নিজেদের যোদ্ধাদের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিতে অবিবাহিত নারীদের খোঁজ করছে আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। গোষ্ঠীটির অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে, নিজেদের দখলকৃত এলাকার স্থানীয় নেতাদের ১২ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। এই পদক্ষেপকে আফগানিস্তানে শরিয়া আইন ফিরে আসার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন অনেকেই। এছাড়া মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনেও এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, আফগানরা এখন দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যদের শিরশ্ছেদও দেখছেন তালেবান সন্ত্রাসীদের হাতে। এমনকি কোনও ধরনের উসকানি ছাড়াই সম্প্রতি দখলে নেওয়া এলাকাগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলাও চালাচ্ছে তালেবানের সদস্যরা। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের প্রাদেশিক রাজধানী শহরের দখল তালেবানের হাতে চলে যাওয়ায় আফগানরা রাজধানী কাবুলের দিকে ছুটছেন। কাবুলের চারপাশে বিপুলসংখ্যক আফগান আশ্রয় নিয়েছেন। তারা এবং তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বিনা উসকানিতে তালেবানের হামলা এবং আটককৃত সৈন্যদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে দেখেছেন তারা।
আফগানরা বলেছেন, দখলকৃত এলাকার অবিবাহিত নারীদের তালেবানের সদস্যদের কাছে বিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এই গোষ্ঠী; আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো তালেবানের এই দাবিকে নারীদের প্রতি এক ধরনের যৌন সহিংসতা বলে নিন্দা জানিয়েছে।
তালেবানের সদস্যরা প্রকাশ্যে বিজয় অর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছে, দেশের বৃহত্তর অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তালেবানের কর্মকাণ্ড বলছে ভিন্ন কথা বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস তালেবানের সহিংস কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মার্কিন দূতাবাস বলছে, আত্মসমর্পণকারী আফগান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে তালেবান। তালেবানের এ ধরনের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং তা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।
দেশটির সশস্ত্র এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তের প্রধান প্রধান প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠী দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে। এখন পর্যন্ত তালেবানের সদস্যরা দেশটির ১২টি প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিয়েছে।
দুই দশকের যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর ক্ষমতা ও দেশ দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে তালেবান। চলতি মাসেই আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছেন, তালেবানের আগ্রাসন বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামী ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী কাবুলের দখলও এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে চলে যেতে পারে।