চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এক ই’মা’মেরর বি’রুদ্ধে। স্ত্রী’র সঙ্গে মসজিদের ওই ইমামের প’রকী’য়া প্রে’মে’র স’ম্প’র্কের জেরে রাজধানীর দক্ষিণখানে যুবক মোহাম্মদ আজহারকে খু’ন করা হয়।
পরিকল্পিত এই হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন আজহারের স্ত্রী আসমা বেগম। আর তা বাস্তবায়ন করেন মসজিদটির ইমাম আব্দুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে নি’হ’তের ম’র’দেহ উদ্ধারের পর বিকালে আব্দুল্লাহপুর থেকে র্যাব আসমাকে গ্রে’প্তা’র করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপরই আসমা র্যাবের কাছে পরকীয়া সম্পর্ক ও হ’ত্যা’র পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেন।
এরপর আসমাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলিট ফোর্সটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ইমাম আব্দুর রহমানের সঙ্গে আসমার অনৈতিক সম্পর্ক চলমান ছিল। বিষয়টি তার স্বামী আজহার টের পাওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা দুজন (আসমা ও ইমাম আব্দুর রহমান)।
আসমা ই’মাম’কে বলেন, তার স্বামীকে মসজিদে ডেকে নিয়ে শেষ করে (হ’ত্যা করা) দিতে হবে। এরপরই আজহারকে কুপিয়ে হ’ত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমানকে গ্রে’প্তা’র করা হয়। এসময় তিনি হ’ত্যা’র সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
র্যাব জানায়, ১৯ মে হ’ত্যাকা’ন্ডে’র দিন এশার নামাজের পর নিহত আজহারের সঙ্গে ইমাম আব্দুর রহমানের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে আব্দুর রহমান ধারালো অস্ত্র দিয়ে আজহারের ঘাড়ে আঘাত করে।
এতে ঘ’টনাস্থ’লে তার মৃ’ত্যু হয়। পরে মসজিদের ইমামের রুমেই ফজরের আযানের আগ পর্যন্ত আজহারকে কু’পি’য়ে ৬ টু’ক’রা করেন ইমাম নিজেই। এরপর মসজিদের নিচতলার ওজুখানার পানির সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ লুকিয়ে রাখেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। এসময় তারা জানায়, সোমবার (২৪ মে) মসজিদের সিঁড়িতে র’ক্তে’র দাগ ও সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল এছাড়া স্থানীয় আজহার ১৯ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিল। এমন ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে র্যাব ই’মা’ম’কে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে হ’ত্যা’র ঘটনা জানতে পারে। এ সময় অভিযুক্তের কাছ থেকে হ’ত্যা’য় ব্যবহৃত ৩টি চাকু ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
র্যাব আরো জানায়, মাওলানা মো. আব্দুর রহমান সরদারবাড়ি জামে মসজিদে ৩৩ বছর ইমামতি করে আসছিলেন। নি’হ’ত আজহারের ৪ বছরের ছেলে মসজিদের মক্তবে পড়াশোনা করত। নি’হ’ত আজহারও তার কাছে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করতেন।
এই সুবাদে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ১৯ মে মাওলানা আব্দুর রহমানের সঙ্গে আজহারের কথা কাটাকাটি হয়। কথাকাটির এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আজহারের গলার ডানপাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আব্দুর রহমান।
পরে হ’ত্যাকা’ন্ডে’র ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হ’ত্যাকা’রী ভিকটিমের লাশ টুকরো টুকরো করে সরদারবাড়ির জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। এরপর থেকে ইমাম আব্দুর রহমান মসজিদে নিজের রুমেই অবস্থান করছিলেন।
ওই মসজিদে উপস্থিত মো. মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি বলেন, ওইদিন সকালে মসজিদে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো। এ নিয়ে কানাকানি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা জেনে পুলিশ ও র্যাব এসে ৬ টু’ক’রা লা’শ উদ্ধার করে। পরে ই’মাম’কে গ্রে’প্তা’র করে নিয়ে যায় র্যাব। রিফাত নামের আরেক মুসল্লি বলেন, ‘ঠিক কখন আজহারকে খু’ন করা হয় তা আমরা টের পাইনি।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-১-এর পরিচালক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল মুত্তাকিম। তিনি বলেন, র্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম আব্দুর রহমান আজহারকে হ’ত্যা’র দায় স্বীকার করেন।
ইমাম রহমান র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আজহার অভিযোগ করছিলেন যে তার স্ত্রী’র দিকে ইমামের কু’ন’জর রয়েছে। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় তিনি আজহারকে হ’ত্যা করেন। তবে আজহারের স্ত্রীর সঙ্গে কোনো স’ম্প’র্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন ইমাম।
আজহার হ’ত্যা’কা’ণ্ডের তদন্তে ইমাম আব্দুর রহমানের সঙ্গে নি’হ’তের স্ত্রী’র প’রকী’য়া প্রে’মে’র স’ম্পর্কের তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে র্যাব-পুলিশের সূত্র দাবি করেছে। সূত্র বলছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দক্ষিণখানের মধুবাগ এলাকায় ইউসুফ গাজীর ৩৯ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন নি’হ’ত আজহার। বাসায় আসা-যাওয়ার সূত্র ধরেই ইমামের সঙ্গে স’ম্প’র্ক হয় তার স্ত্রীর। অন্তত ১ বছর ধরে এই সম্পর্ক চলছিল। আজহার বিষয়টি টের পেয়ে ৫ মাস আগে বাসাও বদল করেন। ২০ দিন আগেও ইমাম ও আজহারের স্ত্রী’র সাক্ষাৎ হয়।
বিষয়টি জানতে পেরে আজহার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তার নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে চলে যান। এরপর কালিহাতী থেকে ইমামকে ফোন করে তাদের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি জানতে চাইলে ইমাম অস্বীকার করেন। ইমাম বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজহারকে মসজিদে আসতে বলেন। সে অনুযায়ী ইমামের স’ঙ্গে দেখা করতে গত ১৯ মে দক্ষিণখানে সরদারবাড়ি মসজিদে আসার পর নিখোঁজ হন আজহার।
এ ঘটনা তদন্তের একপর্যায়ে দক্ষিণখানে মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া থেকে আব্দুর রহমানকে গ্রে’প্তা’র করা হয়। পরে তার দেওয়া ত’থ্যের ভিত্তিতে সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারের ম’রদে’হ উদ্ধার করা হয়।