ঘুম থেকে উঠেই হঠাৎ পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা? হাঁটার ক্ষমতা হারাতে না চাইলে জেনে নিন কী করবেন

গোড়ালির মোটা পর্দা বা ব্যান্ড আকৃতির কলায় নানা কারণেই প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের বেশি হয় এই সমস্যা।পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হলে, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা ফেলতে সমস্যা হলে চিকিৎসকেরা একে বলেন প্লান্টার ফ্যাসাইটিস। পায়ের পাতার নিচে যে প্লান্টার ফাসা নামে মোটা পর্দা রয়েছে, তাতে প্রদাহ হলে এই সমস্যা হয়। প্লান্টার ফ্যাসাইটিস দৌড়বিদ ও অ্যাথলেটদের মধ্যে প্রায়ই দেখা দেয়, তবে অতিরিক্ত ওজন ও জুতার অসংগতি এর প্রধানতম কারণগুলোর মধ্যে পড়ে।

কেন হয় গোড়ালি ব্যথা?
গোড়ালির মোটা পর্দা বা ব্যান্ড আকৃতির কলায় নানা কারণেই প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের বেশি হয় এই সমস্যা। এ ছাড়া কিছু বিষয় এর ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন:

—দীর্ঘ সময় ধরে গোড়ালিতে চাপ পড়ে এমন কোনো কাজ এর ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন ব্যালে নাচ, ম্যারাথন দৌড় বা অ্যারোবিক নাচ।

—অতি ওজন বা স্থূলতা পায়ের ওপর অতিরিক্ত ভরের সৃষ্টি করে। এই চাপ গিয়ে পড়ে পায়ের পাতার কলাসমূহের ওপর। ফলে শুরু হতে পারে ব্যথা।

—কারও কারও পায়ের বাঁক অস্বাভাবিক থাকে, তাঁরাও এই ঝুঁকির মধ্যে পড়েন।

—যাঁরা দিনের বেশির ভাগ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করেন, যেমন কারখানার শ্রমিক, শিক্ষক—তাঁদেরও দীর্ঘ সময় গোড়ালিতে ওজন নেওয়ার কারণে প্রদাহ হতে পারে। খালি পায়ে শক্ত কাজ করাও ভালো নয়।

হাঁটার ক্ষমতা হারাতে না চাইলে অবশ্যই জানতে হবে কী করবেন- আসুন জেনে নিইঃ-

১. প্লান্টার ফেসিয়াটিস লিগামেন্ট গোড়ালির হাড়ের সাথে যুক্ত থাকে। এই লিগামেন্টে খুব বেশি চাপ পড়লে গোড়ালির সাথে যুক্ত টিস্যুগুলি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে, যার ফলে ব্যথা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর বা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথা বেশি অনুভব হয়।

২. পায়ের পাতা ফ্ল্যাট হলে গোড়ালিতে ব্যথার সম্ভাবনা বাড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিনএজারদের এই সমস্যা হয়। এই বয়সে গোড়ালির হাড় পূর্ণতা পায় না। খুব দ্রুত ক্ষয় হয়।

৩. গোড়ালির হাড় সম্পূর্ণ গঠন হওয়ার আগে বেশি হিল জুতো পরলেও ব্যথা হয়। দীর্ঘদিন ধরে খুব শক্ত জুতো ব্যবহারের ফলে গোড়ালিতে চাপ পড়ে। এতে গোড়ালির পেছন দিক থেকে অথবা গোড়ালির ভেতর থেকে ব্যথা অনুভব হয়। পরে ক্রমশই বাড়তে থাকে।

৪. পায়ের পেছনের দিকে নার্ভে চাপ পড়লেও গোড়ালি ব্যথা হয়।

৫. খুব বেশি এক্সারসাইজ, খেলাধুলো এবং হাঁটাচলা করে কাজ করলে গোড়ালির হাড়ে খুব চাপ পড়ে, যা থেকে হাড়ে চিড় ধরে। মূলত যারা দৌড়ায় তাদের এই সমস্যা থেকে গোড়ালিতে ব্যথা হয়।

৬. বিভিন্ন অসুখ থেকে হতে পারে হিল পেইনের সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৭-১৫ বছরের মধ্যে বাচ্চাদের গোড়ালিতে ব্যথা হয়। অস্টিওস্পোরোসিস থাকলেও গোড়ালিতে ব্যথা হয়।

৭. রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে, বোন সিস্ট থাকলে হিল পেন হয়।

জেনে নিন কখন ডাক্তার দেখাবেন?

১. গোড়ালি ফুলে গেলে।

২. জ্বরের সাথে গোড়ালিতে ব্যথা ও অসাড় হলে।

৩. হাঁটার সমস্যা হলে, পা ভাঁজ করতে অসুবিধা অথবা টো দিয়ে দাঁড়াতে সমস্যা হলে।

৪. একসপ্তাহের বেশি গোড়ালিতে ব্যথা থাকলে, হাঁটা কিম্বা দাড়ানো অবস্থা ছাড়াও ব্যথা করলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

গোড়ালির ব্যথায় কী করবেন?

১. হিল পেইনের সমস্যা থেকে বাঁচতে নরম জুতো ব্যবহার করুন। শক্ত জুতো বা উঁচু-নিচু জায়গায় বেশি হাঁটা চলবে না।

২. মাসল পেইন থাকলে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

৩. ভিটামিনের অভাব থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

৪. ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই বেশি করে খেতে হবে।

৫. বেশি করে সবুজ শাক-সবজি ফল খাওয়া উচিত।

৬. ব্যথা এড়াতে কর্ড লিভার অয়েল উপকারি।

৭. সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে।

৮. বেশি করে পানি পান করতে হবে।

৯. তেল-ঝাল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া চলবে না।

১০. ডাবের পানি ও ফল বেশি করে খেতে হবে। বেশিদিন স্থায়ী ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কিছু নিয়ম মেনে চলুন

গোড়ালির ওপর চাপ কমাতে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত।

—ওজন কমান। পায়ের যেকোনো ব্যথা কমাতে এটি কার্যকর।

—উঁচু হিলের ও শক্ত সোলের জুতা পরিহার করুন। নিচু বা মাঝারি হিলের জুতা বেছে নিন, যার সুকতলা যথেষ্ট নরম কিন্তু মজবুত, পায়ের বাঁককে যথেষ্ট পরিমাণে সাপোর্ট দেবে ও নমনীয়তা বজায় রাখবে। খালি পায়ে শক্ত মেঝেতে কাজ করবেন না।

—দৌড়বিদেরা বারবার জুতা পাল্টান। বলা হয় একটি জুতা ৫০০ মাইল হাঁটা বা দৌড়ানোর পর ফেলে দিতে হবে।

—পায়ের কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম শিখে নিন।

—যদি ব্যথা হয় তবে ওই সময় হাঁটাহাঁটির পরিবর্তে সাঁতার বা সাইক্লিং ধরনের ব্যায়াম বেছে নিন, যাতে গোড়ালির ওপর ভর দিতে না হয়। পায়ের পাতার নিচে ও গোড়ালির নিচে দিনে তিন চারবার আইস প্যাক ব্যবহার করলে আরাম পাবেন। একটা বরফের দলা বা ডিপ ফ্রিজে রাখা একটি বোতল পায়ের নিচে বারবার রোল করতে পারেন।

সাধারণ এসব চিকিৎসা ও ব্যথানাশকে ফল না হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার হয়তো ফিজিক্যাল থেরাপি, ইনজেকশন বা এমনকি শল্যচিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে।

About reviewbd

Check Also

খাওয়ার পর বেল্ট ঢিলা করলেই বিপদ

দুপুরে ভাত খাওয়া ছাড়া বেশিরভাগ বাঙালির চলেই না! কিন্তু ভাত খাওয়ার পরে কয়েকটি কাজ করলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *