পিরিয়ডের সময় রাখা হয় জঙ্গলের কুঁড়েঘরে, যেভাবে কাটে দুর্বিসহ ৭ দিন

প্রতি মাসেই হাজার হাজার নারী ও কিশোরীকে দুর্বিসহ সপ্তাহ কাটাতে হয়। পিরিয়ডের সময় হলেই তাদরকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বসবাসের অযোগ্য কুঁড়েঘরে। কিশোরীরা কিন্তু নিজ ইচ্ছেতে থাকেনা। তাদেরকে থাকতে বাধ্য করা হয়।

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের অনুন্নত জেলা গাডচিরোলির মাদিয়া সম্প্রদায়ে এখনও এমন চিত্র হারহামেশা দেখা যায়। পিরিয়ডের সময় নারীদের অশুচি বলে বিবেচনা করে এসব ঘরে রাখা হয়। এসময় তাদের কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়।

পিরিয়ডের সময়কালে যেসব ঘরগুলোতে নারীদের রাখা হয় সেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘কুর্ম ঘর বা গাওকর’ বলা হয়। জঙ্গলের কিনার ঘেঁষে গ্রামের একেবারে বাইরে এই কুঁড়েঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। বলা যায়, পিরিয়ডের পাঁচ থেকে সাতদিন তাদেরকে ‘একঘরে’ হয়ে থাকতে হয়।

নারীদেরকে পিরিয়ডের সময়টাতে সামাজিক ও ধর্মীয় সব অনুষ্ঠানে যোগদান নিষিদ্ধ করা হয়। মন্দির বা কোন ধর্মীয় স্থাপনায় ঢুকতে দেয়া হয় না।

শুধু তাই নয়, রান্নাঘর কিংবা কুয়াতেও যাওয়া নিষেধ। বাসার নারী আত্মীয়দের দেয়া খাবার ও পানি খেয়ে তাদের দিন কাটাতে হয়। যদি কোন পুরুষ তাদের ছুঁয়ে ফেলে, তাহলে ওই পুরুষকে সঙ্গে সঙ্গে গোসল করতে হয়। কারণ ওই নারীকে ‘অপবিত্র’ মনে করা হয়।

৩৫ বছরের সুরেখা হালামিও এসব অত্যাচারের ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে ওই কুঁড়েতে অসহনীয় গরম আর মশার উৎপাত থাকে। শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর বর্ষায় ঘরের চাল দিয়ে অনবরত পানি পড়ে। কখনও কখনও কুকুর আর শূকরও ভেতরে ঢুকে আসে।

দশ বছর আগে ২১ বছরের কুঁড়েতে থাকার সময় সাপের কামড়ে মারা যায় বলে জানিয়েছে ৪৫ বছরের দুরপাতা উসেন্দি। তিনি বলেন,

মাঝরাতের সে চেঁচাতে চেঁচাতে সে কুঁড়ে থেকে ছুটে বাইরে যায়। তখন আমাদের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তার নারী স্বজনরা স্থানীয় ওষুধ এনে দিলেও পুরুষরা ছিল দূরে। সাপের বিষ তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে সে যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।

এগিয়ে এলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

মুম্বাইয়ের খেরওয়াদি সোসাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এই নারীদের সাহায্য করতে ভেঙে পড়া কুঁড়েঘরের জায়গায় আধুনিক পাকা ঘর তোলার একটি প্রকল্প শুরু করেছে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির এই কাজ নিয়ে জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে যে তারা এই অমানবিক প্রথা বিলোপের বদলে তাকে টিকিয়ে রাখারই উদ্যোগ নিয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন বরং মাসিকের সময় মেয়েদের আলাদা করে রাখার জন্য তৈরি এই কুঁড়েঘরগুলো একেবারে ভেঙে ফেলাটাই সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতো। যদিও সংগঠনটি বলছে এই নারীদের জন্য পাকা ঘর, টয়লেট, ঘুমানোর বিছানা, পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়ে তারা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। তারাও এই প্রথা বিলোপের পক্ষে।ও রয়েছে।

মুম্বাইয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৈরি প্রথম আধুনিক পাকা ঘরকে স্বাগত জানিয়েছেন টুকুম গ্রামের নারীরা।

‘এই প্রথা বদলানো যাবে না’

কয়েক বছর আগে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারকে ‘এই প্রথা উচ্ছেদের’ নির্দেশ দিয়েছিল। কারণ এই প্রথা নারীদের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করছে। তাদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং সম্মান ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর গড়িয়ে গেলেও ওই প্রথা এখনও মাদিয়াদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত রয়ে গেছে।

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি চেন্ডু উসেন্দি বলেন, এই প্রথা বদলানো যায় না। কারণ এটা ঈশ্বরের বিধান। এই প্রথা না মানলে শাস্তি পেতে হয়। যে প্রথা ভাঙে তাকে পুরো গ্রামের মানুষকে মাংস ও মদ খাওয়াতে হয়। এতেই শেষ নয়, আর্থিক জরিমানাও গুণতে হয়।

খেরওয়াদি সোসাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আপাতত

About reviewbd

Check Also

মাকে খুঁজছে মিরপুরে বেঁচে যাওয়া সেই ৭ মাসের শিশু হোসাইন

মিরপুরের পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন বাবা-মা। ভাগ্যক্রমে ছেলে হোসাইন ফিরে আসলেও বেঁচে নেই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *