কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স এবার ৪ মাস ১৭ দিন পর খোলা হয়েছে। আজ শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়। ৮টি দান সিন্দুক খোলার কাজ শেষ করতে এক ঘন্টা সময় লাগে।
সকাল ১০টায় ৮টি দান সিন্দুক খোলার পর মোট ১২ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার। এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ জুন দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দান সিন্দুর খোলার সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। এবার ৪ মাস ১৭ দিন পর দান সিন্দুক খোলা হলো। চলতি বছর এর আগে ২৩ জানুয়ারি দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন এ যাবতকালের সর্বোচ্চ দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়। দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হবে। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনার কাজ। বর্তমানে টাকা গণনার কাজ চলছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম টাকা গণনার কাজ তদারকি করছেন।
প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। এছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়। কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্চা পূর্ণ হয়।
সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। গতবছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর লকডাউনের সময়ে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল সীমিত করে দেয়া হয় এবং মহিলাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়। তখনকার পরিস্থিতিতেও মসজিদটিতে মানুষ দান অব্যাহত রাখেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও।
মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।