কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারাদেশে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
জরুরি পণ্যবাহী ব্যতীত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন শুধু চলাচল করতে পারবে। জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবেন না। গণমাধ্যম এর আওতা বহির্ভূত থাকবে।
শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন।
সময় সংবাদকে তিনি বলেন, শনিবার (২৬ জুন) আমরা প্রজ্ঞাপণ জারি করব। ২৮ জুন থেকে ৭ দিনের জন্য এ কঠোর নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। এরপর দরকার হলে আমরা তা আরও বাড়াব। এবারের লকডাউন খুবই কঠোরভাবে পালন করা হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কাজ করবে পুলিশ ও বিজিবি। সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারবে না। অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকবে। তবে বাজেটের কারণে এ সংক্রান্ত কিছু অফিস স্বল্প পরিসরে খোলা থাকবে। এছাড়া আর সব বন্ধ থাকবে। আমরা এবার খুবই কড়া ও কঠিন লকডাউন পালন করব এবার।
এর কিছুক্ষণ আগেই তথ্য অধিদপ্তরের জরুরি তথ্য বিবরণীতে সারা দেশে আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে ৭ দিনের জন্য কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার জানান, কোভিড ১৯ সংক্রমণ রোধকল্পে সোমবার থেকে পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত সারাদেশে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
বিবরণীতে আরও বলা হয়, কঠোর লকডাউনের সময় জরুরি পণ্যবাহী ব্যতীত সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এছাড়া জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবেন না। তবে গণমাধ্যম এর আওতামুক্ত থাকবে। বিস্তারিত আদেশ শনিবার (২৬ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হবে।
এরআগে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ করেছিল জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তখন এ বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, সারাদেশে শাটডাউনের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় সরকার তা ঘোষণা দেবে। আগের চেয়ে বিধিনিষেধ আরও কঠোর হবে। করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ কথা জানানো হয়। বুধবার (২৩ জুন) রাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভায় এ সুপারিশ করা হয়। সভায় দেশে কোভিড-১৯ এর সাম্প্রতিক ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও আলোচনা হয়।
সুপারিশে বলা হয়, শাটডাউন চলা অবস্থায় জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেনো, সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সারাদেশে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলছে। চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন‘ ঘোষণা দেয় সরকার।
পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল রোজার ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক বসিয়ে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।তবে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সারাদেশে বিধিনিষেধ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৬ জুন বিধিনিষেধ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার, যা ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে।