দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর সংক্রমণ ঠেকাতে কয়েকবার বিভিন্ন মাত্রায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। যা এখন পর্যন্ত চলমান। সম্প্রতি খুলনা-রাজশাহীসহ দেশের প্রায় ৫০টি জেলায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ধরা পড়ছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টাও। এ কারণে আসতে পারে ‘শাটডাউনে’র ঘোষণা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভায় সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউনে’র সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, শাটডাউন চলা অবস্থায় জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেনো, সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
এদিকে ‘শাটডাউনে’র খবর ছড়িয়ে পড়তেই জনমনে প্রশ্ন জেগেছে- লকডাউন ও ‘শাটডাউনে’র মধ্যে পার্থক্য কী? পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ছোট-বড় শপিংমল-মার্কেট বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা। লেখালেখি হচ্ছে ফেসবুক-টুইটারেও।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী- দেশে চলমান লকডাউন ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এ বিষয়ে ১৬ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রায় ৫০টি জেলায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে ‘শাটডাউন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পরামর্শক কমিটি চলমান বিধিনিষেধ কার্যকর করতে কোথায় কী করতে হবে তা সুনির্দিষ্ট করে সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ অর্থাৎ বিধিনিষেধের আওতাধীন এলাকায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে- এমন নির্দেশনা দেবে। যদি খোলা থাকে তবে নির্দেশনা শতভাগ মেনে খোলা রাখতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন বলা হয়েছে- রেস্টুরেন্টে বসে খেতে পারবেন না, কিনে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে রেস্টুরেন্টে ক্রেতা বসিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। ‘শাটডাউন’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করাকেই বোঝানো হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সারাদেশে ১৪ দিনের পূর্ণ ‘শাটডাউনে’র সুপারিশ সক্রিয় বিবেচনায় নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় বড় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে, আমরা বিভিন্নভাবে তা কমানোর চেষ্টা করছি। স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দিয়ে এটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেটা প্রয়োজন হবে সেটাই আমরা করব। যেহেতু সংক্রমণটা ঊর্ধ্বমুখী, দৈনিক সংক্রমণ ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সরকার পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে যেটি উপযুক্ত হবে, সে সিদ্ধান্তই আমরা নেব।
চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়।
কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সাত জেলায় পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ও ঢাকার সঙ্গে যান ও জনচলাচল বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপরও মানুষ নানা উপায়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ছুটছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি আরো খারাপের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।