পাতে কাঁচা মরিচ ছাড়া অনেক বাঙালির ভোজই হয় না। কিন্তু কাঁচা মরিচের ব্যবহার কি কেবল রান্নায় ঝাল আর সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য? তা নয়। এই কাঁচা মরিচ ভিটামিনের এক চমৎকার উৎস। রয়েছে নানা পুষ্টিগুণও। আধা কাপ পরিমাণ কুচি কাঁচা মরিচে প্রায় ৮০০ ইউনিটের বেশি ভিটামিন এ রয়েছে। আর ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির জন্য ভালো, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সমপরিমাণ কাঁচা মরিচ কুচিতে পাবেন প্রায় ১৮২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ভিটামিন সির চাহিদার সমান।
তার মানে আধা কাপ কাঁচা মরিচ সালাদে বা অন্যান্য তরকারিতে ছড়িয়ে দিলে আপনার অন্য কোনো ভিটামিন সিযুক্ত খাবার দরকারই পড়বে না। তবে গবেষকেরা বলছেন, কাঁচা মরিচের ভিটামিন সি তাপ, অতিরিক্ত আলো ও বাতাসের কারণে একটু একটু করে হারায়। তাই তাজা কাঁচা মরিচ না খেতে পারলে তা ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করুন। এ জন্য বাজার থেকে আনা তাজা কাঁচা মরিচ জিপার ব্যাগে মুখ আটকে ফ্রিজে রাখুন এবং তিন-চার দিনের মধ্যেই শেষ করতে চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ভিটামিন কে রয়েছে এতে।
সব ধরনের মরিচেই আছে ক্যাপসেইসিন নামের একটি উপাদান। এই ক্যাপসেইসিন প্রদাহ কমায়, বাতব্যথা কমায়, ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমেরিকার ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ বলছে, তাজা সবুজ কাঁচা মরিচে যে ক্যাপসেইসিন আছে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। তাই কাঁচা মরিচে কেবল ঝালই নেই, আছে নানা উপকারও।
প্রতিদিন ১টি কাঁচা মরিচের ১৩টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রতিদিন যাদের ভাতের সাথে একটি কাঁচা মরিচ না খেলে চলেই না তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে কাঁচা মরিচ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মরিচকে ঝাল বানায় এর বিশেষ উপাদান ক্যাপসাইকিন। কাঁচা মরিচ সাধারণত কাঁচা, রান্না কিংবা বিভিন্ন ভাজিতে দিয়ে খাওয়া হয়। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, বি-৬, আয়রন, পটাশিয়াম এবং খুবই সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট।
উপাদান গুলো মুখে লালা আনে ফলে খেতে মজা লাগে। এছাড়াও এগুলো ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। দেখে নিন কাঁচা মরিচের বিস্ময়কর ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১. গ্রীষ্ম কালে মসলা জাতীয় খাবারের সাথে কাঁচা মরিচ খেলে তা ঘামের সাথে বেড়িয়ে যায় ফলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে।
২. চর্বি জাতীয় খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ খেলে মোটা হওয়ার কোনা ভয় থাকে না। কারণ কাঁচা মরিচ খাদ্যের সঙ্গে থাকা চর্বিকে ধ্বংস করে । ফলে স্লিম থাকা যায়।
৩. কাঁচা মরিচে অবস্থিত ক্যাপসাইসিন খাদ্যে থাকা উচ্চমাত্রার চর্বি শুষে নিয়ে শরীরে মেদ রোধ করতে সাহায্য করে।
৪. এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন আছে যা কার্ডোভাস্ক্যুলার সিস্টেম কে কর্মক্ষম রাখে।
৫. ত্বক ও চুল ভালো রাখতে কাঁচা মরিচে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দারুণ উপকারি। তাছাড়াও রক্তনালী আর তরুনাস্থি গঠনে সাহায্য করে।
৬. প্রতিদিন একটি করে কাঁচা মরিচ খেলে রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমে যায়। ও হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা কমে যায়।
৭. কাঁচা মরিচ মেটাবলিসম বাড়িয়ে ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে। ফলে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৮. এতে আছে ভিটামিন এ যা হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা মাড়ি ও চুলের সুরক্ষা করে।
৯. নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে নার্ভের বিভিন্ন সমস্যাও কমে যায়। প্রতিদিন খাবার তালিকায় অন্তত একটি করে কাঁচা মরিচ রাখলে ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়ে না।
১০. কাঁচা মরিচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরকে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। ও যে কোনো ধরণের কাটা-ছেড়া কিংবা ঘা শুকানোর জন্য খুবই উপকারী
কাঁচা মরিচের ঝালের কারনে অনেকেই একে কাঁচা খেতে সাহস পায় না। তাই সবার মনেই প্রশ্ন জাগে, কাঁচা মরিচ কাঁচা খাওয়া ভালো, নাকি রান্নার সাথে খাওয়া ভালো। এর উত্তর হল, কাঁচা মরিচ কাচা খাওয়া ভালো। ৩৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বেশি তাপমাত্রায় কাঁচামরিচ সেদ্ধ করলে কিংবা ভেজে খেলে, তাতে বিদ্যমান ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এর আসল উপকারিতা পেতে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কাঁচা খেতে অভ্যাস করুণ।