ইতিহাসের সেরা পাঁচ সুন্দরী রানীর রুপের আড়ালের কাহিনী

ইতিহাস নিয়ে সবারই রয়েছে কৌতূহল। বিশেষ করে সেকালের রাজা ও রানীদের নিয়ে কৌতূহলতা সবার মনেই রয়েছে বৈ-কি! ইতিহাস ঘাঁটলেই ক্লিওপেট্রা, এলিজাবেথ, মেরিসহ বিখ্যাত নারীর কথা সামনে আসে। নিজেদের কৃতকর্মের জন্যই ইতিহাসের বুকে স্থান পেয়েছেন তারা।

এছাড়া নিজেদের সৌন্দর্য দিয়েও আজো বিশ্ববাসীকে আকর্ষিত করছেন তারা। বর্তমান নারীরা তাদেরই সৌন্দর্য্য রহস্য অনুসরণ করে থাকে। তবে জানেন কি? কতোটা অদ্ভুত আর ভয়াবহ ছিল তাদের রূপচর্চার ধরন। চলুন তবে জেনে নিন ইতিহাসের সেরা পাঁচ সুন্দরী রানীর রূপের আড়ালের কাহিনী-

তালিকার প্রথমেই যে নারীর সঙ্গে আপনি পরিচিত হতে যাচ্ছেন, তার নাম হয়তো আপনি আগে কখনো শুনে না-ও থাকতে পারেন। তবে মাত্র ২২ বছর বয়সেই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমানোর আগে উত্তর ইতালীর সেরা সুন্দরী বলে মনে করা হতো ভেসপুচ্চিকেই। এই সৌন্দর্যের কারণেই বত্তিচেল্লি সহ ফ্লোরেন্সের অনেক চিত্রশিল্পীরই চিত্রের মডেল হয়েছিলেন এ তরুণী।

যেমন- বত্তিচেল্লির ১৪৮০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অঙ্কিত ‘দ্য বার্থ অফ ভেনাস’ চিত্রকর্মে মাঝখানে ভেনাসরুপে দাঁড়ানো নারী আর কেউ নন, স্বয়ং ভেসপুচ্চিই, যিনি সেখানে ভেনাসের মডেল হিসেবে ছিলেন। আজকের দিনে কোনো জনপ্রিয় মডেলের দেখা পেলে সমলিঙ্গের সবাই যেমন তার মতো হতে চায়, ভেসপুচ্চির বেলাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

তৎকালীন ইতালীয় নারীরা ফ্যাশনের জন্য তার অন্ধ অনুকরণেই অভ্যস্ত ছিলেন। চেহারাকে ধূসর, সাদা ও আরো সৌন্দর্যময় করে তোলার জন্য ভেসপুচ্চির সময়ের নারীরা মুখে জোঁক লাগিয়ে রাখতেন। জোঁকেরা তাদের মুখ থেকে রক্ত চুষে নিতো। ফলে রক্তহীনতায় মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যেত, আর এটাই তারা চাইতেন! যারা জোঁক ব্যবহারে আগ্রহী ছিলেন না, তারা পাউরুটির টুকরো,

ডিমের সাদা অংশ ও ভিনেগার একত্রে মিশিয়ে ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতেন। জন্মগতভাবেই ভেসপুচ্চি ছিলেন স্বর্ণকেশী। তার দেখাদেখি অন্য অনেকেও নিজেদের চুলকে সোনালী রঙের বানাতে চাইতেন। তবে নিজেদের চুলকে সেভাবে সজ্জিত করার মতো অর্থ যেসব দরিদ্র নারীর থাকতো না, তারাও সাধ মেটাতে নিজেদের চুলের রঙ হালকা করার উদ্দেশ্যে সেখানে নিজেদের মূত্রই ব্যবহার করতেন।

রানী প্রথম এলিজাবেথের সময়কালে সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রসাধনী সামগ্রীটির নাম ছিলো ভেনেশিয়ান সেরুজ। সীসা ও ভিনেগার মিশিয়ে প্রস্তুতকৃত এ প্রসাধনীটি তৎকালীন নারীরা তাদের মুখে ব্যবহার করতেন, যাতে তাদেরকে আরো ফর্সা দেখা যায়। ভেনেশিয়ান সেরুজ ব্যবহারের দিক দিয়ে তৎকালীন অন্য সব নারীকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন রানী। তার বয়স যখন ২৯ বছর, তখন তিনি স্মলপক্সে আক্রান্ত হন।

ফলে তার সারা শরীর গুটি গুটি দাগে ছেয়ে যায়। এ অবস্থায় অন্য কারো সামনেই যাবার মতো অবস্থা ছিলো না রানীর। তাই জনসমক্ষে যাবার আগে প্রতিবার তিনি শরীরের বাইরে প্রদর্শিত প্রতিটি অংশ ভেনেশিয়ান সেরুজ দিয়ে মাখিয়ে নিতেন। তিনি সেই মিশ্রণটি এতটাই বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতেন যে, কেউ যদি তাকে মেকআপ ছাড়া দেখতো, তবে সেই ব্যক্তি তাকে ভুলেও চিনতে পারতো না!

ফরাসি বিদ্রোহের আগে মেরি আঁতোয়ানেই ছিলেন ফ্রান্সের সর্বশেষ রানী। ঘুমোতে যাবার আগে এই রানী ফেসমাস্ক হিসেবে যা ব্যবহার করতেন, সেটার উপকরণগুলোর নাম শুনে কেউ সেটাকে খাবার বলে ভাবলেও খুব একটা ভুল হবে না। কারণ সেই মিশ্রণে থাকতো কনইয়াক মদ, ডিম, গুঁড়া দুধ এবং লেবুর রসের উপস্থিতি। সকালে ঘুম থেকে উঠে রানী যে ফেস ক্লিনার ব্যবহার করতেন, তা বানানো হতো কবুতর সিদ্ধ করা পানি দিয়ে। সেই বোতলগুলোর লেবেলে লেখা থাকতো ‘Eau Cosmetique de Pigeon’ এবং আরো জানানো থাকতো যে, প্রতিটি বোতলের মিশ্রণ তৈরিতে ৮টি করে কবুতর ব্যবহার করা হয়েছে! এরপর আসতো পোষাক বদলের বিষয়, যা দিনে তিনবার করে করতেন রানী।

একজন রানী হওয়ায় কখনোই এক পোষাকে দ্বিতীয়বার দেখা যেত না তাকে। এভাবে করে তার পোষাকের পেছনে বছরে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হতো, বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী তা দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখ মার্কিন ডলারে! ধারণা করা হয়, তৎকালে ফ্রান্সে শিরাকে নীল রঙে রাঙানোর জনপ্রিয় ফ্যাশনের একজন অনুসারীও ছিলেন রানী মেরি।

সেই সময় ফ্রান্সের নারীদের মাঝে কে কতটা কৃশকায় হতে পারে তা একটা ফ্যাশনে রুপ নিয়েছিল। তারা নিজেদের শিরাগুলোকে নীল রঙের পেন্সিল দিয়ে এঁকে বোঝাতে চাইতেন যে, তারা এতটাই শুকনা যে তারা আলোকভেদ্য হয়ে গিয়েছেন। আর এ সবই করা হতো পুরুষদের আকৃষ্ট করার জন্য।

জো পোরফাইরোজেনিটাকে বলা হয়ে থাকে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অন্যতম সেরা সুন্দরী সম্রাজ্ঞী। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই জো-ই যখন তরুণী ছিলেন, তখন নাকি তিনি দেখতে ততটা আকর্ষণীয় ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীকালে যখন তার বয়স ষাটোর্ধ্ব হয়ে যায়, তখন নাকি তাকে দেখতে এতটাই সুন্দর লাগতো যে, মনে হতো কোনো তরুণী হেঁটে যাচ্ছে! আসলেই এটা সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু কীভাবে তিনি সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন, সেই বিষয়েই এখন বলা যাক।

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “টাকা থাকলে বাঘের দুধও কিনতে পাওয়া যায়”। ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছিলো জো’র বেলায়। সম্রাজ্ঞী হবার পরে শুধুমাত্র তার রুপচর্চার উদ্দেশ্যেই রাজপ্রাসাদের ভেতরে একটি আস্ত কসমেটিক্সের গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়। এখানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো যেমন বেশ দামী ছিলো, তেমনই ব্যয়বহুল ছিল এখান থেকে উৎপাদিত প্রসাধনী সামগ্রীগুলোও। তবে রানীর জন্য নিবেদিত গবেষণাগার বলে কথা, এই প্রসাধনী সামগ্রীগুলোর একমাত্র ক্রেতা ছিলেন জো নিজেই।

পোপ ষষ্ঠ আলেকজান্ডারের কন্যা লুক্রেজিয়া বর্জিয়া ছিলেন বিখ্যাত হাউজ অফ বর্জিয়ার এক অভিজাত বংশীয় নারী। মোহনীয় রুপের জন্য অসংখ্য চিত্রকর্ম, উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে তাকে। তার রুপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল তার চুলগুলো। আর সেসবের রক্ষণাবেক্ষণে তার যে পরিমাণ সময় ও শ্রম দেয়া লাগতো, তা জানলে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। বর্জিয়ার চুলগুলো ছিল বেশ উজ্জ্বল ও সোনালী বর্ণের। তবে একটু আগেই আলাপ করা ভেসপুচ্চির মতো তিনি জন্মগতভাবে স্বর্ণকেশী ছিলেন না।

তার পরিবারের অন্য সবার চুলই ছিলো ঘন কালো রঙের। তবে বর্জিয়ার পছন্দ ছিলো সূর্যের আলোয় চকচক করে ওঠা সোনালী চুল। এজন্য লেবুর রস ও একপ্রকারের ক্ষারের সাহায্যে নিজের চুলগুলোকে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগিয়ে ধুতেন তিনি। পরে দিনের বাকি সময় ধরে আবার সূর্যালোকের বসেই চুলগুলো শুকানো লাগতো। তার এই চুলের পরিচর্যায় এতটাই সময় যেত যে, মাঝে মাঝেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে তাকে শুধুমাত্র চুলের যত্নের জন্য। তার সহচরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন চিঠি আজও টিকে আছে। সেসব চিঠিতে তাকে বিভিন্নজনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেছে এই বলে যে, তার যেতে কয়েকদিন সময় লাগবে, কারণ কাপড়গুলো গোছাতে হবে এবং মাথা পরিষ্কার করতে হবে।

About reviewbd

Check Also

লতা-পাতা নয়, চা-সিগারেট খাচ্ছে ছাগল, ভাইরাল ভিডিও

প্রায় ৩০০ প্রজাতিরও বেশি ছাগল রয়েছে। এটা গৃহপালিত প্রাচীনতম প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে একটি, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *