সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদে নববির পাশে অবস্থানকারী প্রবীণতম ব্যক্তিত্ব শায়খ মহিউদ্দিন হাফিজুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত তিনি এখানে অবস্থান করছেন এবং মৃত্যু অবধি নিয়মিত মসজিদে নববিতে যাতায়াত করতেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ১০৭ বছর। গতকাল শনিবার (১৯ জুন) মসজিদে নববিতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, শায়খ মহিউদ্দিন ছিলেন মদিনা নগরীর প্রবীণদের অন্যতম। ইসলামে দ্বিতীয় খলিফা উমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর বংশধর। ইসলামের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আলেম মহিউদ্দিন ইবনে আরাবি (রহ.) ছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষ।
সৌদির পবিত্র মক্কা-মদিনার ইসলামী স্থাপনার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আবু মালিক জানান, ‘প্রয়াত ব্যক্তি অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বোল ও কোমল মনের অধিকারী ছিলেন। সর্বদা আল্লাহর জিকির করতেন। পবিত্র কোরআনে পাঠের সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর বন্ধুত্ব।
এক টুইট বার্তায় তিনি আরো জানান, ‘মরহুমের কোনো স্ত্রী ও পুত্র ছিল না। একজন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় তিনি মসজিদে নববির পাশে অবস্থান করতেন। গত ৩০ বছর যাবত আমি তাঁকে পিঠ বাঁকা করে মসজিদে যাতায়াত করতে দেখছি। মসজিদে নববিতে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আদায় করতেন। মদিনার পবিত্র হারাম শরিফ থেকে তাঁর বাসার দূরত্ব ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। প্রতিদিন ফজরের দুই ঘণ্টা আগে ঘর থেকে বেরিয়ে জিকির করতে করতে তিনি মসজিদে আসতেন।’
‘তিনি সব সময় নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতেন। এদিক সেদিক তাকাতেন না। মদিনা নগরীর কারবান ও তাজুরি এলাকা থেকে তিনি প্রায় হেঁটে আসতেন। বাবুস সালাম ফটক দিয়ে তিনি মসজিদে নববিতে প্রবেশ করতেন। ফজরের নামাজ পড়ে ইশরাক পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। এরপর ঘরে ফিরের আবার জোহরের আগে মসজিদে এসে রাতের বেলা এশার নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতেন। এভাবেই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মসজিদে আসা-যাওয়া করতেন।’
আবু মালেক আরো জানান, ‘হারামের মধ্যে আমি তাঁর সঙ্গে অনেক সাক্ষাত করেছি। মসজিদ নববি দীর্ঘ দিন বন্ধের পর খোলা হলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করি। তখন আমাকে তিনি কেঁদে করে ফেলেন। তাঁর দুচোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তখন মসজিদে নববি ও রওজা শরিফে যাওয়ার জন্য তাঁর গভীর ভালোবাসা ও আক্ষেপ দেখতে পাই।’
সূত্র : আল জাজিরা নেট