কিশোরী মনে করেছিলেন, চেয়ারম্যান দাদু তার সঙ্গে দুষ্টমি করছেন

পটুয়াখালীর বাউফলে প্রেমের সালিশ করতে গিয়ে নিজেই বিয়ে করে ফেলা চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে তালাক দিয়েছে সেই কিশোরী। ওই উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের আয়লা বাজারে চেয়ারম্যানের বাসায় বসেই তালাকনামায় স্বাক্ষর করে সে। এরপর শাহীন হাওলাদার নিজেই ওই কিশোরীকে তার অভিভাবকদের হাতে তুলে দেন। শনিবার মধ্যরাতে ভুক্তভগী কিশোরী নিজেই তালাকের বিষয়টি নিশ্চিত করে। এ সময় অনেক অজানা তথ্যও জানায় সে।

ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার নানা বাড়ির সামনের মসজিদে ইমামতি করত রমজান। রমজানের কাছেই সে কোরআন শরীফ পড়ত। এক পর্যায়ে রমজানের সঙ্গে তার প্রেম হয়। তিন বছর ধরে চলে প্রেম। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর কয়েক মাস রমজানের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পরে রমাজানের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে পুনরায় যোগাযোগ করে সে। শুক্রবার সালিশ বৈঠকের জন্য তার ও রমজানের পরিবার চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের বাড়িতে যায়। তখনো ওই কিশোরী বুঝতে পারেনি যে- কোনো অঘটন ঘটতে যাচ্ছে।

সে আরো জানায়, ১৮ মে বাবা-মায়ের ইচ্ছেতে তার দাদির ফুফাতো বোনের ছেলে সোহেল আকনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কোরবানির ঈদে তাকে স্বামীর বাড়িতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে বিয়েতে রাজি ছিল না, এ কারণে রমজানের সঙ্গে যোগাযোগ করত। ২৪ জুন রমজানের হাত ধরে ঘর ছাড়ে সে। তারা যান কনকদিয়া ইউনিয়নের কুম্বখারী গ্রামে রমজানের মামা শাহ আলমের বাড়িতে চলে যায়। পরে তার বাবা নজরুল ইসলাম বিষয়টি কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে জানালে শুক্রবার সালিশ বৈঠক হয়।

ওই কিশোরী জানায়, বৈঠকের সময় চেয়ারম্যান তাকে অন্য ঘরে ডেকে নিয়ে বলেন- ‘ওই ছেলের তো (রমজানের) টাকা-পয়সা নাই। তুমি তার ঘরে গিয়ে সুখী হইতে পারবা না। বরং আমারে বিয়া করলে সুখী হবা।’ ওই কিশোরী এসব কথাকে বুড়ো দাদুর (চেয়ারম্যান) দুষ্টুমি ভেবে পাত্তা দেয়নি। পরে চেয়ারম্যান বাইরে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন- ‘রমজানকে বিয়ে করতে হলে তো আগের স্বামীকে (সোহেল আকন) তালাক দিতে হবে।’ এরপর কাজী ডেকে এনে তাই করা হলো।

এরপর ঘটলো যতো অঘটন। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার নিজে তাকে বিয়ে করবেন বলে জানান। তার যেই কথা সেই কাজ। তাকে একরকম প্রতারণা করেই বিয়ে করেন। পাঁচ লাখ টাকা কাবিন করেন। বিয়ের রাতে চেয়ারম্যান তার রুমে ঢুকতে চাইলে তিনি তাকে ঢুকতে দেননি। ভেতর থেকে দরজা আটকে দেন। এর বাইরে যা যা তার সঙ্গে হয়েছে তা ছিল সব তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে।

শনিবার রাতে ছেলে তুষার, অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও প্রশাসনের চাপে চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার ওই কিশোরীকে মুক্তি দিতে রাজি হন। রাতেই ওই কাজীকে আবার ডেকে তালাক নামায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে চেয়ারম্যান নিজেই তাকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেন। ওই সময় কিশোরীর নানা ইউনুস কাজী, বাবা ও সাবেক মেম্বার নুরুল ইসলাম তাকে বাবার বাড়ির মাঝপথ পর্যন্ত এগিয়ে দেন। সেখান থেকে তিনি রমজানের সেই মামা শাহ আলমের বাড়িতে চলে যান। রমজানের মামাতো ভাই পলাশ তাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।

About reviewbd

Check Also

বাংলাদেশের ইলিশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কলকাতাবাসী

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে শুক্রবার থেকে কলকাতার বাজারে আসতে শুরু করেছে বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশের ইলিশ। তবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *