তরুণ ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিনের মাথায় উদ্ধার হয়েছেন। শুক্রবার (১৮ জুন) ফিরে আসেন তিনি। জানা যায়, নিখোঁজের এই আট দিন আত্মগোপনে ছিলেন তরুণ এই বক্তা।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান আটদিন তার বন্ধু সিয়াম ইবনে শরিফের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। এসময় তার তিনজন বন্ধু আবদুল মুহিত, ফিরোজ আলম এবং আমির উদ্দিনও ছিলেন। সিয়াম বোয়ালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মাজেদ খানের ভাতিজা।
শনিবার (১৯ জুন) দুপুরে পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিয়ামের আধা-পাকা টিনসেট ঘর। ঘরটি সুসজ্জিত। বাড়ির সামনে ফাঁকা। নির্জন বাড়ি। এই বাড়িতে একাই থাকেন সিয়ামের মা নিশাত নাহার। সিয়ামের বাবা শরিফ নেওয়াজ খান ঢাকার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে চাকরি করতেন। এক বছর আগে তিনি মারা যান। শরিফ নেওয়াজ খানের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে সুমাইয়া বিনতে শরিফের বিয়ে হয়েছে। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার টঙ্গীতে থাকেন।
সিয়াম রংপুরের লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে লেখাপড়া করেন। একই কলেজে পড়তেন আবু ত্ব-হা আদনান। লেখাপড়ার সূত্রে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে সিয়াম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাশ করেন। সিয়াম বর্তমানে রংপুর নগরের কামাল কাছনা এলাকায় তার শ্বশুর বাড়ি রয়েছেন। গত ১ মার্চ সিয়াম রংপুরের একটি মোবাইল কোম্পানিতে চাকরিতে যোগদান করেন। তখন থেকে সে সেখানে রয়েছে। সিয়ামের এক ছেলে। তার নাম মোহাম্মদ ইবনে সিয়াম। বয়স ১০ মাস। স্ত্রী সানজিদাকে নিয়ে সিয়াম এখন রংপুরে। আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান তিন বন্ধুসহ সিয়ামের গ্রামের বাড়ি অবস্থান করলেও ওই সময় সিয়াম বাড়ি আসেননি।
শনিবার দুপুরে সিয়ামের মা নিশাত নাহার বলেন, গত ১১ জুন শুক্রবার দুপুরে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান তার তিনজন বন্ধুকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন। সে গত ১১-১৮ জুন পর্যন্ত আমার বাড়ি ছিল। শুক্রবার সকালে সে তিন বন্ধুকে নিয়ে রংপুরে চলে যায়। আসার সময় সে একটি প্রাইভেটকারে আসে। গাড়িটি তাদেরকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। শুক্রবার (১৮ জুন) সকালেও একই গাড়ি এসে তাদের নিয়ে যায়। আবু ত্ব-হা আমার বাড়ি আটদিন ছিল। সে এসেই ঘরে উঠেছে আর যাবার সময় ঘর থেকে বের হয়েছে। এ সময়ে সে কখনো বাড়ির বাইরে যায়নি। তার বন্ধুরাও বাড়ির বাইরে যায়নি। ঘরের ভিতর তারা নামাজ-কালাম পড়ে সময় কাটিয়েছে।
তারা কেন এসেছিলেন জানতে চাইলে সিয়ামের মা নিশাত নাহার বলেন, আমার বাড়ি এসেই আবু ত্ব-হা আমাকে বলে, আনটি আমাকে কেউ ফলো করছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আপনার এখানে কয়েকদিন থাকব। আমি বললাম, থাক অসুবিধা কি। এর আগেও সে একাধিকবার আমার বাড়ি এসেছে। তিনি বলেন, আমি তিন বেলা তাদের খাবার তৈরি করে দিয়েছি। তারা ঘরেই দিনরাত থাকতো। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
এদিকে আবু ত্ব-হাদের সিয়ামের বাড়ি থাকার বিষয়টি গ্রামের মানুষ জানতেন না। আশপাশের বাড়ির লোকজনও তেমন জানতেন না। তবে পাশের বাড়ির আসিব নামের এক তরুণ জানায়, গত ১১ জুন আসার দিন আমি ওই বাড়ি একটি গাড়ি ঢুকতে দেখেছি। এরপর তারা কতদিন সেখানে ছিল তা জানি না। কি জন্য এসেছে সেটাও জানি না।