কাছে না রেখে দাদির বাসায় রাখতেন। অথচ কি”শোরী”কে দিয়ে খারাপ কাজ করার বিনিময়ে টাকা আসায় তাকে তাদের সঙ্গে রাখত।
তিনি বলেন, ওই কিশোরী এখন ১০ শ্রেণিতে পড়ে। সে বলেছে, তার সঙ্গে সব সময় লোক থাকত। তাই সে কাউকে এসব বিষয় বলার সুযোগ পায়নি। বছরে একবার বাবা-মায়ের কাছে নিয়ে গেলেও আবার সঙ্গে করে নিয়ে আসতো তাকে।