সারা বিশ্ব যখন বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ,ঘটনা দিন, দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে রোমানিয়ায় দেখা যায় বিপরীত চিত্র। দেশটির ছোট একটি গ্রাম ,বিয়ারটান। যেখানে গত ৩০০ বছরে ডিভোর্স হওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র একবার।
এখানকার বিবাহিতরা, চাইলেই ডিভোর্স দিতে পারবেন আইন অনুযায়ী সেই অধিকার তাদের রয়েছে। তবে ডিভোর্সের আগে, স্বামী স্ত্রী দুজনকেই বাধ্যতামূলকভাবে কিছুদিন একত্রে একটি রুমে কাটাতে হয়। এই নিয়মকে বিয়ারটানবাসী, ম্যারিটাল প্রিজন বলে থাকে।
ডিভোর্সের উদ্দেশ্যে এখানকার বিবাহিতদের প্রথমে ,স্থানীয় চার্চেরের বিশপের কাছে যেতে হয়। বিশপ তাদের সব অভিযোগ শুনেন। তাদের কাছে জানতে, চান ঠিক কি কারণে তারা ডিভোর্স করতে চাই।
এরপর বিশপ তাদের দুজনকে প্রায় ছয় সপ্তাহের, জন্য একটি ছোট ঘরে বসবাস করতে পাঠান। সেখানে চেয়ার টেবিল খাবারের পাত্র সবকিছুই থাকে ,একটি করে। এখন কি ঘুমানোর জন্য যে বিছানা রয়েছে সেটা সিঙ্গেল সিটের।
এখানে থাকার সময় ম্যারিটাল প্রিজনারদের তাই সবকিছু, ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়। উদ্দেশ্য হলো তারা যেন নিজেদের সমস্যাগুলো নিজেরা মিটিয়ে ,নিতে পারে। দুজনের ভেতর থেকে মানিয়ে চলার আগ্রহ তৈরি হয়।
ম্যারিটাল প্রিজনের পুরো সময়টাই ,এখানে তাদের একত্রে কাটাতে হয়। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের তেমন কোনো সুযোগই থাকে, না। তারা যাতে বাইরের কারো সঙ্গে মিশতে না পারেন, সেটা চার্চের বিশপই নিশ্চিত করে থাকেন
পুরো সময়টা একত্রে থাকার পর, যদি তারা মানিয়ে নিতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে কেবল তারা একজন আরেকজনকে ডিভোর্স দিতে, পারবেন। তবে ডিভোর্স দেয়ার ক্ষেত্রে স্বামীকে অবশ্যই তার ডিভোর্স দেয়া স্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হয়।
কারণ ,বিয়ারটান গ্রামে শুধু পুরুষরাই জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করে থাকে। গ্রামের শিশু এবং নারীদের ভরণপোষণের, দায়িত্ব থাকে পুরুষদের উপর। তাই তো ডিভোর্সের পরে যাতে সদ্য ডিভোর্স হওয়া নারীকে কোনোরকম ,অসুবিধায় পড়তে না হয়, সেজন্য রয়েছে বিশেষ নিয়ম। ডিভোর্স হওয়ার পর স্বামীকে তার বেতনের অর্ধেক, টাকা সবসময় ভরণপোষণ ভাবত স্ত্রীকে দিতে হবে।
ওই স্বামী যদি পুনরায় নতুন করে বিয়ে করেন, এবং সেটাও যদি বিচ্ছেদে রূপ নেই, তবে সেক্ষেত্রে স্ত্রীর ভরণপোষণের কোনো নিয়ম রাখা হয়নি। কারণ, ছয় সপ্তাহ একসঙ্গে থাকার পর ডিভোর্স হওয়ার ঘটনাই ঘটেনি কোনোদিন।
দ্বিতীয় বিয়ে করা তো দূরের ,ব্যাপার। আর বিয়ারটানবাসী তাদের সমাজ এবং বংশ পরম্পরা টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। এই কারণেই ,এখানে সচরাচর ডিভোর্স হওয়ার ঘটনা ঘটে খুবই কম।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ম্যারিটাল প্রিজনারা দুই, সপ্তাহেরও কম সময় সেখানে থাকেন। কারণ এর মাঝেই তাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এই পদ্ধতিটা ,এত বেশি কার্যকর হয়েছে যে, গত ৩০০ বছরের সেখানে ডিভোর্সের ঘটনা রেজিস্টার্ড হয়েছে মাত্র ,একটি।
ডিভোর্স বর্তমানে সারা বিশ্বেই একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও এই সমস্যা দিন, দিন প্রকট হয়ে উঠছে। ডিভোর্স ঠেকাতে বিয়ারটানবাসী ম্যারিটাল প্রিজন ব্যবস্থা হতে পারে এই সমস্যার ,অন্যতম সমাধানগুলোর একটি।