সিজার করার পূর্বে প্রত্যেক দম্পতীর উচিত একবার এই প্রবন্ধটি পড়ে দেখা, জীবন বদলে যাবে

সন্তান জন্মদান সত্যিই একটি আনন্দের মুহূর্ত। দীর্ঘ ৯ বা ১০ মাস অপেক্ষার পর গর্ভের সন্তানকে দেখতে পাওয়া আর স্পর্শ করতে পারার আনন্দ অতুলনীয়। অন্তঃসত্ত্বার সবচেয়ে বড় ভয় প্রসবকালীন ব্যথা। এই ব্যথা থেকে রেহাই পেতে অনেকে নিজ থেকেই সিজারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এভাবে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সিজার। মা যখন প্রসবকালীন সময়ে অসহনীয় ব্যথা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে তখন সিজারের মাধ্যমে প্রসব করানো হয়। আবার অভিযোগ আছে, বাণিজ্যিক স্বার্থের কথা চিন্তা করে অনেক ডাক্তার স্বাভাবিক সন্তান প্রসব পদ্ধতি এড়িয়ে গিয়ে মাকে বা মায়ের আত্মীয় স্বজনকে সিজারের জন্য প্রলোভিত করে। এমন অভিযোগ সবসময় সত্য না হলেও কখনো কখনো অবশ্যই সত্য।

তবে সিজারে ডেলিভারির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আছে অনেক ক্ষতিকর দিক। শুধু প্রসবের সময়েই নয়, সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করলে সারাজীবন একজন মাকে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হয়। মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য সিজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

সিজারে ডেলিভারির বিষয়ে কথা হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মা ও গর্ভবতী বিশেষজ্ঞ ডা. ফাহমিদা ফেরদৌসির সঙ্গে। তিনি বলেন, যেকোনও অপারেশনে শরীরে একটা প্রভাব পড়বেই। তার চেয়ে বড় বিষয় মায়ের পেটে যে কাটছেরা থাকে সেটা থেকে পরবর্তীতে হার্নিয়া হতে পারে। হার্নিয়া হলে পেটের চামড়া উইক হয়ে যায় এবং সেদিক দিয়ে খাদ্যনালী বাইরের দিকে পুশ করে। স্বাভাবিক প্রসবের পর মায়েরা যত সহজে ওজন কমাতে পারেন সিজারে প্রসবের পর মায়েরা তত সহজে ওজন কমাতে পারেন না।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, আমাদের মা-খালাদের সময়ের কথা চিন্তা করলে এখনকার সময়ে সিজারের হার অনেক বেশি। তাদের অনেকেরই ডেলিভারি হয়েছে ঘরে। বেশির ভাগ মায়েদেরই হয়েছে নরমাল ডেলিভারি। সিজার ডেলিভারির পরিমাণ তখন খুব কম ছিল। আজকের সময়ে এসে সিজারের পরিমাণ হঠাৎ করে অনেক বেড়ে গেছে।

সিজারের প্রভাব মায়ের ওপর শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও পরতে পারে। তবে এই পরিবর্তন একেক মায়ের জন্য একেক রকম হতে পারে। সার্জারির পর আপনার অস্থির এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এ অনুভূতি ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেক মায়েদের সারা গায়ে চুলকানি হতে পারে বিশেষ করে যাদের চেতনানাশক ওষুধ দেয়া হয়। চেতনানাশক ওষুধ যে কতটা ক্ষতিকর তা একমাত্র মা-ই বোঝেন।

সিজারিয়ান অপারেশনের পর থেকেই সেলাইয়ের স্থানে হঠাৎ হঠাৎ অল্প জ্বালাপোড়া করা এবং পরবর্তী ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত রক্তস্রাব হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সতর্ক না থাকলে সেলাইয়ের স্থানে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।

সিজারের ক্ষতিকর দিক
১. প্রচুর রক্তস্রাব ২. পা ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া ৩. বুকে ব্যথা ৪. শ্বাসকষ্ট ৫. সেলাইয়ের স্থানে পুঁজ, রক্ত বা কোনো তরল দেখতে পাওয়া ৬. সেলাইয়ের স্থানে অস্বাভাবিক ব্যথা হওয়া ৭. হাড় ক্ষয় হওয়া

সিজারের পর যে ওষুধগুলো ক্ষেতে হয় সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো আছেই যা সারা জীবন ক্ষতি করতে থাকে। এসব শারীরিক সমস্যা ছাড়াও যদি মায়ের মানসিক সমস্যা যেমন- তীব্র অস্থিরতা বা হতাশা, রাগ, আত্মহত্যার প্রবণতা, স্বামী-সন্তান বা বাড়ির সবাইকে অসহ্য লাগা ইত্যাদি দেখা দেয়।

ডা. ফাহমিদা বলেন, এখনকার মেয়েদের সহ্য ক্ষমতা একেবারেই কমে গেছে। তারা এখন নরমাল ডেলিভারির কথা চিন্তা করতে পারে না। আগে মেয়েদের মধ্যে একটা প্রেরণা ছিল যে, আমাকে ব্যথাটা মেনে নিতে হবে। ঘরেই ডেলিভারি করাতে হবে। অর্থাৎ মানসিক একটা প্রস্তুতি ছিল। যেটা এখনকার অধিকাংশ মেয়েদের নেই। প্রকৃতির নিয়মের চেয়ে মানুষের তৈরি নিয়ম কখনোই ভালো হতে পারে না। এটাই চির সত্য।

About reviewbd

Check Also

নারীদের এই ৩টি ভুলে সম্পর্কে ভাঙন ধরতে পারে

প্রেমের জোয়ারে ভাসার সময়ে মনে হয় যেন এই প্রেম চিরন্তন। পৃথিবী ওলটপালট হয়ে গেলেও প্রেমে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *