লক্ষ্মীপুরে ঢিলেঢালা লকডাউনে দোকানপাট ও পোশাকবিতানগুলো খোলা দেখা গেছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও প্রাইভেট শিক্ষকদের বাসা-বাড়ি থেকে ব্যাগ কাঁধে বের হতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। করোনার শুরু থেকে দেশব্যাপী স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে লক্ষ্মীপুরে কিছু সরকারি শিক্ষক তাদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করেননি। যাদের প্রতিটি ব্যাচে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থীর মিলন ঘটে।
সোমবার (২৮ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের সামনে থেকে চকবাজার পর্যন্ত দোকানপাট খোলা ও ব্যাগ কাঁধে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছ থেকে আসায় শিক্ষার্থীদের দলবদ্ধ দেখা গেছে। রিকশা ব্যতীত অন্যান্য যান চলাচলে নিষেধ থাকলেও ব্যাটারিচালিত ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। বাজারে আসা জনসাধারণের মুখে মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে।
এদিকে, চকবাজারসহ পুরো শহরেই ম্যাজিস্ট্রেট আসার আগ পর্যন্ত পোশাকবিতানগুলো খোলা দেখা গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট আসতেই দোকানের শাটার নামিয়ে ফেলা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামালের মার্কেটেরও দোকানগুলোও খোলা ছিল। এছাড়া কয়েকটি দোকানে দেখা যায়, অর্ধেক শাটার নামানো, ভেতরে বিক্রেতারা বিকিকিনিতে ব্যস্ত। ক্রেতাদের উপস্থিতিও সরব।
অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ভোলা-বরিশাল থেকে আসা দুই শতাধিক যাত্রী মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটে আটকা পড়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, সবশেষ সোমবারের ফলাফলে ১৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় গত কয়েকদিন ১৭৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০৬, রায়পুরে ৩২, রামগঞ্জে ১৬, কমলনগরে আট ও রামগতি সাতজন হোমআইসোলেটেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া সদর হাসপাতালে ছয়জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কয়েকজন দোকানি জানান, করোনার শুরু থেকেই তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সামনে ঈদ, এসময় লকডাউনে দোকান বন্ধ করে নতুন করে বিপাকে পড়তে হবে। এজন্য বাধ্য হয়ে দোকান খুলতে হচ্ছে। তবে প্রশাসনের লোকজনের ভয় রয়েছে, তাদের হাতের ধরা পড়লেই জরিমানা গুনতে হয়। কিন্তু দোকান বন্ধ রেখে বাড়িতে বসে থাকলে, কেউ কি তাদের খাবার দিয়ে আসবে-এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন কয়েকজন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, করোনার শুরু থেকেই পড়ালেখা বন্ধ। এতে তাদের মেধা দুর্বল হয়ে পড়ছে। এছাড়া স্কুল-কলেজে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হয়। পড়ালেখা বন্ধ থাকলে তা দেওয়া সম্ভব না। এজন্য শিক্ষকদের কাছে নিয়মিত প্রাইভেট পড়েন। মাঝে কয়েক মাস প্রাইভেট বন্ধ ছিল বলে জানান তারা।
লকডাউনে নির্দেশনা দিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হুছাইন আকন্দ প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, পণ্যবাহী পরিবহন ও রিকশা ব্যতীত সকল গণপরিবহণ বন্ধ। শপিং মল, মার্কেট, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে খাবার অর্ডার দিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেওয়া করতে হবে। জনসাধারণকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করে এসব আইন না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।