আমি কালো ছেলে দুইদিন টিউশনি করানোর পর তৃতীয় দিন ছাত্রীর মা আমায় ডেকে আমার হাতে একটা…

আমি কালো ছেলে দুইদিন টিউশনি করানোর পর তৃতীয় দিন ছাত্রীর মা আমায় ডেকে আমা’র হাতে একটা খাম দিয়ে বললো, – কাল থেকে তোমা’র আর আমা’র মেয়েকে পড়াতে হবে না। তুমি দুই দিন আমা’র মেয়েকে পড়িয়েছো।

আমি তোমাকে ১ মাসেরই টাকা দিলাম। আমি অবাক হয়ে ছাত্রীর মাকে বললাম, — আন্টি কিছু মনে না করলে জানতে পারি আমা’র অ’পরাধটা কি? আন্টি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,

– না, তোমা’র কোন অ’পরাধ নেই। এমনিতেই তোমাকে আসতে হবে না। আমি তখন ছাত্রীর মাকে বললাম, — আন্টি আমি আপনার মেয়েকে ১ মাস পড়াই। তারপর যদি আপনার মনে হয় আমি আপনার মেয়েকে ঠিক মত পড়াতে পারছি না; তখন না হয় আমাকে বাদ দিয়ে দিবেন।

আমা’র আপ’ত্তি থাকবেনা। এইবার ছাত্রীর মা আমা’র দিকে তাকিয়ে বললো, – আসলে আমা’র মেয়ে তোমা’র কাছে পড়তে চাচ্ছে না। শুধু ভালো পড়ালেই হয় না একটু দেখতে শুনতেও ভালো ‘হতে হয়। তোমায় দেখলে না কি আমা’র মেয়ে ভয় পেয়ে যায়… আমি আন্টির হাতে খাম দিয়ে বললাম, — টিউশনি করাতে হলে যে ফর্সা ভালো চেহারার অধিকারী ‘হতে হয় তা আগে জানতাম না।

যদি জানতাম তাহলে বিশ্বা’স করেন আমি আপনার মেয়েকে পড়াতে আসতাম না… ছাত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটছি আর কলেজ জীবনের কথা ভাবছি। কলেজে একবার একটা অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার জন্য স্যার ভালো একজন উপস্থাপক খুঁজছিলেন। আমি সবার সামনে হাত তুলে বলেছিলাম, – স্যার, আমি ভালো উপস্থাপনা করতে পারি।

স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি উপস্থাপনা করতাম.. স্যার আমা’র ভালো করে দেখে হাসতে হাসতে বলেছিলো, — তোর মত কাউয়া(কাক) যদি উপস্থাপনা করে তাহলে অনুষ্ঠানে যে কয়জন মানুষ আসবে সেই মানুষগু’লোও পালাবে… স্যারের এই এক কথাতে রাতারাতি আমা’র নাম আবুল বাশার পিয়াস থেকে “কাউয়া বাশার পিয়াস” হয়ে গিয়েছিলো। তখন আর কেউ আমায় আবুল বাশার পিয়াস নামে চিনতো না। সবাই চিনতো “কাউয়া পিয়াস” নামে… কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যাচ্ছিলাম। আমা’র পাশের সিটে বসেছিলো সুন্দরী একটা মেয়ে।

আমি যখন আমা’র সিটে বসতে যাব’ো তখনি মেয়েটা নাক মুখ ওড়না দিয়ে চেপে ধরলো। বাস কিছু দূর যাব’ার পরেই মেয়েটা বাসের কন্ট্রাক্টরকে ডেকে বললো, – আমায় এই সিটটা পাল্টে দেন তো। আমি অন্য কোথাও বসবো। বাসের কন্ট্রাক্টর আমা’র দিকে অ’গ্নি দৃ’ষ্টি নিয়ে তাকালো। তারপর মেয়েটাকে বললো, — আপা, এই লোকটা কি আপনার সাথে অ’সভ্যতামি করেছে?

যদি কোনোরকম কিছু করে থাকে তাহলে বলেন। আমি এখনি লোকটাকে বাস থেকে নামিয়ে দিতেছি। কন্ট্রাক্টরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে বাসের অন্য সব যাত্রীরা আমা’র উপর ‘ক্ষেপে উঠলো। একজন লোক চিৎকার করে বললো, ~ অবশ্যই নোং’রামি করেছে। তা না হলে আপা সিট ছেড়ে উঠতে যাব’ে কেন। এক ভদ্রমহিলা মুখ বাঁকিয়ে বললো, ~ চেহারা দেখেই বুঝা যায় বদমাইশ টাইপ। এইসব কুলাঙ্গারদের জন্য মেয়েদের রাস্তাঘাটে চলাচলই এখন দায় হয়ে পড়েছে। এমন একটা অবস্থা হয়ে পড়েছিলো যে বাসের সবাই মিলে এখন আমায় মা’রতে আসবে।

আমি বহু ক’ষ্টে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে বললাম, — আপনি আমা’র ছোট বোনের মত। আমি কি আপনার সাথে কোন নোং’রামি করেছি? মেয়েটা মাথা নিচু করে বললো, – না। আমি তখন বাসের যাত্রীদের বললাম, — ভাই আমা’র অ’পরাধ কি জানেন? আমা’র অ’পরাধ হলো আমি দেখতে কালো। আপনাদের মত সাদা চামড়ার কিছু মানুষ মনে করে আমা’দের মত কালো মানুষের গা থেকে গন্ধ বের হয়। আপনাদের ধারণা পৃথিবীর সমস্ত খারাপ মানুষ কালোই হয়৷ যে ভদ্রমহিলা আমায় বদমাইশ, কুলাঙ্গার বলেছিলো সেই মহিলার কাছে গিয়ে বললাম, — আপনি আমা’র চেহারা দেখেই বুঝে গেলেন আমি বদমাইশ। বিশ্বা’স করেন আমি কোনো বদমাইশি করছি তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে খারাপ দৃ’ষ্টিতে তাকাছি পর্যন্ত না। কিন্তু কেন জানি না এই মুহূর্তে আপনার সাথেই আমা’র বদমাইশি করতে ইচ্ছে করছে… | |

নিউমা’র্কেট এসেছিলাম কিছু শপিং করতে। এমন সময় আমা’র রুমমেট রাকিব ফোন দিয়ে বললো, – মেসে আসার সময় দোকান থেকে আমা’র জন্য একটা ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম ক্রিম নিয়ে আসিস তো। আমি তোকে পরে টাকা দিয়ে দিবো। রাকিবের কথা মতন কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে ক্রিমের কথা বলতেই দোকানের ছেলেটা আমায় দেখে মুচকি হাসলো। তারপর আমা’র হাতে ক্রিমটা দিতে দিতে বললো, – শুধু শুধু ভাই টাকা গু’লো জলে ফেলবেন। আপনার যে কালার আপনাকে যদি ৩ দিন ৩ রাত হুইল পাউডার দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়; তবুও আপনার কালারের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না।

দোকানের ছেলেটার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ওর গালে একটা সজোরে থাপ্পড় মা’রি কিন্তু ওরই বা কি দোষ। দোষ তো আমা’র বাবা মা’র। কারণ উনারা আমাকে জন্ম দিয়েছে। দোকান থেকে বের হয়েই মাকে ফোন দিলাম। মা ফোনটা রিসিভ করতেই আমি মাকে বললাম, — মা, শুনেছি বাবা মা কোনো পাপ করলে তার দায়ভার কিছুটা সন্তানের উপর এসে পড়ে৷ তোমর’া কি কোনো পাপ করেছিলে যার ফল স্বরূপ তোমা’দের ঘরে আমা’র মত একটা কালো ছেলে জন্ম নিলো। মা আমা’র কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো, -তুই আবার তোর গায়ের রঙ কালো দেখে মন খারাপ করছিস? তুই কালো দেখে কি হয়েছে।

তুই আমা’র কাছে সোনার টুকরো ছেলে। মা কেঁদে দিয়েছিলো দেখে আমি মাকে হাসানোর জন্য বললাম, — দেখলে মা তুমিও আমায় তেমন ভালোবাসো না। যদি ভালোবাসতে তাহলে সোনার টুকরো না বলে হীরের টুকরো বলতে। আমা’র কথা শুনে মা হাসতে হাসতে বললো, – তুই আমা’র কোহীনূর হীরার টুকরো ছেলে… | | সবাই আমাকে কালো বলে দূরে সরিয়ে রাখলেও মা বাবার দোয়া সবসময় আমা’র সাথেই ছিলো। আর সে জন্যই হয়তো আমি খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছি। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই আমা’র উপর বাবা মা অ’ত্যাচার করা শুধু করলো বিয়ের জন্য। আমিও বিয়ে করবো বলে রাজি হয়েছি তবে একটা শর্ত দিয়েছি। বিয়ে করলে আমি কালো কোন মেয়েকেই করবো। আজ মেয়ে দেখতে যাব’ো। মাকে ডেকে বললাম, – মেয়ে কালো তো? মা বললো, — আমি মেয়েকে এর আগেও দেখেছি। মেয়ের গায়ের রঙ কালোই।

কিন্তু আজ আমর’া দেখতে যাব’ো বলে মেক-আপ করে হয়তো সুন্দরী হয়ে যাব’ে। তবে চিন্তা করিস না। মুখ ধোঁয়ার পর মেয়ে আবার কালো হয়ে যাব’ে… আমর’া ড্রয়িং রুমে বসে আছি মেয়ে দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর মেয়ে আসলো। মেয়েকে দেখেই কয়েক মিনিটের জন্য আমি ‘হতভম্ব হয়ে গেলাম। একটা মেয়ে কি করে এত সুন্দর ‘হতে পারে। ভালো করে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখে কোন মেকাপ নেই। শুধু চোখে হালকা একটু কাজল আছে। মেয়ে দেখা শেষ হলে আমি মাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললাম, — মা, তুমি না বলেছিলে মেয়ে কালো। এই মেয়ে তো দেখছি বেজায় সুন্দরী।

শুধু সুন্দর না ভ’য়ং’কর রকম সুন্দরী। তোমায় আগেই বলেছিলাম আমি, নিজে যেমন ঠিক তেমন মেয়েই বিয়ে করবো। আমা’র কথা শুনে মা বললো, -আরে মেয়ে সুন্দর না। মেক-আপ করেছে তো তাই সুন্দর লাগছে। আমি মায়ের হাতটা ধরে বললাম, — কেন শুধু শুধু মিথ্যা বলছো মা। মেয়ে কোনো মেক-আপ করে নি। এত সুন্দর একটা মেয়ে।হয়তো ও চাইবে ওর হাজবেন্ড যেন খুব সুদর্শন হয়। আমা’র সাথে বিয়ে হলে দেখা যাব’ে মেয়েটার লাইফটাই ন’ষ্ট হয়ে গেছে। আমা’র সাথে একটা সেলফি তুলতে পারবে না। বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ল’জ্জা পাবে। একসাথে ঘুরতে লাজ্জা পাবে। আমা’র কথা শুনে মা কাঁদতে কাঁদতে বললো, – তুই কালো হয়েছিস দেখে কি একটা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারবি না? আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, — না পারি না মা।

একটা সুন্দরী মেয়ে কখনোই একটা কালো ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না। যদি কখনো বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে ভেবে নিবে হয় মেয়েটা বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। নয়তো কালো ছেলেটার খুব ভালো ক্যারিয়ার আছে সেজন্য রাজি হয়েছে… দুপুরে অফিসে বসে কাজ করছি। এমন সময় একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই অ’পর প্রান্ত থেকে একটা মেয়ে বললো, – আমি শ্রাবণী। কাল আপনারা যে মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলেন আমিই সেই মেয়ে।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, –আপনি আমায় হঠাৎ ফোন দিলেন যে? মেয়েটি তখন বললো, – আমি আপনার অফিসের নিচে। দয়া করে একটু আসবেন? আপনার সাথে আমা’র জরুরী কিছু কথা আছে…. একটা রেস্টুরেন্টে আমি আর মেয়েটি বসে আছি। রেস্টুরেন্টের অনেকেই আমা’দের হা করে দেখছে। আমি চেয়েছিলাম রেস্টুরেন্ট বাদে অন্য কোথাও বসতে কিন্তু মেয়েটিই আমায় জোর করে এইখানে নিয়ে আসলো। কফির মগে মেয়েটি চুমুক দিতে দিতে আমায় বললো, — সত্যি বলতে আপনাকে আমা’র প্রথম দেখাতে ভালো লাগে নি। কিন্তু আড়লে যখন আপনি আপনার মায়ের সাথে কথা বলছিলেন আমি আপনার সব কথা শুনে নিয়েছিলাম। তারপর থেকেই আপনাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি।

১ মিনিটের কথা শুনে যে কাউকে ভালোবেসে ফেলা যায় সেটা যদি আমা’র সাথে না ঘটতো তাহলে আমি হয়তো কখনোই বিশ্বা’স করতাম না। আমি মাথা নিচু করে বললাম, — তারমানে আপনি আমায় করুণা করছেন? মেয়েটি কফির মগটা রেখে আমা’র হাতধরে বললো, – আমায় একটাবার সুযোগ দাও। আমি তোমায় এতটাই ভালোবাসবো যে মেয়েদের সম্পর্কে তোমা’র ধারণাটাই পাল্টে দিবো…. ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বসে আছি। এমন সময় দেখি ডাক্তারের চেম্বার থেকে আমা’র ছাত্রী পিহু আর ওর মা বের হচ্ছে। আমি আন্টিকে সালাম দিয়ে বললাম, — আন্টি আমায় চিনতে পেরেছেন? আমি আপনার মেয়েকে দুইদিন পড়িয়েছিলাম। কিন্তু ৩ দিনের দিন আমায় বের করে দিয়েছিলেন। আন্টি তখন বললো, – হ্যাঁ।

চিনতে পেরেছি.. এমন সময় রুম থেকে শ্রাবণী এসে বললো, – সরি সরি, আজ রোগীর খুব চাপ ছিলো তাই দেরি হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ ধরে অ’পেক্ষা করছো। তাই না? আমি তখন আন্টিকে বললাম, –আন্টি, আমা’র স্ত্রী শ্রাবণী। আর শ্রাবণীকে বললাম, – ও হলো পিহু। একসময় আমা’র ছাত্রী ছিলো। শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো, — হ্যাঁ আমি জানি ওর নাম পিহু। আমিও ওর ট্রিটমেন্ট করছি। আন্টি আর পিহু আমা’দের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। আমি হেঁটে যেতে যেতে শ্রাবণীকে বললাম, — পিহুর কি হয়েছে? শ্রাবণী বললো, – এক টিচারের সাথে ওর শারিরীক সম্পর্ক ছিলো।

পরে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। কোন ক্লিনিকে যেন এভরসন করিয়েছে। এখন বিয়ের পর আর বাচ্চা হচ্ছে না… হঠাৎ শ্রাবণী দাঁড়িয়ে বললো, – ঐ, এই টিচারটা তো কোনোভাবে তুমি নাতো? আমি রেগে গিয়ে বললাম, — আমি কেন ‘হতে যাব’ো?আমি কালো বলেই তো আমাকে ৩ দিনের দিন বের করেই দিয়েছিলো। আমা’র কথা শুনে শ্রাবণী হাসতে হাসতে বললো, – নীল শার্টে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে। আমি মাথা নিচু করে বললাম, — কাউয়ার মত লাগছে… আমা’র কথা শুনে শ্রাবণী আমা’র হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, – যে ছেলে নিজে নিজেকে সম্মান করে না;তাকে মানুষে কিভাবে সম্মান করবে.. শ্রাবণী রাগ করে একা একা হাঁটছে। আর আমি ওর পিছু পিছু যাচ্ছি আর ভাবছি, কালো কল’ঙ্কের দাগ হলেও মাঝে মধ্যে কালোকে বাদে সাদাকে অ’সম্পূর্ণ লাগে..

About reviewbd

Check Also

বাংলাদেশের ইলিশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কলকাতাবাসী

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে শুক্রবার থেকে কলকাতার বাজারে আসতে শুরু করেছে বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশের ইলিশ। তবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *