পরীমনির যত অজানা কাহিনী! গার্মেন্টস কর্মী থেকে যেভাবে হয়ে উঠলেন টপ নায়িকা


ঢালিউডের এই সময়ের আলোচিত ও সমালোচিত নায়িকা পরীমনি। সিনেমার জগতে পরীমনি আলোচিত হলেও ব্যক্তিজীবন নিয়ে সমালোচনার ঝড়ের মুখে বারবার তাকে পড়তে হচ্ছে। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে তার অতীত দাম্পত্যজীবনের অজানা কাহিনী। এ পর্যন্ত ৪টি বিয়ের খবর গণমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এ যাবৎ পাওয়া তথ্য মতে, পরীমনির প্রথম স্বামীর নাম ইসমাইল,দ্বিতীয় স্বামীর নাম সৌরভ আর তৃতীয় স্বামীর নাম কামরুজ্জামান রনি।

যদিও গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্মৃতিমনি, যিনি আজকের পরীমনি; তিনি বিয়ের খবরকে মিথ্যাবলে অস্বীকার করেছেন। তবে, ইসমাইল যে পরীমনির প্রথম স্বামী এটা এখন প্রমাণিত সত্য। পরীমনি তার সিনেমার আলোর জগতে প্রবেশ করে প্রথম স্বামীকে অস্বীকার করছে। যে ইসমাইল পরীমনিকে বাঁচতে শিখিয়েছে, জীবনকে জীবন হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছে সেই ইসমাইল আজ পরীমনির কাছে অপরিচিত, অচেনা।

সিনেমার নায়ক নায়িকাদের ব্যক্তিজীবনের অনেক কালো অধ্যায় থাকে। কিন্তু পরীমনি সে অধ্যায়কে বেমালুম অস্বীকার করে দর্শকের কাছে প্রমাণ করলেন যে, তিনি নায়িকা হতে চান, তিনি সুপারস্টার হতে চান কিন্তু মানুষ হতে চান না, শিল্পী হতে চান না।
কে এই পরীমনি?
————————————
শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি। ৩ বছর বয়সেই তার মা মারা যান। বাবা মনিরুল ইসলাম মেয়েকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। পরীমনি পিরোজপুরে খালা এবং নানার বাড়িতে বড় হয়। সেখান থেকে পরিচয় ইসমাইলের সাথে। পরী যখন ক্লাশ সিক্সে তখন থেকেই একে অন্যের পরিচয় ও প্রেমের শুরু। নাইনে প্রেম তুঙ্গে।

তারপর চলে ৭ বছরের বাঁধভাঙা প্রেম। অত:পর দুজন দুজনকে বিয়ে করতে চায়। মেয়ের মা-বাবা না থাকায় রাজি হয় না ইসমাইলের পরিবার। ইসমাইলের বাবা একটি সরকারি ব্যাংকের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার। মা একজন সরকারি চাকুরীজীবী। তারা স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা করে একটি শিক্ষিত, ভদ্র, রুচিশীল এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে তার ছেলের জন্য বউ হয়ে আসবে।

তবে, হালছাড়ার পাত্র নয় ইসমাইল। ৭ বছরের প্রেমতো এভাবে বিলীন হয়ে যেতে পারে না। ইসমাইল তার নিজের পরিবারকে ম্যানেজের জন্য সবধরনের চেষ্টা করে। অবশেষে, অনেক আকুতি মিনতির পর ইসমাইলের পরিবার ছেলের আবেগের মূল্য দেয়।

মা মারা যাওয়া, নিরুদ্দেশ থাকা বাবার মেয়ে পরীমনিকে ভালবাসার বাঁধনে বাঁধে ইসমাইল। ভালবাসায় ভুলিয়ে দেয় পরীমনির কষ্টের শৈশব। জীবনকে জীবনের মতো করে ভাবতে শিখে পরীমনি। আশৈশব দেখা সাদা স্বপ্নগুলো রঙিন স্বপ্নে রূপ নেয়। ইসমাইলও ভালবাসার মানুষটির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে থাকে। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে তৃতীয় সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষার ফি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পরীমনির জন্য।

ইসমাইলের পরিবার সে খবর জানার পর বন্ধ করে দেয় তার পড়ালেখা। তারপর ভর্তি হতে হয় ভোলা সরকারি কলেজে। পরীমনিরও পড়ালেখা চালিয়ে নেয় ইসমাইল। বাবার চাকরীর সুবাদে বাস করেন ভোলা শহরে। সাড়ে ৩ বছর বেশ সুখেই কাটে ইসমাইল- পরীমনির খুনসুঁটিময় দাম্পত্যজীবন।

এই সুখের জীবনে কাল হয়ে আসে পরীমনির নানা। এর মধ্যে পরীমনির বাবা মেয়েকে বিয়ের পর দেখতে এসেছিল। তবে তিনি বেশিদিন বাঁচেননি। কোন এক প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন তিনি। নানা শামসুল হক গাজী অভাবী ও খুব লোভী প্রকৃতির মানুষ। নাতি জামাই ইসমাইলের কাছ থেকে প্রায় টাকা নিতেন তিনি। একবার ৫০ হাজার টাকা চাইলে ইসমাইল দিতে অপরাগতা জানায়। তাতেই ক্ষিপ্ত হয় নানা। তারপর নানা বেছে নেন অন্যপথ। নাতির সৌন্দর্য্যকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি বাড়ি গাড়ির মালিক হবার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

নানাই মিডিয়ার বিভিন্ন পরিচালকদের সাথে যোগাযোগ করেন। পরীমনিরও ছোটবেলা থেকে নাচ-গান করার ঝোঁক। নানার প্ররোচণায় পরীমনিও পুরোদমে নায়িকা হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। একের এক চাপ দেয় ইসমাইলকে। ইসমাইল নিজের স্ত্রীকে মিডিয়ায় দিতে রাজি হয় না। আর ইসমাইলের পরিবার শিক্ষিত, রুচিশীল ও ধার্মিক হওয়ায় পুত্রবধূকে বর্তমান অসুস্থ ধারার এই সিনেমার জগতে দেখতে রাজি হয় না। তারপরও পরীমনি ঝামেলা করতে থাকে।

দিন দিন দাম্পত্যকলহ বাড়তেই থাকে। শেষ পর্যন্ত পরীমনিকে প্রথমে ঢাকায় তারপর রংপুর. কুয়াকাটা এবং কক্সবাজারে নিয়ে ১ মাস বেড়ায় ইসমাইল। বিভিন্নভাবে পরীমনিকে সিনেমা জগতে ঢোকার ভূত নামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সফল হয় না। জীবনের প্রথমবার ঢাকায় যাওয়ার পর সেই ভূত আরও চেপে বসে পরীর মনে।

বাধ্য হয়ে ইসমাইল অল্পবিস্তর পরিচিত কয়েকজন নাট্যকারের কাছে পরীমনিকে নিয়ে যায়। বেইলি রোড, নাটক পাড়া ও আজিজ মার্কেটে যোগাযোগ করে। অবশ্য এটা ছিল পরীকে সান্ত্বনা দেয়া। যদিও ইসমাইল জানে সে কখনও তার স্ত্রীকে এই জগতে দিবে না। সে পরীমনিকে বুঝায় যে, ‘আমি এবং আমার পরিবার চাই না তুমি এই জগতে প্রবেশ করো। আমরা সাধারণভাবে বাঁচতে চাই।’

কিন্তু পরীমনির উন্মাতাল মন আর লোভী নানার সহযোগিতায় পরী বিজ্ঞাপনের মডেলিং এর সুযোগ পায়। এইতো শুরু। নানার সাথে ইসমাইলকে রেখে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে পরী। তারপর মডেলিং শুরু করে। মডেলিং করাবস্থাতেও যোগাযোগ হয় ইসমাইল আর পরীমনির। ইসমাইল তার ভালবাসার মানুষকে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু পরীমনি রাজি হয় না। উল্টো ইসমাইলকে ঢাকায় চলে আসতে বলে। পরী বলেন, ‘আমার সাথে থাকো। আর আমার মডেলিং এর জন্য হেল্প করো। আমি চাই তুমি আমাকে এই জগতে সাপোর্ট দাও। তুমি আমার পাশে থাকো।’

কিন্তু ইসমাইল এই জগতে নিজের স্ত্রীকে দেখতে চায় না। ইসমাইল নিজেও একসময় মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। পরিবারের সুনামের কথা ভেবে সে ঐ অঙ্গনও ছেড়ে দিয়েছিল। যাহোক, ইসমাইল কোনরকমই রাজি হয় না। তখন পরীমনি শর্ত দিয়ে বলে, ‘হয় আমার সাথে সংসার করবে, না হয় পরিবারের সাথে থাকবে।’ আর অন্যদিকে, ইসমাইলের পরিবার শর্ত দেয়, ‘হয় তুমি মডেলিং করা বউ নিয়ে থাকবে, না হয় আমাদের সাথে থাকবে। স্মৃতি যদি ঐ উচ্ছশৃঙ্খল জগত থেকে ফিরে না আসে তাহলে তাকে আমরা মেনে নিব না। আর তুমি ওর সাথে ঘর করলে তোমাকেও ত্যাজ্য করবো। কারন, এসব জগতের মেয়েরা আমাদের পরিবারের সাথে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

ইসমাইল উভয় সংকটে পড়ে যায়। কাকে ছেড়ে কাকে রাখবে। এদিকে, পরীমনি মিডিয়া জগতে একের পর এক কাজ পেতে শুরু করেছে। প্রথমত স্বামী ইসমাইলকে তার পাশে চাইলেও এখন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী জুটে যাওয়ায় পরীমনি ডিভোর্স চায়। অবেশেষে ২০১২ সালে ইসমাইল ও পরীমনি উভয়ই মিউচুয়াল ডিভোর্সে যায়।

এই হল পরীমনির প্রথম স্বামী ইসমাইলের কাহিনী। ইসমাইলকে ছাড়ার পর পরীমনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছে যশোরের ছেলে সৌরভকে- এরকম সংবাদ পত্রিকাতে প্রকাশ হয়েছে। যদিও দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে কোন তথ্য এই প্রতিবেদকের জানা নেই। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়নি।

About reviewbd

Check Also

শাকিবের পারিশ্রমিক এক কোটি কেন, ২৫ লাখ টাকাও বেশি হয়ে যায়

‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি এরই মধ্যে ৪০ কোটি টাকার ওপর আয় করেছে বলে সিনেমাসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *