ইসরাত জাহান তুষ্টি। পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে। তাকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার আগেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে মেধাবী এ শিক্ষার্থী।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সুখারী ইউনিয়নের ধর্মরায় রামধন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী মির্জা।
এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ হলেও থেমে যাননি তুষ্টি। অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ইংরেজি বিভাগে অনার্স করছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ায় তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন গোটা এলাকাবাসী।
এ নিয়ে তুষ্টির বাবা আলতাফ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ছোট চাচা প্রভাষক ইমাম হোসেন মেহেদী বলেন, ছোটবেলা থেকেই তুষ্টির পড়াশোনার যাবতীয় খোঁজখবর আমি রাখতাম। সেও আমার সঙ্গে যোগাযোগ ও পরামর্শ করত। সপ্তাহখানেক আগেও মোবাইলে আমার সঙ্গে তুষ্টির কথা হয়। এ সময় আমি তাকে ভালোভাবে পড়াশোনা করার তাগিদ দিলে সে বলে, ‘আমি ঠিকমতোই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি, কাকা’।
এরপর আর কোনো কথা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তুষ্টিকে নিয়ে আমরা পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী ও তার স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা অনেক বড় স্বপ্ন দেখতাম। সে লেখাপড়া শেষ করে বড় মাপের একজন সরকারি কর্মকর্তা হবে। সেই স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার আগেই সে লাশ হয়ে বাড়ি আসছে। এ কষ্ট প্রকাশ করার মতো না।
এদিকে, ঢাকায় ময়নাতদন্ত শেষে গাড়িতে করে মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তুষ্টির ছোট চাচা মোফাজ্জল হোসেন। এ সময় তুষ্টিকে শেষ বিদায় জানাতে লাশবাহী গাড়ির কাছে এসে ভিড় করেন তার বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তুষ্টির সহপাঠী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী রুমানা তাবাসসুম রাফিসহ অনেকেই।
তুষ্টির লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা তার চাচা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে এখন তুষ্টির মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। রাতেই বাড়িতে পৌঁছে যাব। আগামীকাল সোমবার সকালে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে তুষ্টিকে দাফন করা হবে।