সপ্তাহখানেক আগে প্রেমিকাকে না জানিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছেন প্রেমিক। গোপনে বিয়ের এমন খবর পান প্রেমিকা। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেয় প্রেমিকা। প্রেমিকের গোপন বিয়ের ঘটনা অস্বীকার করে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করেন প্রেমিকা। প্রেমিকের বাড়িতে টানা তিনদিনের অনশন শেষে দেড় লাখ টাকায় রফাদফা করেন স্থানীয় মাতব্বরগণ।
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামে ঘটেছে। প্রেমিক সবুজ ওই গ্রামের দিনমজুর শহিদের ছেলে এবং প্রেমিকা একই গ্রামের মেয়ে।
এদিকে সদ্য বিবাহিত ছেলেকে বিয়ের দাবিতে অনশন করছেন এক সন্তানের জননী। এমন খবর মুহূর্তেই লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। এক সন্তানের জননীকে একনজর দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করেন।
এলাকাবাসী, প্রেমিক ও প্রেমিকের পরিবারসহ একাধিক সুত্র জানায়, ছেলে আর মেয়ে এক সময়ে এক স্কুল এক শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। বর্তমানে তারা ঢাকায় চাকুরি করেন। প্রায় তিনবছর আগে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ২৪ সে সোমবার প্রেমিকাকে না জানিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন প্রেমিক সবুজ। বিয়ের পর সবুজ পুনরায় ঢাকা চলে যানন। বিয়ের খবর পেয়ে ২৬ মে বুধবার সন্ধায় প্রেমিকের বাড়ির প্রধান গেটে অবস্থান করেন প্রেমিকা। অবস্থানকালে তিনি সবুজের পরিবার ও অন্যান্যদের তাদের প্রেমের ঘটনা খুলে বলেন এবং বিয়ের দাবি জানান তিনি।
এরপর সবুজের পরিবার প্রেমিকার বিষয়টি মেনে না নিয়ে মেয়ের পরিবারকে খবর দেয়। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাতব্বর ও পুলিশ ক্যাম্পে। খবর পেয়ে জনপ্রতিনিধি, মাতব্বর, দুই পরিবারের সদস্যরা মেয়েকে বুঝাতে থাকে এবং বসাবসি করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দরদামে মিল না থাকায় প্রথমদিন (বুধবার) কোন সমাধান নামেনি। এভাবেই কেটে গেলে দ্বিতীয় দিনরাত বৃহস্পতিবার ও তৃতীয়দিন শুক্রবার। পরে শুক্রবার গভীর রাতে দুই পরিবারের সদস্যরা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বরগণ এক শালিসী বৈঠক করেন। সবুজের অনুপস্থিতে বৈঠক বসে। বৈঠকে প্রেমিক সবুজের পরিবারকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে জরিমানার টাকাসহ মেয়েকে নিয়ে যায় তার পরিবার।
এরআগে অনশনরত অবস্থায় এক সন্তানের জননী ওই প্রেমিকা বলেন, এক সাথে পড়তাম আমি আর সবুজ। বর্তমানে দুইজনই ঢাকায় থাকি। আমি গার্মেন্টস আর সবুজ বিদ্যুতে চাকুরী করে। উঠাবসার এক পর্যায়ে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে বিয়ের কথা বলে সবুজ আমার কাছ থেকে অনেক টাকা পয়সা নেয়। একপর্যায়ে আমাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়।
তিনি আরো বলেন, আমার সাথে প্রেম করে আমাকে না জানিয়ে সবুজ অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে। বিয়ের এমন খবর পেয়ে সবুজকে বিয়ের দাবিতে অনশন করছি। দাবি না মানলে অনশন চলতে থাকবে।
এতথ্য নিশ্চিত করে ওই এলাকায় ইউপি সদস্য (মেম্বর) আব্দুল মোমিন বলেন, গত বুধবার বিয়ের দাবিতে সবুজের বাড়িতে অবস্থান করে মেয়েটি। বিষয়টি মেয়ের পরিবারকে জানালো হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। ফলে অনশন চলতে থাকে। টানা তিনদিন পর শুক্রবার গভীর রাতে দুই পরিবার বসাবসি করে ঠিক করে নেয়। তিনি আরো বলেন, ছেলেদের দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ ও বাকী টাকার চেক মেয়ের বাবার হাতে তুলো দেওয়া হয়।
এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে সবুজের কাছের এক বন্ধু বলেন, মেয়েটির সাথে সবুজের অতীতে প্রেম ছিল। সবুজের বিয়ের কথা শুনে হঠাৎ মেয়েটি বাড়িতে চলে আসে। তিনি আরো বলেন, টানা তিনদিনপর এক লাখ ৬৫ হাজার টাকায় মিটমাট হয়।
ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বর) আশিকুর রহমান সাবান মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আজ (শনিবার) সকালে ঘুম থেকে উঠে শোনি দেড় লাখ টাকায় মিটমাট হয়েছে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, বিয়ের দাবিতে অনশনের কথা জেনেছি। বিষয়টি সামাজিক এবং প্রেমের ঘটনাস্থল আমার এলাকার বাইরে। তাই পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, অর্থের মাধ্যমে মিটমাটের বিষয় আমার জানা নেই।