পরিবারের মেজ সন্তানকে নিয়ে অনেক সময় বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না। কারণ বেশিরভাগ সময়ই পরিবারের মেজ সন্তানকে হতে দেখা যায় স্বাধীনচেতা, আত্মনির্ভরশীল এবং একেবারে আলাদা মন-মানসিকতার মানুষ। কিন্তু সত্যিকার অর্থে পরিবারের মেজ সন্তানটি হয়ে থাকে সবচেয়ে ভালো মনের মানুষ।
পরিবারের বড় সন্তানেরা অনেক বেশি আত্মত্যাগী ও ছোটরা উড়নচণ্ডী ধরনের হয়ে থাকে বলে অনেকেরই বিশ্বাস। কিন্তু মেজর বৈশিষ্ট্য কিন্তু সহজে চোখে পড়ে না। তারা কতটা চিন্তা করে চলে তাও অনেকে বুঝতে পারে না। আর তাদের এই ধরনের চিন্তাই তাদের করে তোলে একেবারে আলাদা ও ভালো মানসিকতার।
এখানে পরিবারের মেজ সন্তানের ব্যাপারে কিছু অজানা তথ্য দেওয়া হলো।
‘মিডল চাইল্ড সিনড্রোম’ বিষয়টি ভুল ধারণা: প্রচলিত রয়েছে যে- মেজ সন্তানেরা একটা বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ থাকে, তারা তাদের পরিবারের বড় এবং ছোট সন্তানদের মতো তেমন মনোযোগ পায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেজ সন্তান পারিবারিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছুটা বঞ্চিতবোধ করলেও তারা এ বিষয়ে তিক্ত হয় না। ‘দ্য সিক্রেট পাওয়ার অব মিডল চিলড্রেন’ বইয়ের সহ-লেখক ক্যাটরিন শ্যুমানের মতে, “মেজ শিশুদের ‘সিনড্রোম’ নিয়ে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা থাকে, এটি বললে ভুল হবে না। কিন্তু তারা অবহেলিত এবং অবমূল্যায়নবোধ করে না, তারা এর মাঝেই বেড়ে উঠে এবং পরিবারের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে।’
মেজ সন্তানেরা বিশ্বস্ত বন্ধু তৈরি করে: ‘দ্য সিক্রেট পাওয়ার অব মিডল চিলড্রেন’ বইয়ের সহ-লেখক এবং রেডল্যান্ড ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়ার সাইকোলজির অধ্যাপক ড. ক্যাথরিন স্যালমনের গবেষণা থেকে জানা যায়, বড় এবং ছোট সন্তানেরা হয়তো বলে থাকে যে তারা বৃদ্ধ বয়সে তাদের বাবা-মা’র পাশে থাকবে কিন্তু মেজরা নিজেদের ভাই-বোনকে একসঙ্গে থাকার জন্য বেছে নেয়। এর কারণ হলো তারা তাদের বাবা-মা’র সঙ্গে কম সময় কাটিয়ে থাকে। স্যালমন আরো বলেন, মেজরা বন্ধুদের মূল সম্পদ মনে করে এবং যারা তাদের বন্ধু হয় তাদের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য আচরণ করে।
মেজরা অনেক দক্ষ হয়ে থাকে: মেজ সন্তানেরা অন্যদের দেখতে দেখতে বড় হয়ে থাকে। যখন বড় এবং ছোট সন্তানেরা বাবা-মা’র ওপর নির্ভরশীল থাকে, তখনই মেজ সন্তানেরা নিজের মতো করে চলা শেখে এবং নিজের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে শেখে।
মেজ সন্তানেরা শান্ত হয়ে থাকে: ড. গেল গ্রসের মতে, মেজ সন্তানেরা অন্যের প্রতি সহযোগী মনোভাব দেখায় এবং সবকিছুর ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার করে থাকে। তাদের জন্ম থেকে সবকিছুই কমপক্ষে একজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করা অভ্যাস থাকে। এই অভ্যাস তাদের ভবিষ্যতে অসাধারণ গুণের অধিকারী করে তোলে। যেহেতু তারা অনেক শান্ত স্বভাবের হয়ে থাকে তাই তারা মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলার গুণ পেয়ে থাকে, কারণ তারা বুঝতে পারে একজন মানুষের সঙ্গে কখন কেমন ব্যবহার করতে হবে। এই জন্য তারা কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের দেখা পেয়ে থাকে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা মেইন্ডা গেটস ফাউন্ডারের সিইও প্যাটি স্টোনসিফার বলেন, ‘মেজ সন্তান হওয়ায় আমি নিজের মনোভাব সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখেছিলাম। আমি খুবই বাঁচাল প্রকৃতির ছিলাম, আমার অনেক কথা বলার থাকতো এবং ছোটবেলা থেকেই বুঝেছিলাম অনেকের মাঝে কীভাবে নিজের চাওয়া পূরণ করতে পারি।’
তারা ভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে সহজেই মিশতে পারে: স্টোনসিফার বলেন, ‘একটি বড় ডাইনিং টেবিলে খেতে বসার সুবিধা হলো মানুষ অবশ্যই দ্বিমত পোষণ করবে এবং তারা তাদের মতামত উপস্থাপন করবে, আমার জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। তাই আমি খুব স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ভিন্নমতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ভালো এবং বাজে আচরণ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেগুলো সব দারুণ উপকারী।’
তারা যৌনতার বিষয়ে খুবই দুঃসাহসিক: ক্যাটরিন শ্যুমানের ‘দ্য সিক্রেট পাওয়ার অব মিডল চিলড্রেন’ বইয়ের তথ্যানুযায়ী, মেজ সন্তানেরা যৌনতার ব্যাপারে খুবই খোলাখুলি এবং দুঃসাহসিক। তারা যৌনজীবনে ছোট সন্তান এবং বড় সন্তানের থেকে বেশি সুখী হয়।
মেজ সন্তানেরা সাধারণত অন্য পরিবারের ছোট সন্তানের প্রেমে পড়ে: সাইকোলজিস্ট ড. কেভিন লেম্যানের মতে, এক পরিবারের মেজো সন্তান এবং আরেক পরিবারের ছোট সন্তানের দাম্পত্য জীবন অসাধারণ হয়ে থাকে। মেজ সন্তানেরা যেখানে একটু নন-কনফ্রনটেশনাল হয়ে থাকলেও বিপরীতে ছোটরা হয়ে থাকে চঞ্চল, যা তাদের একসঙ্গে চলার ক্ষেত্রে দারুন সহায়তা করে।
মেজ সন্তানেরা সুপার সাকসেসফুল হয়ে থাকে: বিখ্যাত কয়েকজন সুপার সাকসেসফুল ব্যক্তিত্ব বিল গেটস, কিম কার্দাশিয়ান, জেনিফার লোফেজ, ম্যাডোনা এবং প্রিন্সেস ডায়না, তারা প্রত্যেকেই বাড়ির মেজ সন্তান। শ্যুমানের মতে, ‘লোকে শুধু মেজ সন্তান হওয়ার খারাপ দিকগুলো দেখে এবং ভালো দিকগুলো এড়িয়ে যায়। এই এড়িয়ে যাওয়ার কারণেই মেজ সন্তানেরা দক্ষতা, সহানুভূতিশীলতা এবং নমনীয়তাসহ অন্যান্য গুণে গুণান্বিত হতে পারে, তারা সাধারণের বাইরে চিন্তা করতে পারে। যখন তারা জানতে পারে মেজ হওয়ায় তারা কত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখেছে, তারা ততক্ষণে হয়তো সফলতার সিংহাসন আরোহণ করে ফেলেছে।’