বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌঁনে ২টা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা-বাগুর বাসস্টান্ডে দাঁড়িয়ে ঢাকাগামী যাত্রী উঠাচ্ছিলেন এক প্রাইভেটকার চালক। সংবাদকর্মীদের ক্যামেরা দেখে যাত্রী তোলা বন্ধ করে দ্রুত স্থান ত্যাগের চেষ্টা তার। সংবাদকর্মীরা তার গাড়ির সামনে থাকায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
গাড়িতে তখন এক নারীসহ তিন যাত্রী। হাতে একটি এক্স-রে রিপোর্ট ফাইল। তারা কোথায় যাবেন, কোন জায়াগা থেকে উঠেছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওই নারী যাত্রী আমার স্ত্রী, আর তারা দুজন (পুরুষ যাত্রী) আমার ভাই।’ ড্রাইভারের এমন উত্তরে ক্ষুব্ধ হয়ে নারী যাত্রী বলে ওঠেন, ‘এই ড্রাইভার, কি যা-তা বলছেন।’
ওই নারী যাত্রী বলেন, ‘না ভাই, আমি আমার ভাইকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। ক্যান্টনমেন্ট থেকে এক হাজার টাকা করে দুই হাজার টাকা ভাড়ায় তার গাড়িতে উঠেছি। আর সামনেরজন (চালকের সঙ্গে বসা যাত্রী) এখান থেকে উঠেছেন।’
ওই নারীর তথ্যের পর মুখে খুললেন চালক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে কোন রিজার্ভ ভাড়া নেই। আমার সঙ্গের কয়েকজন ড্রাইভার গাড়ির সামনে স্টিকার লাগাইয়া ভাড়া টানে। তাদের দেইখা আমিও নামছি। সোমবার প্রথম দিনই যাত্রাবাড়ি থেইক্কা তিন যাত্রী ছয় হাজার টাকায় ফেনী রিজার্ভ ভাড়া পাইছি। ওই দিনই কুমিল্লাসহ ঢাকায় কয়েকটা ট্রিপ মাইরা ২৬ হাজার টাকা পাই। গ্যাস ও মালিক খরচ দিয়া আমার ১৫ হাজার থাকে। তারপর থেইক্কা প্রতিদিনই এই রোডে গাড়ি চালাই।’
পুলিশ আটক করে না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গাড়িতে একটি এক্স-রে কাগজ ও প্রেসক্রিপসন রাখছি। যাত্রীরা উঠলেই তাদের হাতে ধরাইয়া দেই। পুলিশ ধরলে যাত্রীরা রোগীর কথা বললে ছাইড়া দেন।’
জানা যায়- সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পান মিজানুর রহমানের মত প্রাইভেট পরিবহনের অনেক চালক। ‘কঠোর লকডাউনে’ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারই তখন হয়ে উঠে গণপরিবহন।
করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউন’ উপেক্ষা করে যাত্রী পারাপারে ব্যস্ত সময় পার করেন তারা। প্রাইভেটকারে যাত্রী নিয়ে ঢাকা-ফেনী-কুমিল্লা রুটে যাতায়াত করে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করেন ওই চালকরা। যা স্বাভাবিক সময়ে এক সপ্তাহেও আয় করা কঠিন।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ ময়নামতি ক্রসিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, এমন তথ্য আমাদের জানা ছিল না। এখন থেকে আমরা রোগীর কাগজপত্রও খতিয়ে দেখবো এবং প্রাইভেট পরিবহন বা অ্যাম্বুলেন্সের উপর নজর বাড়াবো।