ভুবন বাদাম বিক্রি করেন, ভাজা বাদাম নয়, কাঁচা বাদাম। ভাজা বাদামের অপকারিতা আর কাঁচা বাদামের উপকারিতা নিয়ে একটি গান বেঁধেছেন তিনি। এই গানের কথা যুক্ত হয়েছে টাকা ছাড়াও কিসের বিনিময়ে বাদাম বিক্রি করেন, যেমন ভাঙা মোবাইল, সিটি গোল্ডের পুরনো জিনিস, মাথার চুল ইত্যাদি। গানের কথায় এসব আর অদ্ভুত সুর তরুণরা ইন্টারনেটে পাওয়া মাত্রই লুফে নেয়।
বাংলাদেশের ইন্টারনেটে হুট করেই জনপ্রিয় হয়ে যাওয়া ভুবন বাদ্যকরকে নিয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও তার গান নিয়ে টিকটক লাইকিতে তুমুল ঝড় ওঠে। অনেক সংগীতশিল্পী গানটিকে লুফে নিয়ে নতুন সংগীত আয়োজনে গাইতে শুরু করেন। র্যাপ যুক্ত গান তৈরি হয়ে যায় অসংখ্য।
বৃহস্পতিউবার কালের কণ্ঠ অনলাইন ভার্সনে ‘ভারতে গিয়ে গায়ক বাদাম বিক্রেতাকে খুঁজে বের করলেন বাংলাদেশি তরুণ’- এমন শিরোনামে এক তরুণের ভুবন অনুসন্ধানের খবর হয়। এবার এক তরুণীর ভুবন বাদ্যকরের গানের সঙ্গে নাচের খবর জানা গেল। না, বিষয়টি এমন নয় যে গানটির সঙ্গে নেচে ইউটিউব, ফেসবুক অথবা ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে বীরভূম গিয়েছেন ওই তরুণী। সেখানে ভুবন বাদ্যকর তার সেরা ‘কাঁচা বাদাম’ গাইলেন আর নাচলেন বাংলাদেশি তরুণী তৌহিদা অনয়।
তৌহিদা অনয় গিয়েছিলেন কলকাতায়, সেখান থেকে বীরভূম গিয়েছিলেন। হাওড়া থেকে দুবরাজপুর ব্লকে ট্রেন থেকে নেমে লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম কুড়ালজুড়ি গ্রামে পৌঁছেন। এরপর খুঁজে বের করেন, তারপর ভুবন বিখ্যাত গানটি গাইলেন আর নাচলেন তৌহিদা অনয়। আরেকটু সহজ করে বললে, গল্পটা সহজ হয়ে যায়। কাল যারা কালের কণ্ঠের সেই প্রতিবেদনটি পড়েছেন তারা জানেন মাহসান স্বপ্ন নামের একজন তরুণ গিয়ে খুঁজে বের করেছেন ভুবন বাদ্যকরকে। এই তৌহিদা অনয় মাহসানের স্ত্রী।
তোহিদা এই মুহূর্তে কলকাতায় রয়েছেন, সেখান থেকেই আলাপ হয় কালের কণ্ঠের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বীরভুম যাই, তখন বেশ সকাল; আমরা ক্লান্তই ছিলাম। কিন্তু সত্য কথা বলতে ভুবন বাদ্যকরের গানে এমন কিছু রয়েছে, যাতে শরীর আপনাতেই দুলে ওঠে। আমি যখন গানটি শুনছিলাম, আমার নাচতে ইচ্ছা হলো। ভুবন দাদা রাজি হলেন। তিনি গানটি গাইলেন আর আমি নাচলাম। ভাবিনি আমার সেই ভিডিও এভাবে ছড়িয়ে পড়বে।’
তৌহিদা অনয়ের নাচের ভিডিওটি এখন পর্যন্ত দেখেছেন এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ।
ভুবন বাদ্যকর ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় তাঁর বাসায় ছুটে যান বিধায়ক অনুপ কুমার সাহা। বাদামওয়ালা ভুবনের এই গানের সুরের টানে ছুটে আসেন অনেকে। শুধু গান শোনা নয়, গানের পাশাপাশি তাঁর কাছে ক্রেতারা বাদামও কেনেন। শুধু টাকা দিয়ে নয়, পুরনো সিটি গোল্ডের চেন, চুড়ি, হাতের বালা, মোবাইল ভাঙা, হাঁসের পালক, মাথার চুল ইত্যাদির বিনিময়েও বাদাম কেনা যায় তাঁর কাছ থেকে। দৈনিক আয় ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন কিছুটা বেড়েছে।
তবে ভুবন বাদ্যকরের জীবনযাপনে কোনো পরিবর্তন আসেনি, সারা বিশ্বের বাঙালিরা ভুবনকে চিনলেও, গান শুনলেও তাঁর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এক জীর্ণ পলিথিনে ছাওয়া মাটির ঘরে থাকেন ভুবন। পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, দুই ছেলে। এক ছেলের বউ ও নিজের স্বামী পরিত্যক্ত বোন।