‘আপু রিমোট আমাকে দাও, আমি কার্টুন দেখব’ আমার বোন বলল। ‘যা তো বিরক্ত করিস না, বাইরে গিয়ে খেলা কর’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই পিচ্চিটা আমাকে চিমটি কেটে পালাতে চাইল! আমিও কি কম? তক্ষুনি পিঠে দুমদুম করে কিল বসিয়ে দিলাম!
একটু পরেই বাইরে থেকে ওর গলার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে এলাম। দেখি, পাড়ার কিছু দুষ্টু ছেলে ওকে মারতে চাইছে। আমি কি আর চুপ থাকতে পারি? সবাইকে বলে দিলাম, ‘আমার বোনকে কেউ মারবে না, আর ও-ই আগে ব্যাট করবে হুহ!’
পিচ্চি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল, নিশ্চয় বলতে চাইছে, ‘তুমিই না আমার ওপর প্রতিদিন বক্সিং প্র্যাকটিস করো, আর ওরা মারলেই দোষ!’
ও কি বুঝবে আমি কত্ত ভালোবাসি ওকে, আমার বোনকে আমি যা খুশি করব, অন্যরা নয়!
ভাইবোনের খুনসুটি সারাক্ষণ লেগে থাকলেও ভালোবাসার কমতি নেই কিন্তু। ভাইবোনের ভালোবাসার দারুণ এক দৃষ্টান্ত হয়ে রইল ব্রিজার ওয়াকার। বয়স তার মাত্র ছয়। তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইয়োমিং অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। ৯ জুলাই ব্রিজার আর তার ছোট বোন বন্ধুর বাড়িতে খেলছিল, এ রকম সময় এক হিংস্র কুকুর ওর বোনকে আক্রমণ করতে আসে। ভীষণ বিপদের এই সময়ে ব্রিজার বোনকে বাঁচাতে সামনে এসে দাঁড়ায়। বোনকে পালাতে বলে নিজে কুকুরটার সঙ্গে লড়াই করে। এতে করে মুখ আর মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় সে। প্রায় ২ ঘণ্টা অপারেশন করে ৯০টা সেলাই দিতে হয় ব্রিজারকে।
এত কিছুর পরও সাহসী ব্রিজার অনেক খুশি যে সে তার আদরের বোনকে শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পেরেছে। এই ঘটনা তার চাচি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলে হাজার হাজার মানুষ ব্রিজারের সাহসের প্রশংসা করে। যেখানে ভয়ংকর দর্শনের জার্মান শেফার্ড কুকুর দেখে বড়রাই ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়, সেখানে এত ছোট বাচ্চার সাহসে সবাই বিস্মিত।
এমনকি টিভি পর্দার সুপার হিরোরাও ওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন! ক্যাপ্টেন আমেরিকা খ্যাত ক্রিস ইভানস ব্রিজারকে সত্যিকার সুপারহিরো আখ্যায়িত করে স্পেশাল মেসেজ পাঠিয়েছেন। বলেছেন, ‘ব্রিজার, তোমার বোনের খুব সৌভাগ্য যে তোমার মতো এমন সাহসী ভাই পেয়েছে, তোমার মা-বাবার তোমাকে নিয়ে গর্ব করা উচিত।’
ব্রিজারকে ক্রিস একটা খাঁটি ক্যাপ্টেন আমেরিকা শিল্ডও দিয়েছেন। ‘আয়রনম্যান’ রবার্ট ডাউনি জানিয়েছেন, ব্রিজারের জন্মদিনে দারুণ এক উপহার দেবেন তিনি, যা ক্যাপ্টেন আমেরিকা শিল্ডকেও হার মানাবে!
ব্রিজার একই সঙ্গে মার্ভেলের হাল্ক, উলভেরিনের রোল প্লে করা বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শুভেচ্ছা পেয়েছে। ব্রিজারকে টম হল্যান্ড স্পাইডারম্যান-৩-এর সেট দেখে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন! এমনকি অ্যাভেঞ্জার্স খ্যাত ক্রিস হেমসওয়ার্থ থেকেও প্রশংসা পেয়েছে সে। বিশ্ব বক্সিং কাউন্সিল তার সাহসিকতার জন্য তাকে সম্মানিত করেছে ‘অনারারি চ্যাম্পিয়ন’ বেল্ট উপহার দিয়ে।
এই ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন ব্রিজারের বাড়িতে চেনা-অচেনা মানুষের শুভেচ্ছাবার্তাসহ উপহার আসছে। তাকে নিয়ে ছবি আর মাঙ্গাকার্টুনও এঁকে পাঠাচ্ছেন কেউ কেউ।
সিনেমার সুপারহিরোরা ব্রিজারকে ‘বাস্তবের সুপারহিরো’ বলেছেন। ব্রিজার হতে পারে আমাদের সবার অনুপ্রেরণা। সারা দিন ঝগড়া লেগে থাকলেও সত্যিকার বিপদের সময় যেন আমরা ভাইবোনের পাশেই থাকি।