কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর নাম ইকবাল হোসেন (৩৫)। বাবার নাম নূর আহমেদ আলম। বাড়ি কুমিল্লা নগরের সুজানগর এলাকায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইকবাল হোসেনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন। বুধবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তিনি বলেন, পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে এই নাটকীয় অগ্রগতি হয়েছে। ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন গত বুধবার ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদিঘির উত্তরপাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন দেখা যায়। এরপর কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই মণ্ডপে হামলা চালায় একদল লোক। সেখানে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।
এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা করতে যাওয়া একদল ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে নিহত হন চারজন। পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা–ভাংচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় নিহত হয়েছিলেন দুইজন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বসতিতে হামলা করে ভাংচুর, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হিন্দুদের মন্দির–মণ্ডপসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে দেশের আরও অনেক এলাকায়।
কুমিল্লা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবারের ওই ঘটনার পর গত এক সপ্তাহে ঢাকা ও কুমিল্লা পুলিশের কয়েকটি দল তদন্তে নামে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ইকবাল হোসেনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ বলছে, ইকবাল হোসেন ভবঘুরে। তাঁর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেছেন, আগামীকাল এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। এতে দেখা যাচ্ছে এক যুবক মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে রাস্তার দিকে আসে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম তার হাতে কোরআন শরিফ নেই। হনুমান ঠাকুরের গদা হাতে নিয়ে তিনি ঘোরাঘুরি করছেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমি গতকালও বলেছি তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই যুবক মোবাইল ব্যবহার না করার কারণে তাকে ট্র্যাক করা যাচ্ছিল না। এখন পর্যন্ত তিনি ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছেন। আমরা তাকে নজরদারিতে রেখেছি। যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হবে।
ঘটনার রাতের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের কাছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৩ অক্টোবর রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে মসজিদ থেকে ওই যুবক কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে বের হয়ে আসছেন। এরপর রাত ২টা ১১ মিনিটে তিনি মসজিদ থেকে মূল সড়কে উঠে মন্দিরের দিকে হেঁটে যান।
আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৩টা ১২ মিনিটে যুবকটির হাতে কোরআন শরিফ নেই। তিনি এসময় গদা কাঁধে নিয়ে মন্দিরের পাশে পুকুরপাড়ের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এসময় তিনি চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলেন কেউ তাকে দেখছে কি-না।