জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে সরকারি দায়িত্ব পালনের জন্য এসেছিলেন তিনি। মেয়াদ ছিল দুই বছর। এর মধ্যেই কর্মগুণে তিনি স্থান করে নিয়েছেন নাটোরবাসীর অন্তরে। তিনি নাটোরের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ। তার বিদায়ের কথা শুনে কাঁদছে নাটোরবাসী। তার জন্য কাঁদলো নাটোরের এতিম শিশুরাও।ওই শিশুদের প্রতি মমত্বে কাঁদলেন জেলা প্রশাসকও।
জেলা প্রশাসক হিসেবে মো. শাহরিয়াজ নাটোরে আসার পর অল্প কিছুদিনেই নাটোরবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নেন। যখনি কোথাও কোনও সংকট দেখেছেন তিনি ছুটে গেছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন সবার বিপদ-আপদে। চলমান এই করোনাকালে সরকারি ত্রাণ সঠিকভাবে বণ্টন থেকে শুরু করে সব কাজে তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের পাশে।
এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের পথ ধরে তিনিও আপন হয়ে ওঠেন জেলার দিঘাপতিয়া বালিকা শিশুসদনের এতিম শিশুদের কাছেও। প্রায়ই ছুটে যেতেন তিনি ওই অনাথ শিশুদের কাছে। ভালোবাসায়-মমত্বে ভুলিয়ে রাখতেন তাদের, ঠিক যেন বাবার মতো।
সরকারি আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক শাহরিয়ার নাটোর ছেড়ে চলে যাবেন মঙ্গলবার (২২ জুন)। তাই নাটোরের বিভিন্ন সংগঠন আর প্রতিষ্ঠান তাকে বিদায় দিচ্ছে অশ্রুসিক্ত নয়নে। কিন্তু শেষ সময়ে হঠাৎ সোমবার (২১ জুন) বিকালে তিনি উপস্থিত হন দিঘাপতিয়া বালিকা শিশুসদনে।
শিশুরা আগেই জেনেছিল তার বদলির খবর। তখন থেকেই তাদের ছিল মন খারাপ। এমন অবস্থায় হঠাৎ জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ছুটে আসে এতিম শিশুরা। আবেগে-পিতৃস্নেহে তাদের জড়িয়ে ধরেন জেলা প্রশাসক। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। শিশুদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন জেলা প্রশাসক। অশ্রু ঝরতে থাকে শিশুদের চোখেও। এমন দৃশ্য দেখে উপস্থিত কেউই আটকাতে পারেননি চোখের পানি।
দিঘাপতিয়া বালিকা শিশুসদনের পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বলেন, ‘নাটোরে যোগদানের পর থেকে প্রায়ই শিশুসদনে আসতেন জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ। তিনি সার্বক্ষণিক এতিম শিশুদের খোঁজ নিতেন আর সম্ভাব্য সব সহযোগিতা করতেন।
বিদায়ের আগের দিন সোমবার বিকালেও সস্ত্রীক এতিমদের মাঝে পৌঁছেন জেলা প্রশাসক। এ সময় শিশুরা দৌড়ে তার কাছে গেলে তাদের জড়িয়ে ধরেন তিনি। তার বিদায়ে ব্যথিত শিশুরাও কাঁদতে থাকে। শিশুরা জেলা প্রশাসককে নিজ হাতে সেলাই করা নকশি কাপড় উপহার দেয়। এ সময় তার স্ত্র্রী এই এতিম শিশুদের শিক্ষার পাশাপাশি হাতে-কলমে কিছু আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পরিচালনা পর্ষদের প্রতি আহ্বান জানান।’
সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল আরও জানান, এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডিসি শাহরিয়াজ বলেন, তিনি যেখানেই থাকেন না কেন, সুযোগ পেলে এই শিশুদের কল্যাণে সহযোগিতা করবেন।
বিদায়ের আগে তিনি স্মৃতিস্বরূপ শিশুসদন চত্বরে একটি বকুল ফুলের চারা রোপণ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ডাক্তার কালাম, অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, মনিমুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
শিশুসদন ত্যাগ করার আগে সস্ত্রীক শিশুদের মাঝে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ। তিনি বালিকা সদন ত্যাগ করার সময় পিছু পিছু নিকটবর্তী রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দেয় উপস্থিত ৬৭ এতিম শিশু।