‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’- মাথার পেছনের অংশে সাদা ব্যান্ডেজের ওপর এই মর্মস্পর্শী বাক্য দেখলেই যে কারোর হৃদয়ে নাড়া দেবে। লেখার নিচের অংশে আঁকা হয়েছে একটি বিপজ্জনক চিহ্নও। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষের কর্মীদের নৃশংসতায় ক্ষতবিক্ষত মেডিক্যাল ছাত্র মাহাদি জে আকিবের মাথার পেছনের ব্যান্ডেজে লেখা এমনই সতর্কবার্তা!
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, তাঁর মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকাকালে কেউ যাতে (চিকিৎসক, নার্স) মাথার ওই অংশে হাত না দেন সে জন্য এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাঁর হাড়টি অস্ত্রোপচারের সময় পেটের অংশে রাখা হয়েছে। তিন-চার সপ্তাহ পরে সেই হাড়টি ফের তাঁর মাথায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
এদিকে মাথায় ব্যান্ডেজ মোড়ানো লেখাসহ মুমূর্ষু আকিবের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সহপাঠী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর জন্য দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
গত শনিবার সকালে প্রিয় ক্যাম্পাস চমেকে ছাত্রলীগের এক পক্ষের কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন আকিব। তিনি কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ সময় সংগঠনটির দুই পক্ষের কর্মীদের সংঘর্ষে আরো কয়েকজন ছাত্র আহত হন।
এদিকে গুরুতর আহতাবস্থায় আকিবকে হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই দিন বিকেল ৩টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে পরে তাঁকে নেওয়া হয় ভেন্টিলেটরে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আকিবের অবস্থার একটু উন্নতি হলে গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে ভেন্টিলেটর থেকে ফের আইসিইউতে আনা হয়। বর্তমানে আইসিইউর ৩ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন আকিব।
গতকাল দুপুরে নিউরো সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। ওই বোর্ডে থাকা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আকিব মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। মস্তিষ্কের আবরণীর (ডুরা) বাইরে ও ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁর সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। আরো ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। অবস্থা আগের চেয়ে একটু উন্নতির দিকে। সোমবার দুপুরে আবার মেডিক্যাল বোর্ড বসবে। এখনো তাঁকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।’
আকিবের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচংয়ে। ছেলের এমন দুঃসংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন বাবা গোলাম ফারুক মজুমদার ও স্বজন তৌফিকুর রহমান।
থানায় এক পক্ষের মামলা, গ্রেপ্তার ২ : সংঘর্ষের ঘটনায় এক পক্ষ (শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল অনুসারী) ১৬ জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছে। আসামিদের সবাই চমেক ছাত্রলীগের নেতা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান জানান, দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান চমেক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান খান বলেন, ‘আজ (গতকাল) আমরা খোঁজখবর নিয়েছি। সোমবার থেকে পুরোদমে তদন্ত কার্যক্রম চলবে।’