ছোট্ট শিশু গোল গোল চোখে একরাশ কৌতূহল নিয়ে চেয়ে থাকে ফোনের দিকে। খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করলে তাকে ফোন দিয়ে বসিয়ে দিলেই চুপচাপ খেয়ে নেয়। এছাড়া কোনো কাজ করতে না চাইলে শিশুকে ফোনের লোভ দেখিয়ে সহজেই কাজটি করিয়ে নেওয়া যায়।
নিজের কাজ থাকলে বাচ্চাকে ফোন দিয়ে বসিয়ে রেখে সেটিও সেরে নেওয়া যায় সহজে। ফোন খুব বেশিদিন আসেনি। শিশুদের মধ্যে ইতোমধ্যেই সেটি বেশ জনপ্রিয়।
তবে ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকবার সতর্কবাণী শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে চোখের ক্ষতি ছাড়াও রয়েছে মস্তিষ্কের জটিল সমস্যা।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, দীর্ঘ সময় ধরে ফোন ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি শিশুর অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার কী?
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার একটি বৃদ্ধিজনিত সমস্যা। এই সমস্যার ফলে একটি শিশু তার আশপাশের সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মেলামেশার সময় অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এছাড়া যোগাযোগ স্থাপন বা ব্যবহারের দিক থেকেও একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।
শিশু বিশেষজ্ঞদের কথায়, জন্মের পর প্রথম কয়েক বছর শিশুদের মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় শিশু তার আশপাশের মানুষকে দেখে নানারকম কার্যকলাপ শেখে। খোলাখুলিভাবে মেলামেশা এই সময় তার মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।
তাই এই সময় শিশুর সঙ্গে মা-বাবার অনেকটা সময় কাটানো খুবই জরুরি। এর বদলে বেশিরভাগ সময়টাই ফোনের মধ্যে কাটালে বেড়ে ওঠার পথে নানারকম চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। এভাবেই দেখা দেয় অটিজম।
কীভাবে স্ক্রিনটাইম (যতক্ষণ সময় শিশু ফোনের সামনে থাকে) ক্ষতি করছে শিশুর?
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের কথায়, অতিরিক্ত ফোন ঘাঁটার প্রবণতায় শিশু অনেকটা সময় ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কাটাচ্ছে। এতে বাস্তবের পৃথিবীকে সে দেখছে কম, জানছে কম। এর থেকেই বাড়ছে সমস্যা। এর থেকে সমাজ বা আশপাশের মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ কমে যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এমন প্রবণতা মনের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। শিশুদের মানসিক বিকাশ অনেকটাই শ্লথ হয়ে পড়ে। এছাড়া মস্তিষ্কের কগনিটিভ কার্যক্ষমতাও ব্যাহত হয়।
এখনকার দিনে মা-বাবা দুজনেই কাজের মধ্যে থাকেন। এর ফলে শিশুর সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় মোবাইল ফোন। বেড়ে ওঠার বয়সে বাইরের জগতের সঙ্গে তার পরিচয় হওয়া জরুরি। নয়তো ভিজুয়াল অটিজমের মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে।