দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা সক্রিয় তারা প্রিসিলা নামটির সঙ্গে পরিচিত। প্রিসিলা ফেসবুকে একটু সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান করেন, যেখানে বাংলাদেশের শীর্ষ তারকা থেকে আলোচিত ব্যক্তিরাও অংশ নেন। প্রিসিলা একজন তরুণী, শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক কর্মকাণ্ডই নয়, বাস্তবে সমাজসেবামূলক কাজগুলোতেও নিজেকে যুক্ত করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসেই। প্রিসিলাকে নিয়ে এই প্রজন্মের নানা কৌতুহল। সেই কৌতুহল ও সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রিসিলার সঙ্গে কথা বলেছেন মাহতাব হোসেন।
প্রিসিলা কি আপনার আসল নাম, নাকি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমেরিকান নাম রেখে দিয়েছেন, অনেকেই যেটা করেন?
প্রিসিলা: আমার পুরো নাম ফাতিমা নাজনীন প্রিসিলা, জন্মের পরেই এ নাম ছিল, বার্থ সার্টিফিকেটও একই নাম, নাম পরিবর্তনের চিন্তা আসেনি কখনো ।আর চ্যানেল ও পেইজে ছোট নাম দিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম যে কারণে প্রিসিলা নামটা পরিচিত হয়ে গেছে |
আপনার জন্ম কোথায়? আপনার পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের কোন জেলার?
প্রিসিলা : আমার জন্ম কুমিল্লায় ।আমার পূর্বপুরুষরা সবাই কুমিল্লার। মায়ের বাড়িও কুমিল্লায়। পরিবারের অনেকেই এখনো কুমিল্লায় থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আপনার পরিবারে কে কে রয়েছেন, তারা কী করছেন?
প্রিসিলা : যুক্তরাষ্ট্রে আমার মা , বাবা ও এক চাচা এবং উনার পরিবার আছেন ।আমার বাবা একটা কর্পোরেশনের কর্মকর্তা, মা ও একটা কম্পানির ম্যানেজার। চাচা শিক্ষক , চাচাত ভাই রেডিওলোজিতে পিএইচডি করে জেনারেল কম্পানিতে বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করছেন।
মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন এলেন?
প্রিসিলা : ছোট সময় হলিউডের মুভি দেখে অভিনয়ের ইচ্ছা হয়। স্কুলে নাচ, গান ও অভিনয়ের দলে যোগ দেই, বিভিন্ন পুরস্কারও জিতে নেই। সুযোগ পাই অভিনয়ের। আমার আগ্রহ দেখে বাবা হলিউডের একটা প্রতিষ্ঠান NewYork film academy তে অভিনয় ও মডেলিং কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেন আমায়। কোর্স শেষ করি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল অভিনয় সবাই করতে পারে। এ ফিল্ডে আমাকে প্রয়োজন নেই। একটা ইংলিশ মুভিতে অভিনয়ের অফার পেয়েছিলাম আমেরিকায়। কিন্তু যাওয়া হয়নি। বার্মার একটা ছোট মুভিতে অভিনয় করেছিলাম নিউইয়র্কে, যদিও অভিনয় শেষে ঐ মুভির কোনও খবর আমি রাখিনি। মাদার তেরেসার কিছু গল্প, কিছু কথা আমার জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাছাড়া প্রিন্সেস ডায়নার জীবনী অনুপ্রাণিত করে আমায়।তাই মিডিয়াতে আসা। ভাল কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে ।অভিনয় বা মডেলিং এ নিয়মিত হচ্ছি না ।থাকতে চাই সামাজিক কাজ কর্ম নিয়ে ।ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। সহ্য করতে পারিনা অসুস্থ্য মানুষের কষ্ট। নিজে তেমন কিছু করতে পারি না , শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি।
ক্যারিয়ার হিসেবে আল্টিমেটলি কোন বিষয়টিকে বেছে নেবেন?
প্রিসিলা : সাংবাদিকতা ও রাজনীতি বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চেষ্টা করছি। তারপর আইন বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে। দেখা যাক ভাগ্য কোথায় নিয়ে যায়।
আপনার পরিবার আপনাকে আপনার কাজে কতটুকু সহযোগিতা করেন?
প্রিসিলা : পরিবার ও আত্মীয় স্বজন এবং অনেক অপরিচিত মানুষ বিভিন্নভাবে আমায় সহযোগিতা করেন। অনেকে মনে করেন আমি অনেক টাকা উপার্জন করি। তাই খরচ করি। বিষয়টা এমন না। অনেক কথা আছে যা মনে হলে কষ্ট পাই। হয়তো একসময় প্রকাশ করব।
সামাজিক কাজ করতে গিয়ে স্মরণীয় খারাপ লাগার মতো কোনও স্মৃতি আছে কি, যা মনে হলে কষ্ট পান?
প্রিসিলা : জি আছে, আজ কয়েকটা ঘটনা বলছি। একজন সম্মানী লোককে অনেকগুলো টাকা দিয়েছিলাম পথশিশুদের খাবার কিনে দেয়ার জন্য। উনি আমার টাকাগুলো দিয়ে পথশিশুদের খাবার না দিয়ে, মিথ্যা বলে টাকাগুলো নিজে রেখে দেন।
আরেকজন বিশাল ক্ষমতাবান লোককে অনেকগুলো টাকা এবং একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট দিয়েছিলাম ।একটা শিক্ষামূলক নাটক তৈরি করতে ।নাটকটি হয়নি এবং টাকা ফেরত চাওয়াতে আমি এবং আমার পরিবারকে হুমকি দিয়েছিলেন।
পঙ্গুদের একুশটি হুইল চেয়ার কেনার জন্য কিছু মানুষকে টাকা দিয়েছিলাম, ছয়টির মতো হুইল চেয়ার কিনে দেয়া হয়েছে , বাকি যাদেরকে টাকা দেয়া হয়েছিল উনাদের কোনও খবর নেই।
একজন শিক্ষিত ভাই সমস্যায় আছে তাই ব্যবসার জন্য কিছু টাকা দেই। পরে উনি আরও কিছু টাকা ঋণ চায় দুই মাসের জন্য। আমি তাও দেই ।ছয় মাস পর ঋণ নেয়া টাকা ফেরত চাওয়াতে আমায় হুমকি দিয়েছিল। পরে আবার আংশিক টাকা দিয়েছে, বাকিটা না দেয়ার জন্য আমি বলে দিয়েছি ।উনি এখন বড় ব্যাবসায়ী। ভাল আছেন।
আমি এ ঘটনাগুলো থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তবে যারা আমার সাথে এমন করেছে, উনাদের কেউই গরীব নন। সবাই শিক্ষিত, ভালো অবস্থানে আছেন ।আমার পরিবার থেকে নিষেধ আছে, যেন উনাদের নাম কখনও প্রকাশ না করি, কারণ এতে উনাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাছাড়া আমাদের সময় খুব কম থাকে। তবে বিষয়গুলো আমায় কষ্ট দেয় |
সারাবিশ্বের বাঙালিরা প্রিসিলাকে চেনে, বিষয়টিকে কেমন লাগে?
প্রিসিলা : এটা সত্য নয় ।আপনি আমাকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। সামান্য কিছু মানুষ চেনে। কেউ আমার কাজকে সমর্থন করে, কেউ আবার বলে মেয়ে মানুষের এসবের কি দরকার। মেয়েরা তো ঘরে থাকবে। সব মানুষের মতামতকে শ্রদ্ধা করি। প্রাধান্য দেই। ভালো কিছু যদি করতে না পারি তাহলে দ্রুত হারিয়ে যেতে হবে। ভাল কিছু করার অপেক্ষায় আছি। আপনাদের দোয়া এবং ভালোবাসা থাকলে ইনশাল্লাহ ভাল কিছু হবে।
বাংলাদেশের কোনও পিছিয়ে পড়া- ক্ষেত্রে কাজ করার আগ্রহ আছে কি না, থাকলে সেটা যদি বলতেন…
প্রিসিলা : আমি বাংলাদেশ নিয়ে অনেক আশাবাদী ।বিশেষ করে তরুণদের যদি সঠিক পথ দেখানো যায়, অনেক ওপরে যাবে বাংলাদেশ। শিক্ষার মান উন্নয়ন। মাদক নিয়ন্ত্রণ ।ইংরেজি ও কম্পিউটার শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমার বিশ্বাস ।ভারত ও ফিলিপিন্স কিভাবে বিশ্বের জব মার্কেট দখল করছে বিষয়টা দেখার অনুরোধ রইল। তাছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিক ও প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধা এবং সুবিধা বঞ্চিতদের নিয়ে পলিটিক্সের বাইরে থেকে কাজ করার ইচ্ছা আছে ।তবে বাংলাদেশ কোনও বিষয়ে পিছিয়ে আছে বলে মনে করি না।
আপনার কোন বিষয়টির ওপর নেটিজেনদের আগ্রহ বেশি?
প্রিসিলা : আমি অনেক ভাগ্যবান যে কিছু মানুষ আমায় ফলো করেন ।স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। আমায় যারা স্নেহ করেন, উনারা আমার প্রতিটা বিষয়, প্রতিটা কাজ সমর্থন করেন। মানবিক কাজ, শিক্ষামূলক ভিডিও। মোটিভেশন মূলক কথা। ভালো মানুষদের ইন্টারভিউ। আমার কণ্ঠে ইসলামিক সংগীত ইত্যাদি
আপনার কোন বিষয়টি নেটিজেনদের আকৃষ্ট করে বলে আপনার ধারণা…
প্রিসিলা : এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই, অনেকে আমার কষ্ট করে বাংলা বলা উপভোগ করেন , এটা বুঝি , অপেক্ষাকৃত ছোট মানুষ বলে অনেকে স্নেহ করেন, ছোট বোন মনে করেন, এ জন্য কৃতজ্ঞতা |
কবে নাগাদ বাংলাদেশে আসবেন? দেশে এলে প্রথম যে কাজটি করবেন…
প্রিসিলা : আগামী বছর 12th গ্রেড শেষ করে কলেজে ভর্তির পর দেশে আসার ইচ্ছা আছে। দেশে এসে কিছুদিন দেশের সবচেয়ে গরীব মানুষগুলোর সাথে কাটাব। উনাদের জীবন কিভাবে চলে, কিভাবে উনারা উনাদের সংসার চালান, এসব নিজের চোখে দেখব। এতিমদের সাথে সময় দেব। বৃদ্ধাশ্রমে সময় দেব। তাছাড়া পাঁচশ’র মতো দাওয়াত আছে, সবগুলো দাওয়াতে যাব আপনাদের নিয়ে। কিছু জায়গায় আমার কিছু কাজ হয়েছে। ঐ কাজগুলো দেখব। নুতন কিছু কাজ করব। আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করব। অনেক জামা কাপড় কিনব। তাজা ইলিশ মাছ খাব। কক্সবাজার যাব। সুন্দরবন যাব।
সবশেষে আমার পক্ষ থেকে আমার সকল মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা , উনারা আমায় অনেক সমর্থন দিচ্ছেন, ভালোবাসা দিচ্ছেন, আমি যেন উনাদের ভালোবাসার উপযুক্ত সম্মান দিতে পারি এ জন্য দোয়া চাচ্ছি।
ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকবেন
প্রিসিলা : আপনিও