নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করছে।
এদিকে আগুনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা আসায় ও ভেতরে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার না করতে পারায় শ্রমিক ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ করছেন।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ছয় তলার কারখানাটির প্রতিটি তলায় একটি করে সেকশন রয়েছে। প্রতিটি সেকশনে একটি করে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট রয়েছে। তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টায় কারাখানটিতে বিস্কিট, চকোলেটসহ নানা রকম খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয়। প্রতি শিফটে শ্রমিক ঢোকার পর সেকশনের কেচি গেট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। শিফট শেষ হওয়ার পর গেট খোলে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, কারখানার নিচে গোডাউনের কার্টুনে আগুন লাগার বিষয়টি ওপরে কর্মরত অনেক শ্রমিকই জানতেন না। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে আগুন গোটা বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শ্রমিকরা বাঁচার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। কিন্তু আগুন লাগার পরেও কর্তৃপক্ষ সেকশনে থাকা কেচি গেট খুলছিল না। ফলে অনেক শ্রমিক জীবন বাঁচানোর জন্য বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। এ সময় দুই শ্রমিক মারা যান।
তারা আরও অভিযোগ করেন, কেচি গেট বন্ধ থাকায় প্রথমে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। পরে আগুনের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের চিৎকার চেচামেচিতে কেচি গেট খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেক শ্রমিক বের হতে পেরেছিলেন আরও অনেকে ভেতরে আটকা পড়েন।
হৃদয় নামের এক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, আমি চার তলার সেকশনে কাজ করছিলাম। আগুন লাগার পর আমরা ভেতরে থেকে বের হতে পারছিলাম না গেট বন্ধ থাকায়। পরে আগুন বেড়ে গেলে গেট খুলে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে আগুন সেকশনে চলে আসায় অনেক লাফ দিয়ে নিচে পড়েন জীবন বাঁচাতে। আবার আগুনের ধোঁয়ার কারণে অনেককে সেকশনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতেও দেখেছি।
মো. রাব্বানী নামে আরেক শ্রমিক জানান, যদি সময় মতো কেচি গেট খুলে দেওয়া হতো তাহলে আমরা সবাই বেরিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু কেচি গেট বন্ধ থাকায় আমরা শুরুতে বের হতে পারিনি। পরে গেট খুলে দেওয়া হলেও আমার ধারণা ৩০-৪০ জন শ্রমিক বের হতে পারেননি।
এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা তাদের স্বজনদের খোঁজে পেতে ঘটনাস্থলে ভিড় করেছেন। স্বজনদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ইতোমধ্যে ফায়ার ফাইটাররা ১৪-১৬ জনকে ভেতর থেকে উদ্ধার করেছে। তবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ভেতরে আরও মানুষ আছেন কি-না। তবে শ্রমিকরা দাবি করছেন, ভেতরে আরও মানুষ আটকা থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এ ভবনটি বিল্ডিং কোড না মেনে যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ ও কলকারখানার আইন অমান্য করা হয়ে থাকলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেব।