স্বাভাবিকভাবে দেখতে গেলে মনে হয় আপনি ভালোই আছেন। তবে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন তো? তখনই বুঝতে পারবেন আপনি আসলেই অনেকক্ষেত্রে সুখী নন।
প্রতিদিনের এই একঘেঁয়ে জীবন নিশ্চয় আর ভালো লাগছে না? কিন্তু জানেন কি, এই একঘেয়ে জীবন ধীরে ধীরে আপনাকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কীভাবে? চলুন তবে জেনে নেয়া যাক এমন দশটি লক্ষণ যেগুলো আপনাকে ধীরে ধীরে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে-
১. কোন কিছুই আপনাকে আগ্রহী করে তোলে না
আপনি মনে করেন যে, পৃথিবীতে এমন কোনো বিষয় নেই যা আপনাকে অবাক করে দিতে পারে। এমনকি আপনি কোনো সংবাদ শোনার পর ভ্রূ কুঁচকিয়ে বিস্ময়ের প্রতিক্রিয়া জানান। এভাবে ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ভালো কিছু নয়।
২. আপনি নিজের বা বাড়ির ব্যাপারে যত্নশীল নন
আপনি নিজের প্রতি যত্ন নিতে পারেন না এবং গত মাসে শেষ বারের মতো বাড়ি পরিষ্কার করেছিলেন- তাহলে এটি আপনার ব্যক্তিগত সংকটের একটি স্পষ্ট লক্ষণ। আপনার শরীর এবং চারপাশের পরিবেশের উদাসীনতা শুধুমাত্র বলে যে, আপনার জীবন ভালভাবে যাচ্ছে না। আর আপনি সেটিই মেনে নিয়ে সব কিছু ছেড়ে দিয়েছেন।
অনেকেই বলে থাকে, আপনি যদি জীবনে পরিবর্তন চান তাহলে সেটা আপনার ঘর থেকে শুরু করা উচিৎ। এর পিছনে একটি কারণ আছে। পরিষ্কার থাকা জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরী। এটা আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখবে এবং আপনার মাথা থেকে জগাখিচুড়ি চিন্তা দূর করতে সহায়তা করবে।
৩. আপনি আপনার জবকে অপছন্দ করেন
কার্যদিবস মাত্র শুরু হয়েছে এবং আপনি ইতোমধ্যেই সময় গণনা করছেন এবং কাজ শেষ করার জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনার জবের প্রতি ঘৃণা জন্মানো কিছু পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। আপনি সম্ভবত আপনার বিরক্তিকর ভূমিকা, বিরাগপূর্ণ সহকর্মীদের পছন্দ করেন না বা শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করতে পছন্দ করেন না। আপনি যদি আপনার অপছন্দের কারণ বুঝতে পারেন তাহলে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা আপনার পক্ষে সহজ হবে।
৪. আপনি যোগাযোগ করতে অস্বীকার করেন
প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত স্থানের প্রয়োজন হয়। তবে যদি একেবারে কাউকে দেখতে বা শুনতে চান না, বন্ধু এবং আত্মীয়দের এড়িয়ে চলেন এবং সামাজিক নেটওয়ার্কে ব্রাউজ করার জন্য ‘অজ্ঞাত’ মোডে যান, তাহলে বুঝতে হবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
৫. সব কিছুতেই আপনি রেগে যান এবং বিরক্ত হন
আপনি সবকিছুতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন বা রেগে যাচ্ছেন, তার মানে এই আপনি সহজেই আপনার মেজাজ হারিয়ে ফেলেছেন এবং কান্না করা থেকে শুরু করে প্রচন্ড ক্রোধে কিছু করছেন বা ভাঙ্গছেন।
৬. আপনার মধ্যে অনেকগুলো খারাপ অভ্যাস থাকা
সমস্যা সমাধান করার অন্য উপায় হিসেবে আপনি হয়তো মদ, সিগারেট, অতিভোজন বা মধ্যরাতে ব্রাউজিং করার মতো খারাপ অভ্যাসের সাহায্য নিচ্ছেন। কিন্তু এগুলো আপনার জীবনে সমস্যা সমাধানে কাজে দিবে না, শুধু চেহারায় পরিবর্তন আনবে।
৭. অতীত নিয়ে পড়ে থাকা বা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখা
আপনি মনে করেন যে, পুরানো স্মৃতির মধ্যে থাকা ভাল এবং পুরানো স্মৃতিগুলো মনে করতে থাকেন। অথবা বিপরীতে, আপনি মনে করেন ‘আগামীকাল ভাল হবে’ এবং আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এই ‘একটু’ সপ্তাহ, মাস এবং এমনকি বছর কেটে যাওয়ার পরও আর শেষ হয় না। বছর ধরে চলতে থাকে। মাঝেমধ্যে দিবাস্বপ্নে হারিয়ে যেতে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু আপনি যখন ক্রমাগত “ভাল সময়ের” উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করেন, তা অতীত বা ভবিষ্যৎ যাই হোক, আপনি অবচেতনভাবে বর্তমান থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন।
৮. আপনার কোনখানেই ‘মন’ নেই
প্রত্যেকেরই খারাপ মেজাজের সঙ্গে ডিল করার জন্য তাদের নিজস্ব প্রমাণিত উপায় রয়েছে। অনেকেই ব্যাগে ঘুসি মারে, অনেকে পার্কে বেড়াতে যায় এবং অনেকে আবার তাদের বেড়ে উঠা শহরে ভ্রমণ করে আধ্যাত্মিক শক্তি পুনরুদ্ধার করে। কিন্তু আপনি কোনোটাই করেন না।
৯. আপনি আপনার নিজের ফোনে বন্দী হয়েছেন
পিটসবার্গ মেডিকেল স্কুলে ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে যারা এক ঘন্টার বেশি সময় ব্যয় করে তারা হতাশায় ভুগছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ ফিডে মানুষের সাফল্যের খবরগুলো অনেকের মধ্যে ঈর্ষার অনুভূতি জাগ্রত করে। কারণ তার নিজের চেয়ে অন্য ব্যক্তিদের জীবন আরো উজ্জ্বল এবং তারা সফল জীবন যাপন করছে। এজন্য অফলাইনে থাকার চেষ্টা করুন এবং এটি আপনাকে সুখি রাখবে।
১০. জীবনকে ‘নির্ধারিত’ হিসেবে বিবেচনা করা এবং সেভাবেই পুনরাবৃত্তি করা
‘শনিবার শুরু হচ্ছে’ শনিবার, সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ বা নববর্ষ থেকে ‘নতুন জীবন’ শুরু হতে পারে না। একটা কথা মনে রাখুন ‘আগামীকাল কখনোই আজ না!
আপনি কি সকালে ঘুম থেকে উঠে বলতে পারবেন ‘অবশেষে আগামীকাল চলে এসেছে?’ আপনি যদি কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চান, তাহলে কোনো একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের দিন বা একটি ভাল তারিখের জন্য অপেক্ষা করবেন না। যা পরিবর্তন করতে চান তা আজকের মধ্যে এখনি শুরু করে দিন।