মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর বিদায় হজ্বের ভাষণ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ

মহান আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-কে প্রেরণ করেছেন দ্বিন ইসলামকে বিজয়ী ও পূর্ণতা দানের জন্য। যখন দ্বিন ইসলাম বিজয় ও পূর্ণতা লাভ করে তখন তিনি তাঁরবিদা’য়ের কথা অনুভব করেন। তাই তিনি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা)-কে ইয়েমেনের গভর্নর নিযুক্ত করে প্রেরণকালে বলেছিলেন,

‘হে মুয়াজ, সম্ভবত এ বছরের পর আমা’র স’ঙ্গে তোমা’র আর সাক্ষাৎ হবে না। হয়তো তুমি আমা’র মসজিদ ও আমা’র কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে।’মহানবী (সা.)-এর এ কথা শুনে হজরত মুয়াজ (রা.) প্রিয় নবীর বিদা’য়ের কথা ভেবে কাঁদতে লাগলেন। ৮ জিলহজ রাসুলুল্লাহ (সা.) মিনায় অবস্থান করেন এবং ৯ জিলহজ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে সুপরিচিত।
আমা’দের প্রিয় নবী হযরত মুহা’ম্ম’দ (সা:) এর ঐতিহাসিক ভাষণঃ-

১। হে জনতা, আমা’র কথাগু’লো গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনো, আমি জানি না, এবারের পর তোমা’দের স’ঙ্গে এ জায়গায় আর একত্র ‘হতে পারব কি না।২। হে মানবমণ্ডলী, স্মর’ণ রাখো, তোমা’দের আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তোমা’দের আদি পিতা একজন, অনারবদের ওপর আরবদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তদ্রূপ সাদার ওপর কালোর কোনো প্রাধান্য নেই। আল্লাহ ভীতিই শুধু শ্রেষ্ঠত্ব ও মর’্যাদার মানদ’ণ্ড।

৩। তোমা’দের পরস্পরের র’ক্ত ও ধন-সম্পদ আজকের দিন, এ মাস এবং এ শহরের মতো পবিত্র। ৪. শোনো, জাহেলিয়াতের সব কিছু আমা’র পদতলে পিষ্ট করা হয়েছে। জাহেলিয়াতের র’ক্তের দাবিও রহিত করা হলো।মহানবী ৫। জাহেলি যুগের সুদ রহিত করা হলো। আমা’দের মধ্যকার প্রথম যে সুদ আমি রহিত করছি তা হলো, আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিবের সুদ। এখন থেকে সব ধরনের সুদ হারাম করা হলো।

৬। স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভ’য় করো। কেননা আল্লাহর আমানতস্বরূপ তোমর’া তাদের গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কলেমা’র মাধ্যমে হালাল করা হয়েছে।তাদের ওপর তোমা’দের অধিকার রয়েছে যে তারা তোমা’দের বিছানায় এমন কাউকে স্থান দেবে না, যাদের তোমর’া পছন্দ করো না। তারা এরূপ করলে প্রহার করতে পারো। তবে ক’ঠোর প্রহার করবে না। তোমা’দের ওপর তাদের অধিকার হলো, তোমর’া যথাযথ অন্ন-বস্ত্র প্রদান করবে।

৭। আমি তোমা’দের কাছে এমন দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো আমা’র সুন্নাহ।৮। হে জনতা, মনে রেখো, আমা’র পরে কোনো নবী নেই। তোমা’দের পরে কোনো উম্মত নেই। ফলে তোমা’দের প্রতিপালকের ইবাদত করবে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আ’দায় করবে, রমজানের রোজা রাখবে,স্বেচ্ছায় ধন-সম্পদের জাকাত দেবে, আল্লাহর ঘরে হজ করবে, শাসকের আনুগত্য করবে। যদি তোমর’া এসব পালন করো, তাহলে তোমা’দের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে (ইবনে মাজাহ)।৯। হে মানবমণ্ডলী, পিতার অ’পরাধে পুত্র দায়ী হবে না এবং পুত্রের অ’পরাধে কোনো পিতাকে দায়ী করা হবে না।

১০। তোমা’দের স’ঙ্গে আমা’র সম্পর্কের প্রস’ঙ্গে জিজ্ঞেস করা হবে। তোমর’া তখন কী বলবে? সাহাবায়ে কেরাম প্রত্যুত্তরে বলেন, আমর’া সাক্ষ্য দেব যে আপনি দ্বিনের দাওয়াত দিয়েছেন, আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।মহানবী (সা.) এ কথা শুনে শাহাদাত আঙুল আকাশের দিকে উত্তোলন করে লোকদের দিকে ঝুঁ’কিয়ে তিনবার বলেন, হে রব, আপনি সাক্ষী থাকুন (সহিহ মুসলিম)।

১১। প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই। তোমর’া তোমা’দের দাস-দাসী সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। তোমর’া যা খাবে তাদেরও তা খেতে দেবে। তোমর’া যা পরিধান করবে তাদেরও তা পরতে দেবে। তাদের অ’পরাধ ক্ষ’মা করে দেবে। শা’স্তি দেবে না।

১২। হে মানবজাতি, ধ’র্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। কেননা অতীতের অনেক জাতি এ বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বং’স হয়েছে। উপস্থিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব হবে আমা’র এ কথাগু’লোঅনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হজরত রাবিয়া ইবনে উমাইয়া ইবনে খালফ জনতার কাছে উচ্চকণ্ঠে এ বাণী পৌঁছে দেন । (ইবনে হিশাম)

About reviewbd

Check Also

৭ বছর সংসারের পর স্ত্রী’’কে প্রে’মিকের কাছে ফিরিয়ে দিলেন স্বা’মী

গল্পটা সিনেমা’র মতোই। যেন ব্লকবাস্টার হিন্দি সিনেমা ‘হা’ম দিল দে চুকে সানাম’ এর প্রায় হুবহু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *